
বরগুনা জেলার আমতলী থানার গাববাড়ীয়া এলাকার মুনসুর আলী আকনের বড় ছেলে মজিবর আকন ওরফে টেক্কার (৪৯)। জীবন জিবাকর তাগিদে গ্রাম থেকে ঢাকা আসেন। রাজধানীর গাবতলী আমিন বাজার ও মিরপুর এলাকায় দিনমজুর ও বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু এই পেশার আড়ালে টেক্কা গড়ে তোলেন ভয়ংকর এক ডাকাত দল। যারা দিনে আলোতে দিনমজুর হলেও রাতের আঁধারে ডাকাত।
টেক্কার দলটি তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে বালুর জাহাজ ও ট্রলার থেকে চাঁদাবাজি এবং ডাকাতি করত। চাহিদা মতো টাকা না পেলেই শ্রমিকদের অপহরণ ও নির্যাতনের মুখে নিয়মিত টাকায় করত। ২০১৮ সালে এমনই এক ডাকাতির পরে অর্জিত টাকার ভাগাভাগি দ্বন্দে ডাকাত দলের এক সদস্যকে হত্যা করেন ডাকাত সরদার টেক্কা ও তার সহযোগিরা। হত্যার পরে লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দেন তারা। দীর্ঘ ছয় বছর পরে এই ঘটনায় জড়িত টেক্কা ও তার এক সহযোগিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার ( ১০ জুন ) বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো.কুদরত-ই-খুদা।
তিনি বলেন,২০১৮ সালে সাভার এবং আশুলিয়া এলাকায় তুরাগ নদে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিলো মজিবর ওরফে টেক্কার (৪৯) নেত্বতে এ দলের অন্যতম ছিলেন রুহুল আমিন ওরফে লেদু (৪৩),শামিম হোসেন (৩৩) এবং আজাহার ওরফে আজাদ (৩৩)। একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া ডাকাতি করতে যাওয়ার পথে টাকার ভাগাভাগির দ্বন্দে খুন হন আজাদ। পেছন থেকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আজাদকে হত্যা করেন লেদুসহ অন্যরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে চাপাতি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মরদেহ ফেলে দেওয়া হয় তুরাগ নদে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই ঢাকা জেলা। হত্যার ছয় বছর পর হত্যায় জড়িত ডাকাত সরদার টেক্কা ও তার সহযোগি শামিম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর মিরপুর ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা আরও বলেন,বরগুনার তালতলীর গাববাড়ীয়া এলাকার বাসিন্দা মজিবর আকন ওরফে টেক্কা ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন শামীম দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিল। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। জীবিকার তাগিদে টেক্কা ঢাকায় এসে দিনমুজর শুরু করেন। কিন্তু বেশি আয়ের লোভে ডাকাত চক্র গড়ে তোলেন। তবে এলাকায় প্রচার করতেন তিনি বালুর ব্যবসা করেন। তার ট্রলার ও বালুর জাহাজ রয়েছে। এই সকল তথ্য প্রচার করলেও এর আাড়লে ডাকাতি ও চাঁদাবাজিই ছিলো তার মূল পেশা। ডাকাতির টাকায় টাকায় নিজ গ্রামে গড়ে তুলছেন সাম্রাজ্য। দুই ভাই মিলে নির্মাণ করছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিশাল মাছের খামার।
গ্রেফতারের পর আদালতে আসামিরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আদালতে জবানবন্দীতে আসামিরা জানায়,সাভার ও আশুলিয়া থানার তুরাগ নদীতে ডাকাতি,চাঁদাবাজি করে আসছিলো।
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিহত আজাহার আজাদও (৩৩) ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিল। ঘটনার দিন ডাকাতির উদ্দেশ্যে আশুলিয়া যাওয়ার পথে আজাদের সঙ্গে টেক্কা (৪৯) ও তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড লেদুর সঙ্গে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হলে লেদু ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেছন থেকে আজাদের মাথায় তিনটি কোপ দেয়। পরে চাপাতি দিয়ে আজাদের বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে আজাদের মরদেহ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়। আজাদের পরিবার জানত সে গাবতলী এলাকায় চাকরি করে। তবে চাকরির আড়ালে টেক্কার দলে ডাকাতি করত। এই দলের ক্যাশিয়ার ছিলো আজাদ।
পিবিআই’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন,ব্যক্তিগত জীবনে টেক্কা দুটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী মিরপুরে থাকে। আর দ্বিতীয় স্ত্রী গাজীপুর। গাবতলী ও আমির বাজার এলাকায় আত্মগোপন করতেন। টেক্কা ও তার দল সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মালবাহী ট্রলার,বালুবাহী ভলগেটসহ বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি ও চাঁবাবাজি করতেন। টেক্কার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা,ডাকাতিসহ বিভিন্ন গটনায় নয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন ওরফে লেদুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিআই/এসকে