
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব। বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের সারাদেশে ১৫টি ব্যাটলিয়ন রয়েছে। এই সকল ব্যাটলিয়নের মাধ্যমেই দেশজুড়ে অপরাধ দমনে কাজ করছে বাহিনীটি। রাজধানী ঢাকায় র্যাবের ৫টি ব্যাটলিয়েনর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার মধ্যে র্যাব-৩ অন্যতম। দীর্ঘদিন রাজধানীর টিকাটুলিতে সিটি করপোরেশেনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও সম্প্রতি নিজেদের স্থানীয় কার্যালয়ে ও ব্যাটলিয়ন সদর দফতরে কার্যক্রম শুরু করেছে র্যাব-৩।
পাশাপাশি ব্যাটালিয়নটিও অধিনায়কও সদ্য যোগ দিয়েছেন। ব্যাটলিয়নটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর চৌকষ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফিরোজ কবীর।
গত বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর শাহজাহানপুরে র্যাব-৩ এর নতুন অধিনায়কের মুখোমুখি হয়েছিলো সকালের খবর ২৪.কম। একান্ত আলোচনায় উঠে এসেছে আসন্ন কোরবানির ঈদের নিরাপত্তা ও নতুন কার্যালয়ের কার্যক্রমের বিষয়টি। লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফিরোজ কবীবের সঙ্গে কথা বলেছেন সকালের খবর ২৪.কমের রিপোর্টার
সকালের খবর ২৪.কম: ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা র্যাব-৩ এর আওতায়। এই সকল এলাকায় অপরাধ দমনে র্যাব-৩ কতটা সফল। কোন কোন বিষয়ে আরও নজর দেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবীর: আমি মনে করি রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হচ্ছে শাহবাগ,মতিঝিল,পল্টন,রামপুরা ও রমনা এলাকায় র্যাব-৩ দায়িত্ব পালনক করে। র্যাব-৩ এর ব্যাটলিয়ন সদর দফতর শাহজাহানপুরে। এছাড়া খিলগাঁও ও মগবাজার এলাকায় আমাদের দুটি ক্যাম্প রয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর র্যাব তিন যে কাজটি করে এসেছিলো মাদক কারবারি,অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে সব সময় সচেষ্ট্র ছিলো। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে রেল পথে টিকিট কালাবাজারিদের দৌড়াত্ব বন্ধে নজরদারি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাসহ র্যাব-৩ এর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সকালের খবর ২৪.কম: কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রাবাড়ি এলাকায় পরিবহন চাঁদাবাজ ও ছিনতাইচক্রের দৌড়াত্ব বন্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ফিরোজ কবীর: ঈদসহ উৎসব কেন্দ্রকে করে র্যাব-৩ এর তৎপরতা সব সময় বেশি থাকে। প্রতি বারের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদের ছুটিতে যারা নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে যাবেন কেউ যেনো টিকেট কালাবাজারিদের দৌড়াত্বের শিকার না হয় সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। আমাদের গোয়েন্দারা যাত্রীর ছদ্মবেশে ক্রেতা সেজে টিকেটে কেনার মাধ্যমে কালাবাজারিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনছে। ছুটির সময়ে ছিনতাইকারীদের তৎরতা বাড়ে। এছাড়াও অজ্ঞান পার্টি,মলম পার্টিসহ প্রতারকদের তৎপরতা বন্ধে আমরা কাজ করছি। আমরা চাই নগরবাসী নিরাপদে নিরবিঘ্নে বাড়ি ফিরে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন।
সকালের খবর ২৪.কম: ঈদের ছুটি চলার সময়ে খালি বাসার নিরাপত্তায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
ফিরোজ কবীর: ঢাকা থেকে বাইরে গেলে বাসাটি অনিরাপদ হয়ে যাবে। বিষয়টা তেমন নয়। সবাই ছুটিতে গেলেও আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করি। আমাদের নিয়মিত পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরা নিয়মিত কাজ করবেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত থাকবে। আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে না। স্থানীয়দের কাছে আমাদের যোগাযোগ নাম্বর দেওয়া আছে। বিলবোর্ডের মাধ্যমেও আমাদের যোগাযোগ নাম্বার প্রচার করা হয়। সুতরাং কেউ যদি কোনো সহযোগিতা চাইলেই আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
