
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পানি ব্যবসায় চাচাকে প্রতিষ্ঠিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট ৫ কর্মকর্তা ও ১ কৃষকের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন গোলাম রব্বানী নামে এক সেচ পাম্প মালিক। তিনি উপজেলার বনগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ও একজন পানি ব্যবসায়ী। জানা গেছে, গোলাম রব্বানী এলাকায় একটি সেচ পাম্প স্থাপন করে দীর্ঘদিন থেকে কৃষকদের কাছে পানি ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তার চাচা আব্দুল বাক্কিকে পানি ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এ মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানা গেছে। জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে গোলাম রব্বানীর পার্শ্ববর্তী কালাকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তার একটি সেচ পাম্প স্থাপনের উদ্দেশ্য বিএডিসি’র উপজেলা সেচ কমিটির বরাবর একটি আবেদন করেন।
অপর দিকে একই গ্রাম থেকে গোলাম রব্বানীর চাচা মৃত আকবর আলীর ছেলে আব্দুল বাক্কি ও একটি সেচ পাম্প স্থাপনের আবেদন করেন। আব্দুল বাক্কির আবেদনটি পরে হওয়ায় উপজেলা সেচ কমিটি তার আবেদনটি বাতিল করে কৃষক আব্দুল ছাত্তারকে সেচ পাম্প স্থাপনের জন্য ছাড়পত্র প্রদান করেন।
আব্দুস ছাত্তার ছাড়পত্র পেয়ে অগভীর একটি সেচ পাম্প স্থাপন করেন। পরে ছাত্তার বৈদ্যুতিক সংযোগ পেতে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করেন। আব্দুস ছাত্তার জানান, সেচ পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র পাবেন আশায় বিকল্প ব্যবস্থা করে বোরো মৌসুমের শুরুতেই তার অনাবাদি থাকা ১২ একর জমিসহ অন্যান্য কৃষকের অর্ধশতাধিক একর জমিতে বোরো চাষ করেন কৃষকরা। অপর দিকে সেচ পাম্প মালিক গোলাম রব্বানীর চাচা আব্দুল বাক্কির সেচ পাম্প স্থাপনের আবেদনটি বাতিল হওয়ায় আব্দুস ছাত্তার যেন সেচ পাম্প স্থাপন করতে না পারেন এবং পরবর্তীতে আব্দুল বাক্কি যেন উপজেলা সেচ কমিটির কাছ থেকে সেচ পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র পেয়ে পানি ব্যবসা করতে পারেন সেই উদ্দেশ্য গোলাম রব্বানী নানা অজুহাতে শেরপুরের সহকারী জর্জ আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলাটি দায়ের করেন। উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শেরপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জেনারেল ম্যানেজার, ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী জেনারেল ম্যানেজার, বিএডিসি’র উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) বিএডিসি নালিতাবাড়ি ইউনিটের উপসহকারি প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) ও কৃষক আব্দুস ছাত্তারের নামে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। উক্ত মামলার আলোকে আদালত উল্লেখিত বিবাদীদের কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। উক্ত মামলার কারনে উপজেলা সেচ কমিটি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষক আব্দুস ছাত্তারের ছাড়পত্রটি বাতিল করে দেন। ফলে কৃষক আব্দুস ছাত্তারের সেচ পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে যায় । এতে তিনিসহ অর্ধশতাধিক কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে। আব্দুস ছাত্তারের সেচ পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র বাতিল করায় অপুরনীয় ক্ষতিসাধিত হন তিনি ।
গৌরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ জানান, সেচ পাম্প স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী, এক নলকূপ থেকে অপর নলকূপের দূরত্ব প্রয়োজন ১৬৫০ ফুট। সে অনুপাতে গোলাম রব্বানীর সেচ পাম্প থেকে আব্দুস ছাত্তারের সেচ পাম্পের দূরত্ব রয়েছে ২১শ ফুট। এখানে আব্দুস ছাত্তারের সেচ পাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে আইনগত কোন জটিলতা নেই। তিনি বলেন ছাত্তারকে সেচ পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র দেয়া হলে এ এলাকার অনাবাদি থাকা প্রায় ১০০ একর জমি আবাদের আওতায় আসবে। কৃষকরা হবে উপকৃত। নদীর উপারের অপর সেচ পাম্প মালিক আব্দুল মোতালেব বলেন , ছাত্তারের সেচ পাম্প স্থাপনে আইনগত কোন জটিলতা না থাকলেও গোলাম রব্বানী তার চাচা আব্দুল বাক্কিকে সেচ পাম্প স্থাপনের সহায়তা ও তাকে পানি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত করতে নানা অজুহাত দেখিয়ে আদালতে ওই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাদায়েরকারী সেচ পাম্প মালিক গোলাম রব্বানীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আব্দুস ছাত্তারের নিজস্ব কোনও জমিজমা নেই । এছাড়া ওই গ্রামের আব্দুল বাক্কি সেচ পাম্প স্থাপনের জন্য আবেদন করেছিলেন তাকে দেওয়া হলে বৈধতা পাবে। এ কারণে আমি আদালতে মামলা দায়ের করেছি। তিনি আরও বলেন মামলা দায়ের করার পর উপজেলা সেচ কমিটির কমিটি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস ছাত্তারের ছাড়পত্রটি বাতিল করে দিয়েছেন। আব্দুস ছাত্তারের ছাড়পত্র বাতিলের বিষয়ে
বিএডিসি শেরপুর জুনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) ওয়াশিম আকরাম বলেন, আব্দুস ছাত্তারের নলকূপ স্থাপনে আইনগতভাবে কোন জটিলতা নেই। থাকলে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হতো না।
কিন্তু তার প্রতিপক্ষ গোলাম রব্বানী আদালতে মামলা করায় স্থানীয় ভাবে সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। একারণে সাময়িকভাবে ছাত্তারের ছাড়পত্রটি বাতিল করা হয়েছে।উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ছাত্তার তথ্য গোপন করে আবেদন করেছেন। এ ছাড়া গোলাম রব্বানী নামে তার একজন প্রতিপক্ষ আছে। তাই সেখানে যে কোন সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারনে ছাড়পত্রটি বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে ছাড়পত্র পুনর্বহালের দাবিতে কৃষক আব্দুস ছাত্তার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন। এব্যাপারে শেরপুর জেলা প্রশাসক মো: আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, ছাত্তারের একটি আবেদন পাওয়া গেছে। তার ছাড়পত্র বাতিলের বিষয়টি বৈধতা না থাকলে তা দেখবেন বলে জানান তিনি।