
মাথায় টুপি, মুখে লাল রঙের দাড়ি, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। এক নজরে দেখে মনে হবে কোনো ধার্মিক হাজী বা দরবেশ। নাম তার ইসলাম, বয়স আনুমানিক ( ৬০) কিন্তু এই সাদা-সিদে চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর প্রতারকের আসল রূপ।
ধর্মের লেবাসে প্রতারক ইসলাম নিজেকে কবিরাজ পরিচয়ে দিলেও তার মূল পেশা প্রতারণা। মেয়েরাই ছিল তার প্রধান টার্গেট। একেক জন মেয়ের পারিবারিক, দাম্পত্য বা শারীরিক সমস্যার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছে গিয়েই শুরু হতো এই ভণ্ড কবিরাজের ফাঁদ।
পল্লবী এলাকার বাসিন্দা তানিয়া (৩৫) তার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে এই ভণ্ড কবিরাজ ইসলামের কাছে গেলে, ইসলাম তাকে দেয় মিথ্যা আশ্বাস। সমস্যার সমাধানের নামে তানিয়ার জীবনকে ঘোলাটে করে তোলে, নষ্ট করে দেয় সংসার। শেষমেশ তাকে বিয়ে করে ইসলাম। এরপর শুরু হয় আরও ভয়ঙ্কর অধ্যায়। তানিয়ার পরিবারের কাছে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে ইসলাম।
এমনকি, তানিয়ার বাবার কাছ থেকেও ইসলাম প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। জায়গা-জমি কম দামে কিনে দেবে বলে প্রলোভন দেখিয়ে নেয় ওই টাকা। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ রাখে না, জমিও কেনে না। এই ঘটনায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তানিয়ার বাবা।
তানিয়ার বাবা একসময় মেয়ে ও পরিবারের মান-ইজ্জতের কথা ভেবে চুপ থাকলেও, মুখ খুলেছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বিশেষ করে তানিয়ার বড় বোন যখন পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হন, তখন ইসলাম প্রথমে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। আর হুমকি দিয়েও কাজ না হলে, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলে ও থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এদিকে তানিয়ার প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধেও একের পর এক মিথ্যা অপবাদ দেয় ইসলাম। যাতে সে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হয় এবং তানিয়ার জীবনে সহজেই জায়গা করে নিতে পারে। এই অপবাদে তানিয়ার প্রথম স্বামীর জীবনেও নেমে আসে চরম হতাশা ও সামাজিক সংকট।
ইসলামের প্রতারণার কৌশল এখানেই শেষ নয়। একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে বেশ কিছুদিন নিজের অবস্থান গড়ে তোলে সে। নিজেকে ‘বড় কবিরাজ’ হিসেবে পরিচিত করে ফাঁদ পাততে থাকে সাধারণ মানুষের জন্য। আর সেই ফাঁদে পড়ে অনেকেই হারায় অর্থ, মান-সম্মান কিংবা জীবনভর শান্তি। একবার যখন তার উদ্দেশ্য পূরণ হয়, তখনই এলাকা ছেড়ে দিয়ে চলে যায় অন্যত্র। শুরু করে নতুন এলাকায় প্রতারণার নতুন ধাপ।
এক সময় ইসলাম ছিলেন একজন গিন্নি বেনারশি—অর্থাৎ, দু’মুঠো খাবারের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরতেন। তার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে অন্যের বাসায় কাজ করতো। বড় স্ত্রী নিজেও কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। অথচ আজ সেই ইসলাম পরে হাজার হাজার টাকার দামি কাপড়, ব্যবহার করেন দামি মোবাইল, আর চলেন রাজার হালে! সাধারণ মানুষের মনে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে একটি প্রশ্ন—’এত পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?’
এইসব অভিযোগ ও ঘটনার পরেও ইসলাম এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমাজে ধর্মীয় লেবাসে। ভণ্ডামি, প্রতারণা, নিপীড়ন ও পাচারের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে নেই কোনো দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা।
এখনই সময়—এই মুখোশধারী প্রতারকের আসল রূপ জনসম্মুখে আনার। প্রশাসন, মিডিয়া ও সচেতন সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে এই ‘ধর্মব্যবসায়ী’ ভণ্ড কবিরাজ ইসলামের বিরুদ্ধে।
ডিআই/এসকে