সকালের খবর ২৪.কম: রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো র্যাব-৩ এর আওতায় রয়েছে। এই ব্যাটালিয়নের নতুন অধিনায়ক হিসেবে অপরাধ কমাতে আপনার কি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ফিরোজ কবীর: আপনারা জানেন স্থান অনুযায়ী অপরাধের ধরন পরিবর্তন হয়। অপরাধীদের আচরণও ভিন্ন হয়ে থাকে। সীমান্ত এলাকায় যে ধরনের অপরাধ রয়েছে এখানে কিন্তু তেমন অপরাধ নেই। র্যাব-৩ যোগ দেওয়ার পর যে সমস্যাটা বেশি দেখেছি সেটি হলো মানব পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানোর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই র্যাব-৩ এর আওতাধীন এলাকায়। সারাদেশ থেকে মানুষ এখানে আসছে। এখান থেকে পাঠানো হচ্ছে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই প্রতারণার মাধ্যমে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। বিদেশে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দেওয়া,ফেরত আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি। এছাড়াও র্যাব-৩ এর আওতায় বেশ কিছু জনবহুল এলাকা রয়েছে। যেখানে ঢাকার বাইরের অপরাধীরাও এসে আত্মগোপন করছে। কিছু ঘিঞ্জি এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এটা ঠেকাতেও আমরা কাজ করছি। এছাড়া আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে আমরা বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছি। অভিযানে আমরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। আমার ধারণা এ ধরনের কারখানা আরও থাকতে পারে। এছাড়াও অপরাধীদের প্রতিরোধ ও নাশকতারোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। জঙ্গি তৎপরতা বন্ধেও আমরা গুরুত্বের সঙ্গেও কাজ করছি।
সকালের খবর ২৪.কম: রাজধানীর শাহজাহানপুরে র্যাব-৩ নতুন ঠিকানায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নতুন ঠিকানায় আসার পর আভিযানিক কার্যক্রম কেমন চলছে?
ফিরোজ কবীর: আপনারা জানেন রাজধানীর পুরান ঢাকার টিকুটুলিতে র্যাব-৩ এর কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুরাদ কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ী কার্যালয় ছিলো। যেখানে আমাদের পুরো ব্যাটলিয়নের কার্যক্রম চলমান ছিলো। সেখানে আমাদের জন্য নানা সংকট ছিলো। তবুও আমরা সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করে গেছি। এখন নিজেদের একটি ঠিকানায় চলে এসেছি। এজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ সরকার আমাদের নিজেদের আওতাধীন এলাকায় এমন একটি স্থান দিয়েছে। র্যাবের সদরদফতর আমাদের প্রয়োজনীয় ভবন তৈরি করে দিয়েছে। যার কারণে চলতি বছরের ২৪ মে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণভাবে চলে এসেছি। এরফলে আমাদের সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আগের থেকে অনেক ভালোভাবে বসবাস করতে পারছে। পাশাপাশি আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা ও পরিচালনার জন্য যে স্থান প্রয়োজন ছিলো সেটি আমরা পেয়েছি। আসামিদের সঙ্গে কথা বলার স্থান। অভিযোগ নিয়ে আসা ভুক্তভোগীদের বসার স্থান। আমাদের মিটিং করার জন্য কনফারেন্স রুম অনেক জরুরি ছিলো। সব মিলিয়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুক্ষিণ হচ্ছিলাম। আমাদের সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার তৎপরতা বহু অংশে বৃদ্ধি পাবে।
সকালের খবর ২৪.কম: আপনরা ব্যস্ততার মাঝেও সকালের ২৪.কমকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফিরোজ কবীর: র্যাব-৩ এর পক্ষ থেকে সকালের খবর ২৪.কমকে ধন্যবাদ।
ডিআই/এসকে