ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স:)এর জীবনী
ভারতে পাচারের শিকার ৬ বাংলাদেশি নারীকে ৫ বছর পর দেশে ফেরত
বাগমারা ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে পণ্য বর্জনের আহ্বান
নড়াইলের হাসিম মোল্যা হত্যা মামলার ৮ আসামি গ্রেফতার
রূপগঞ্জে পূর্বাচল টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
আত্রাইয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
২৩ বছর পর পবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ‘মুক্তমঞ্চ’ “সংস্কৃতি চর্চায় খুলছে নতুন দিগন্ত”
বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক গলাকাটা কাউসার গ্রেফতার
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা,কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও রেশন পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন করলো আনসার
বসুন্ধরায় নারীর মরদেহ উদ্ধারে গিয়ে দুই মণ গাঁজা পেল পুলিশ
এবার মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার প্রতারক সিকদার লিটন
পহেলা বৈশাখের পরে মিরপুরে ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান
ডালিয়ার ১৪ বিয়ে: প্রতারণা চলমান
কালিগঞ্জ পিএফজি’র সম্মিলিত কার্যক্রম অগ্রগতি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভা 

কয়রায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট

কয়রা (খুলনা)প্রতিনিধি :সুন্দরবন সংলগ্ন দক্ষিণ উপকুলীয় খুলনার কয়রায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চারদিকে হাহাকার।সুবিশাল জলরাশি থাকলেও কোথাও নেই পানযোগ্য পানি। উপজেলার অনেক স্থানে গভীর নলকূপ থাকলেও সে পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে পুকুরের দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ৩ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। কিন্তু ৬০ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। কয়রার গড়িয়াবাড়ি, পাথরখালী, মঠবাড়ি, তেঁতুলতলারচর ,গিলাবাড়ী, কালীবাড়ি, সাতহালিয়া, চৌকুনী, গাতিরঘেরিসহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় খাবার পানির সংকট রয়েছে।সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর কয়রা গ্রামের সরকারি পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, খাবার পানি সংগ্রহের জন্য কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন দূরদূরান্ত থেকে হেঁটে পানি নিতে এসেছেন। অনেকেই কাঁখে কলসি নিয়ে দলবদ্ধভাবে আসছেন পানি নিতে। কেউ বা ব্যস্ত কলসিতে পানি ভরতে। আবার অনেকেই কলসিতে পানি ভরে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ির পথ ধরে।
৬ নম্বর কয়রা গ্রাম থেকে ৪ কিলোমিটার হেঁটে ফাঁকা মাঠ পাড়ি দিয়ে পুকুরের পানি নিতে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ খাদিজা খাতুন। বয়সের কারণে অনেকটা পথ হেঁটে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। ক্লান্তি দূর করতে কলসি রেখে বিশ্রামে বসে পড়েছেন ঘাটে। বিশ্রামের সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পানির অনেক কষ্ট আমাদের। প্রতিদিন চার কলস পানি লাগে আমার। একবারে চার কলস পানি নিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে দুইবার আসতে হয় এখানে। পানি নিতে আমি আর আমার মেয়ে আসি। দুজন দুই কলস করে পানি নিয়ে যাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের এখানে টিউবওয়েলে ভালো পানি পাওয়া যায় না। বর্ষা মৌসুমের পর ২০ লিটার পানি ৩০ টাকা দিয়ে কয়রা সদর থেকে কিনে খেতে হয়। সরকারি পর্যায়ে পানির ট্যাঙ্কির ব্যবস্থা থাকলেও আমরা পাই না। আমাদের তো আর টাকা দিয়ে পানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নাই। তাই বাধ্য হয়ে পুকুরের পানি খাই।
তারা আরো বলেন, আমরা বর্ষাকালে একটু ভালো থাকি। তারপর বাকি সময় ধরে খুবই কষ্ট হয় আমাদের। কিন্তু আমাদের এক পুকুর থেকে মানুষ, গরু-ছাগল একলগে পানি খাচ্ছি। মাঝে মাঝে পানিদূষণের কারণে অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পুকুরের চার পাশে ঘেরা বেড়া থাকলে গরু-ছাগল পুকুরে নেমে পানি দূষিত করতে পারত না।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত স্থানীয়দের দান করা ৩ বিঘা জমির ওপর সরকারি পুকুরটি খনন করা হয় ৮০-এর দশকে। সেই থেকে পুকুরটি কয়েকবার নামমাত্র খনন করা হলেও এ রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা গেছে, পুকুরের দুই পাড়ে দুটি পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। নেই কোনো ঘাটের ব্যবস্থা। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ বিভিন্ন গ্রাম থেকে হেঁটে, কেউ ভ্যানে করে পুকুর থেকে কাদামিশ্রিত, লবণযুক্ত পানি নিয়ে যাচ্ছে। পুকুরটির চারপাশে ঘেরা বেড়ার ব্যবস্থা না থাকায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি অবাধে পুকুরে নেমে দূষিত করছে পানি।মানুষ ও পশুপাখি একই পুকুরের পানি ব্যবহারের ফলে রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়রা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ বলেন, কয়রা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। লবণাক্ততার কারণে অধিকাংশ এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট থাকে। তবে সরকারিভাবে ট্যাঙ্কি সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, ৫ নম্বর কয়রা সরকারি পুকুরের বিষয়টা জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে জেনেছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে দ্রুত পুকুরের পিএসএফ সংস্কার করে চারপাশে ঘেরার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে পুকুরে কোনো পশুপাখি প্রবেশ করতে না পারে।

শেয়ার করুনঃ