ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স:)এর জীবনী
ভারতে পাচারের শিকার ৬ বাংলাদেশি নারীকে ৫ বছর পর দেশে ফেরত
বাগমারা ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে পণ্য বর্জনের আহ্বান
নড়াইলের হাসিম মোল্যা হত্যা মামলার ৮ আসামি গ্রেফতার
রূপগঞ্জে পূর্বাচল টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
আত্রাইয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
২৩ বছর পর পবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ‘মুক্তমঞ্চ’ “সংস্কৃতি চর্চায় খুলছে নতুন দিগন্ত”
বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক গলাকাটা কাউসার গ্রেফতার
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা,কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও রেশন পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন করলো আনসার
বসুন্ধরায় নারীর মরদেহ উদ্ধারে গিয়ে দুই মণ গাঁজা পেল পুলিশ
এবার মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার প্রতারক সিকদার লিটন
পহেলা বৈশাখের পরে মিরপুরে ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান
ডালিয়ার ১৪ বিয়ে: প্রতারণা চলমান
কালিগঞ্জ পিএফজি’র সম্মিলিত কার্যক্রম অগ্রগতি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভা 

শিক্ষকদের মধ্যে রেষারেষি দুই শিক্ষার্থী ইলেকট্রিক শটে দগ্ধ

লক্ষ্মীপুরে সাড়ে এগারো হাজার ভোল্টেজের স্কুলের ছাদ ঘেঁষে থাকা ছাদে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়েছে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার রায়পুর উপজেলার পূর্ব সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বৈদ্যুতিক লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ হন। আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের নাম মরিয়ম আরবী নিসা ও রিপ্তি আফসা। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, দুই ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের স্বজনদের নির্দেশনা দিয়েছি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার।
আহত শিক্ষার্থীদের পরিবার জানান, মেয়ে দুটি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছে। তাদেরকে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।
দুই শিক্ষার্থী কীভাবে দগ্ধ হয়েছে সে বিষয়ে জানেননা ঐ স্কুলের কোন শিক্ষকই।
প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ” দুপুরের স্কুল বিরতিতে আমি যোহরের নামাজের জন্য ওযু করছিলাম হঠাৎই শুনি দুই শিক্ষার্থী বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়েছে। আমি মনে করছিলাম আমার ছোট বাচ্চাটা কারেন্টে হাত দিয়েছে। আমি দৌড়ে দোতলায় যাই। তখন ছাদের বিষয়টি আমার মাথায় ছিলনা। কারণ ছাদের গেইট সবসময়ই তালা দেওয়া থাকে। আমার চাকরির বয়স পঁচিশ বছর এই স্কুলে আমি নতুন এক বছর চারমাস হয়েছে আসছি। এসে দেখি সহকারি শিক্ষক জটিল কৃষ্ণ মজুমদার ও দিলরুবা ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছে। তারা তো আমাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবেই মানেননা। আমার যোগদানের পূর্বে টানা বারো বছর সহকারী শিক্ষক জটিল কৃষ্ণ মজুমদার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থেকে ব্যাপক অনিয় করে আসছিলেন। আমি যোগদান করে তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগে যায়। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। তারাও দুই শিক্ষক জটিল কৃষ্ণ মজুমদার ও দিলরুবার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে এখন বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। আমি ছাদের গেইটের জন্য এপর্যন্ত ৩০ টি তালা কিনেছি। তারা বারবার তালাগুলো খুলে ফেলে দেয়। আমি দুই শিক্ষকের মানষিক টর্চার সহ্য করতে না পেরে নিজে চাকুরী পর্যন্ত রিজেইন দিয়েছি। আর কয়েকমাস আমার চাকুরী আছে। আমি এমনিতে হার্টের রোগী। ঘটনার দিন জটিল কৃষ্ণ মজুমদার সকালে এসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যায় ভোটার তথ্য হালনাগাদের কাজে, তার কাছেই চাবি ছিল। তবুও কে ছাদের গেইট খুলছে বলতে পারছি না?
কাসেম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদের পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের লাইন। অসাবধানতাবশত দুই শিক্ষার্থী বৈদ্যুতিক লাইনের কাছে পৌঁছায়। পরে তাদের একজন লাইনটি স্পর্শ করলে অপরজন ছাড়াতে যায়। এতে দুজনেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়।
তবে স্থানীয়রা জানান, জটিল কৃষ্ণ মজুমদার ১২ বছর ধরে এই স্কুলে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে স্কুলটাকে শেষ করে দিয়েছে। জটিল কৃষ্ণ মজুমদার ছাদ ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সবসময়ই ছাদ খোলা রাখতো। সে ছাদে গিয়ে প্রায়ই নেশা করতো। এই দুর্ঘটনা শুধু তার জন্যই হয়েছে। জান্নাতুল ফেরদৌস প্রধান শিক্ষক। হওয়ার পরে স্কুলের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে তো কোন শিক্ষকই স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস করতেও আসতোনা। বিক্ষুব্ধ জনতা সহকারী শিক্ষক জটিল কৃষ্ণ মজুমদারকে দেখেই তোর জন্য শিশু দুটির আজ এই অবস্থা বলেই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল ইসলামের সামনেই চর-থাপ্পড়, কিলগুষি মারতে মারতে মাটিতে শুয়ে ফেলে। অনেক কষ্টে শিক্ষা অফিসার ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে জটিল কৃষ্ণ মজুমদারকে উদ্ধার করে রায়পুরে নিয়ে আসেন।
এবিষয়ে রায়পুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, প্রথমে শিশু দুটিকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে। আর কীভাবে শিক্ষার্থী দুজন দগ্ধ হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে স্থানীয় কেউ কেউ বলেন, পল্লী বিদ্যুৎতের অবহেলায় আজকের অকালে দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
এবিষয়ে রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎতের এজিএম গাউসুল আজম বলেন, আমি আজকেই এখানে যোগদান করছি। শিশু দুটির বিষয়ে শুনছি। কিন্তু আমি তো নতুন তাই এবিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। স্কুল কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ লাইনটি অপসারণের কোনো আবেদন করছিল কিনা দেখে বলতে পারবো। এবিষয়ে ডিজিএম স্যার ভালো বলতে পারবেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান খাঁন বলেন, আমি বিষয়টি শুনে প্রাথমিকের শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তাদেরকে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে একটা প্রতিবেদন দিতে বলেছি। কীভাবে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়েছে। কার অবহেলায় হয়ে। এর পিছনে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন অবহেলা রয়েছে না প্রধান শিক্ষকের অবহেলা নাকি পল্লী বিদ্যুৎতের অবহেলা রয়েছে। প্রতিবেদন আমার কাছে আসার পরে দেখে কেউ দোষী হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুনঃ