
মু. রিয়াজুল ইসলাম লিটন, সিনিয়র রিপোর্টার :
দেশের জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের প্রধান জামাত শুরু হয়। ঈদের নামাজের মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের মানুষের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়।
জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেন। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
এর আগে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সরেজমিন দেখা যায়, নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহের মূল ফটকের সামনে মানুষের সারি। হাজারো মুসল্লি সারিবদ্ধভাবে ঈদগাহে ঢুকছেন। নামাজের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জাতীয় ঈদগাহ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
ঈদগাহ–সংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনের সড়ক, হাইকোর্টের মূল ফটকের সামনে, তোপখানা সড়কের একাংশেও মুসল্লিরা নামাজে দাঁড়িয়ে যান। সব ধরনের শ্রেণি-পেশা-আর্থিক অবস্থান ভুলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সবাই নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে খুতবার পর মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও দেশের মানুষের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। মোনাজাত শেষে বুকে বুক মিলিয়ে হৃদয়ের উষ্ণতায় প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হন সবাই। মুসল্লিরা পরস্পর কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন।

নামাজ আদায় শেষে মুসল্লি হামিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর আমি জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এসে ঈদের নামাজ আদায় করি। আজও এসে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। সবার জন্য দোয়া করেছি।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। নারীদের জন্যও আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় ঈদগাহে এবার মোট ১২১টি কাতারে ৩৫ হাজার মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল সাতটায়। প্রতিবছরের মতো এবারও এখানে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব শেষ জামাত বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। আগামীকাল ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এই শুভেচ্ছা জানান।
মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর।’
ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ-এ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ঈদের এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রামগঞ্জে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। এ দিন সকলশ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন।
মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এখানে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, কূপমন্ডূকতারকোনো স্থান নেই। মানবিক মূল্যবোধ, সাম্য ও পারস্পরিক সহাবস্থান এবং পরমতসহিষ্ণুতাসহ বিশ্বজনীন কল্যাণকে ইসলাম ধারণ করে। ইসলামের এই সুমহান বার্তা ও আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী নানাবিধ সংকটের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ মন্দার প্রভাব দৃশ্যমান। ফলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক জীবনধারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমি সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মানবতার মুক্তির দিশারি হিসেবে ইসলামের মর্মার্থ ও শাশ্বত বাণী ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র, বিশ্ব ভরে উঠুক শান্তি আর সৌহার্দ্যে-পবিত্র ঈদুল ফিতরে এমন প্রত্যাশা করেন।