ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স:)এর জীবনী
ভারতে পাচারের শিকার ৬ বাংলাদেশি নারীকে ৫ বছর পর দেশে ফেরত
বাগমারা ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে পণ্য বর্জনের আহ্বান
নড়াইলের হাসিম মোল্যা হত্যা মামলার ৮ আসামি গ্রেফতার
রূপগঞ্জে পূর্বাচল টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
আত্রাইয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
২৩ বছর পর পবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ‘মুক্তমঞ্চ’ “সংস্কৃতি চর্চায় খুলছে নতুন দিগন্ত”
বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক গলাকাটা কাউসার গ্রেফতার
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা,কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও রেশন পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন করলো আনসার
বসুন্ধরায় নারীর মরদেহ উদ্ধারে গিয়ে দুই মণ গাঁজা পেল পুলিশ
এবার মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার প্রতারক সিকদার লিটন
পহেলা বৈশাখের পরে মিরপুরে ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান
ডালিয়ার ১৪ বিয়ে: প্রতারণা চলমান
কালিগঞ্জ পিএফজি’র সম্মিলিত কার্যক্রম অগ্রগতি পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা সভা 

ডিজি পদে আলোচনায় যারা

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের দশম (১০ম) মহাপরিচালক (ডিজি) কে হচ্ছেন,এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন; আলোচনা। বর্তমান মহাপরিচালকের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ জুন। সরকারের উচ্চমহল থেকে তার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে তিনি এখন অবসরে যাবেন।

এদিকে নতুন ডিজি হতে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে জোর লবিং শুরু করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এরইমধ্যে অনেকে মন্ত্রী,এমপি,রাজনৈতিক নেতা,আমলাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও জানা গেছে। এই তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তাদের (কর্মকর্তাদের) অতীতের বিভিন্ন কাজের পর্যালোচনা চলছে এখন। সব কিছুর পর সরকারপ্রধান চলতি মাসেই তার মতামত (কে পরবর্তী ডিজি) জানিয়ে ফাইল সই করে ছেড়ে দিবেন। তারপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আদেশ জারি করবে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে,আগামী মাসেই বাহিনীটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অপারেশন) খালি হচ্ছে। এই পদে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন কর্নেল মাহাবুব আলম। তিনি পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়েছেন। আগামী মাসের শুরুতেই তিনি পদোন্নতি পাওয়া নতুন পদে দায়িত্ব নিবেন। এই পদে কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রেষণে আনা হবে; যেখানে একটি ব্যাটালিয়নের সাবেক একজন অধিনায়কের (সিও) নাম জোরালো ভাবে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে তিনি একটি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত আছেন। চলতি মাসেই এডিজি পদে তার আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

অন্যদিকে ২০০৪ সালে আটটি বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এলিট ফোর্স র‌্যাবের নিয়ম অনুযায়ী,মহাপরিচালক (ডিজি) বা র‌্যাবপ্রধান হিসেবে পুলিশের একজন অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে র‌্যাবে ১৫টি ব্যাটালিয়ন,আটটি উইং রয়েছে। মেধাবী ও বিচক্ষণ কর্মকর্তারা ডিজি পদে দায়িত্ব পান। যার নেতৃত্বেই বাহিনীটি পরিচালিত হয়। র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে নয়জন পুলিশ কর্মকর্তা ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশে অস্ত্র,মাদক, সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি জঙ্গি দমনে বাহিনীটির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আছে বিতর্কও। যার ফলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ডিজি পদে দায়িত্বে থাকা দুইজন কর্মকর্তা (বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন) সহ সাতজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। যা এখনো বহাল আছে।

ডিজি হিসেবে যারা আলোচনায়:

বর্তমান মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে র‌্যাবের
দায়িত্ব পান। গতবছরের ৪ জুন সরকারি চাকরি থেকে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২৩ মে এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চুক্তিভিত্তিক একবছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৫ জুন।

এরইমধ্যে তিনজন অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা
র‌্যাবের ডিজি হবার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। তারা হলেন- শাহাবুদ্দিন খান,মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার মো.হারুন অর রশিদ। তিনজনই বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিন পদে দায়িত্বে আছেন। অতীতে কর্মক্ষেত্রে তিনজনই মেধার সাক্ষর রেখেছেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তারা অতিরিক্ত আইজিপি হন। ডিজি পদে সরকারের একজন মন্ত্রীর পছন্দের তালিকায় আছেন ব্যারিস্টার মো.হারুন অর রশিদ। একাধিকসূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

শাহাবুদ্দিন খান:

১৯৬৪ সালের ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জন্মগ্রহণ করা শাহাবুদ্দিন খান বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গতবছর তিনি এ দায়িত্ব পান। এর আগে শাহাবুদ্দিন খান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন র‌্যাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। র‌্যাব-১২’র অধিনায়ক ছাড়াও র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-১০-এ ছিলেন। চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা শান্তিরক্ষা মিশনে কসোভোতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি,১৯৮৪ সালে শৈলকুপা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। একসময় কুষ্টিয়া, নারায়নগঞ্জ, মুন্সগঞ্জ,রাজশাহী,নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) ছিলেন। পুলিশে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিকবার’বাংলাদেশ পুলিশ পদক’-বিপিএম পেয়েছেন। বর্তমান দায়িত্বে তিনি হাইওয়ে পুলিশের সুনাম ফেরাতে ও ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্য করতে নানামুখী কার্যক্রম নিয়েছেন।

মাহবুবুর রহমান:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করা মাহবুবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা। ১৯৯৫ সালে তিনি ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পুলিশে যোগদেন। বর্তমানে তিনি শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। মাহবুবুর রহমান এএসপি (সদর দপ্তর) হিসেবে নরসিংদী জেলা পুলিশে,সার্কেল এএসপি হিসেবে কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে ও এএসপি সদর সার্কেল হিসেবে নেত্রকোনায় দায়িত্ব পালন করেন।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালী) হিসেবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন।তিনি অধিনায়ক (সিও) হিসেবে মহালছড়ি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও বগুড়া এপিবিএনে দায়িত্ব পালন করেন। উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও) হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে এবং পুলিশ সুপার হিসেবে হাইওয়ে (পূর্ব),বরিশাল ও কুমিল্লায় দায়িত্ব পালন করেন।

মাহবুবুর রহমান অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০২-০৩ সালে কসোভো ও ২০০৫-০৬ সালে আইভরিকোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পান। ২০১৮ সালে সরকার মাহবুবুর রহমানকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার করে। পরে তাকে শিল্পপুলিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ:

পুলিশের এই কর্মকর্তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের মোল্লাকান্দি গ্রামে। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদরদপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) পদে কর্মরত। তার আগে তিনি পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন। হারুন অর রশিদ ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখান বিভাগ থেকে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যর ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে এলএলবি এবং ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছোটবেলা থেকে অসম্ভব মেধাবী হারুন অর রশীদ আহম্মেদ আলী ছিলেন ব্যবসায়ী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। হারুন অর রশিদ ১৯৯৫ সালে ১৫ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি পুলিশের বিভিন্ন পদে চাকুরি করেছেন। পুলিশ সদরদপ্তরে ডিআইজি লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি হন। কর্মজীবনে পুলিশি সেবা আধুনিকায়ন যেমন- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, অনলাইন জিডি,বিডি পুলিশ হেল্প লাইন এবং সিআইএমএস-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ছিলেন ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি থাকাকালীন তিনি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের শুদ্ধাচার পুরস্কার পান। তিনি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক-বিপিএম পেয়েছেন।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