
নিশাত জাহান,২০১০ সালের ২৮ জুলাই উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদে যোগদান করেন নোয়াখালীতে। পদটি বদলীজনিত হলেও গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকুরি পাওয়া নিশাত সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছরের চাকুরি জীবনে বিভিন্ন উপজেলায় মুল পোস্টিং দেখিয়ে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়েই ছিলেন ১২ বছর।
সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে উপ-খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কর্মরত নিশাত জাহানের বিরুদ্ধে লাগামহীন ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ডিলার এবং সেবা প্রার্থীরা অভিযোগ করে জানান,২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ২০১০ সালে সরকার দলীয় সমর্থক হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় উপ-খাদ্য পরিদর্শক পদে চাকুরি পান নিশাত জাহান। এরপর তিনি ১৪ বছরের চাকুরি জীবনে বিভিন্ন উপজেলায় মুল পোস্টিং দেখিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়েই ছিলেন ১২ বছর।
নিশাত জাহান দীর্ঘ এক যুগের মতো একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি,ওএমএস ডিলারের ডিউ,জিআর,কাবিখাসহ খাদ্য সংক্রান্ত সব কাজে চলে নিশাতের একক আধিপত্য।
সম্প্রতি উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ৫জন নতুন ওএমএস ডিলার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে সেখানে প্রায় ৫৩ জনের আবেদন জমা পড়ে। প্রত্যেকটি আবেদনকারী ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের আবেদন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আবেদনকারী অভিযোগ করে বলেন,প্রত্যেক ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের সরকারি ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা হলেও সরকারি ফি’র বাহিরে নিশাত জাহানকে অতিরিক্ত ঘুষ বাবদ দিতে হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
একাধিক খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন,কর্মসূচির চালের ডিউ সংগ্রহ করতে উপ-খাদ্য পরিদর্শক নিশাত অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে ডিউ প্রতি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ঘুষ আদায় করেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ডিলারশীপ বাতিলের হুমকিও দেয় এই নারী কর্মকর্তা। যার কারণে কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মূখ খুলতে রাজি হননি।
শুধু খাদ্য বান্ধব ও ওএমএস ডিলারের ডিউই নয়, জিআর,কাবিখাসহ খাদ্য সংক্রান্ত সকল কাজে সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে স্বনামে-বেনামে ফ্ল্যাট বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন নিশাত জাহান এমন অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীরা।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপ-খাদ্য পরিদর্শক নিশাত জাহানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে একাধিক বার তার অফিসে গিয়ে চা খাওয়ার প্রস্তাব করেন।
উপ-খাদ্য পরিদর্শক নিশাত জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই উপ-খাদ্য পরিদর্শকরে বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। এখন আপনার কাছ থেকে যা জেনেছি,সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন সরকারি কর্মচারী একই জায়গায় এক যুগ কিভাবে চাকুরি করে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি এক বছর হয়েছে। তার বদলির বিষয়টি আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দেখবেন।
নোয়াখালী।
ডিআই/এসকে