
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে পুলিশ সদর দফতরের সামনে অবস্থান নিয়ে দুপুর থেকে বিক্ষোভ করছিল গত ১৫ বছরে নানা কারণে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। সন্ধ্যা ৭টায় আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে ৪জনকে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো.ময়নুল ইসলাম।
তিনি চাকরি ফেরতের আশ্বাস,মূল্যায়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া বিচার-বিশ্লেষণ করার ঘোষণা দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা।
আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে বৈঠকে অংশ নেয়া চার সদস্যসহ বৈঠক শেষে পুলিশ সদর দফতরের চার সিনিয়র কর্মকর্তা বাইরে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ সদর দফতরের সামনে অপেক্ষায় থাকা পুলিশ সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনার খবর জানালে উচ্ছ্বাসে রোল পড়ে যায়। একে অন্যকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ) ড.শোয়েব রিয়াজ আলম উপস্থিত আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জানেন বর্তমান আইজিপিও বিভিন্ন সময় বাহিনী কর্তৃক বৈষম্যের শিকার। তিনি আপনাদের ব্যাপারে আন্তরিক। আপনাদের চাকরি ফেরানোর বিষয়ে আন্তরিক। আপনাদের বিরুদ্ধে যদি বিন্দুমাত্র অন্যায়-অবিচার করা হয়, তাহলে তারা চাকরি ফেরত পাবেন।
তিনি বলেন,আইজিপি মহোদয় একজন ডিআইজির নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দিয়েছেন। আপনাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সব কিছু বিচার-বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। কেস টু কেস দেখা হবে। সেজন্য একটু সময় দরকার। একজন একজন করে আসবেন প্রত্যেকের বিষয় শোনা হবে। এমন কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত হবে না,চাকরি ফেরত পেলেন কিন্তু বেতন পেলেন না। আদালত থেকে যারা নির্দোষ হিসেবে খালাস পেয়েছেন,তারা অটোমেটিক চাকরি পাবেন। আর যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান, সেগুলো জিডি আকারে আমলে নিয়ে ডিসমিস করা হবে। আপনারা আজকে চলে যান। রাস্তা ক্লিয়ার করেন। আপনাদের সঙ্গে আপনাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা ব্রিফ করবেন। কাল থেকে আপনাদের সবার কথা কেস টু কেস শোনা হবে।
আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া চাকরিচ্যুত এএসআই সাদ্দাম হোসেন বলেন,সুখবর আছে। আপনারা কেউ বিশৃঙ্খলা করবেন না। আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান,তাদের জন্য প্রয়োজনে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে। আর অধিকাংশরাই চাকরি ফেরত পাবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধিও থাকবে।
পরে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে প্রধান ফটক ছেড়ে ফুটপাতে অবস্থান নেন। এতে করে রাত আটটা নাগাদ পুলিশ সদর দফতরের সামনের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে সামান্য কারণে বিভাগীয় মামলা,বেআইনি আদেশ না শোনা, ডোপ টেস্টের নামে ফাঁদ,ছুটি না দেওয়ায় তর্ক করাসহ নানা কারণে গত ১৫ বছরে চাকরিচ্যুত হওয়া হাজারো পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের সামনে। সদর দফতরের প্রধান ফটকসহ দুটি গেইট বন্ধ করে রাখায় আইজিপিসহ সব কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ সদর দফতরের ভেতর থেকে চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়,বিকেল থেকে পুলিশ সদর দফতরের সামনের সড়কের দুই লেন বন্ধ করে বিক্ষোভ ও স্লোগান দিচ্ছেন চাকরিচ্যুতরা। এতে করে পুলিশ সদর দফতরের সামনে সড়কে যান চলাচল স্থগিত হয়ে যায়।
এ সময় চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা স্লোগান দেন-আমার পোশাক ফিরিয়ে দে,নইলে বিষ কিনে দে;কেউ পাবে, কেউ পাবে না,তা হবে না তা হবে না;নির্বাহী আদেশে জব দিতে হবে,এক দফা এক দাবি মানতে হবে মানতে হবে;হই হই রই রই,বেনজীর গেলো কই;হই হই রই রই,মামুন গেলো কই;হই হই রই রই,হারুন গেলো কই;হই হই রই রই বিপ্লব-বাতেন গেল কই;স্বাধীন বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই।
ডিআই/এসকে