
পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারসহ ১১ দফা দাবি তুলেছেন অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই দাবিগুলো যৌক্তিক ও পূরণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন নির্যাতিত,নিগৃহীত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলেন,’দাবীগুলো বাস্তবায়নে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
বুধবার ( ৭ আগস্ট ) বিকালে নির্যাতিত, নিগৃহীত অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে এসব কথা বলেন চাকরিচ্যুত ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
সাইদ হাসান বলেন,’এই নির্যাতনের সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে গত মধ্য জুলাই থেকে খুনি হাসিনার কতিপয় খুনি কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্বিচারে ছাত্র-জনতা হত্যা এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় অসংখ্য নিরীহ ও নিরুপায় পুলিশ কর্মচারীদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া। উদ্বেগের বিষয় হল, শহীদ ছাত্র-জনতার মত আমরা এখনো জানি না কভজন নিরীহ ও নিরাপরাধ পুলিশ কর্মচারী এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন।’
তিনি বলেন,এই উভয় হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে আমার সন্তান-সন্ততি ও সহকর্মীবৃন্দ। এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার তথা আপামর জনসাধারণের মতো আমরাও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। যতদূর জানি এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন আইনি প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি। এর মূল কারণ তা শুরু করার প্রাথমিক ধাপ এজাহার দায়ের ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ। যা শুরু হয় মূলত থানা থেকেই। সেই থানার কার্যক্রম গত রবিবার থেকে পুরোপুরি বন্ধ। অথচ এই প্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হবে সুবিচার প্রাপ্তিতে তত বেশি নানাবিধ অন্তরায় সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন,ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা জানতে পারছি খুনী হাসিনার দোসর অপরাপর কতিপয় খুনিরা দেশের বিভিন্ন স্কুল ও আকাশ পথে দেশ ত্যাগ করে ফেলেছে। অন্যান্য যারা আছে তারাও পালানোর চেষ্টা কালে ইমিগ্রেশন পুলিশ দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়ে ফিরে আসলেও শুধুমাত্র কোন মামলা রেফারেন্স বা বৈধ আটককারি পুলিশের কার্যকারিতা না থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।
উল্লেখিত এই সামরিক আইনি প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত তথা বাধাগ্রস্ত করার জন্য আমরা মনে করি,ঐ সকল বিত্তবান ও প্রভাবশালী খুনি ও তার দোসরা বিভিন্ন উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে ইন্ধন দিয়ে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমির পরিবেশ-পরিস্থিতি বিশৃংখল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই আপনারা দেখেছেন,পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে লুণ্ঠন,ছিনতাই,চুরি,ডাকাতি ইত্যাদি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। মহানগরগুলোর ট্রাফিক ব্যবস্থা দিন-দিন বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় অতি জরুরী ভিত্তিতে যদি অন্তত: খানা এবং ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় করা না যায়, তাহলে দেশ আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হবে।
এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে বীর দ্বাত্র-জনতার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন-অন্তত: আপনাদের নিজ নিজ এলাকার থানা এবং ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে প্রযোজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপনাদেরই এভ মূল্য দেওয়া কষ্টার্জিত অর্জন- স্বৈরাচারমুক্ত পুনঃস্বাধীন এই দেশটির পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিকরণ তথা জানমালের আরো ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে এদেশ ও তার নাগরিকদের রক্ষাকরে এগিয়ে আসুন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমরা এই মুহূর্তে কোনো দাবী করছি না। আমাদের একমাত্র দাবী এই দেশের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসা। আমরা ১৫ বছর নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছি, যদি আরও ১৫ মাসও কষ্ট করতে হয় আমরা রাজি আছি। আমরা চাকরি ফিরে না পেলেও আমরা আপামর জনসাধারণের দাবী পুরণ হলে আমরা আমরা খুশি থাকব। আমাদের বেশি কষ্ট আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী যারা মারা গেছে এবং তারই প্রতিক্রিয়ায় আমাদের নিরহ-নিরপরাধ সরকারি সহকর্মীরা মারা গেছে এদের একটা বিহিত হোক।’
ডিআই/এসকে