
নড়াইলে শখের ল্যাপটপ বিক্রি করে টং দোকান দিয়েছেন অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সৈয়দ সজিবুর রহমান আলভী। আলভী নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। এই টং দোকান থেকেই প্রতিমাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করছেন এই শিক্ষার্থী, যা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে তার পড়াশোনা। এমনকি পরিবারের পাশেও দাঁড়াতে পারছেন তিনি। শিক্ষিত তরুণের এমন উদ্যোগকে প্রথমে কেউ ভালোভাবে না নিলেও এখন সাধুবাদ জানাচ্ছেন সবাই। সরেজমিন নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী বাধাঁঘাটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি টং দোকান দিয়েছেন আলভী। সেখানে কেতলি হাতে চা বানাচ্ছেন তিনি। তার দোকানে সাধারণ রং চা থেকে শুরু করে তান্দুরি, তেঁতুল, অপরাজিতা, কাশ্মীরি, বুলেট, বিটরুট, তুলসী, বাম্বু, মালাই ও বাদামসহ ২০ প্রকারের চা। ৫ টাকা থেকে শুরু করে প্রকারভেদে এসব চা বিক্রি হয় ৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া লেবুর পিনিক, সুস্বাদু চিকেন মোমো ও ওপেলও বিক্রি করছেন তিনি। আর এসব খাবারের স্বাদ নিতে প্রতিদিন তার দোকানে ভিড় করছেন নানান বয়সী মানুষ। এছাড়া আলভীর দোকানে রয়েছে স্টিকি নোটের ব্যবস্থা। খাওয়ার পর খাবারের মান কেমন ছিলো তা লিখে একটি বোর্ডে লাগিয়ে রাখতে পারবেন ক্রেতারা। দোকানে চা খেতে আসা নড়াইল পৌরসভার দূর্গাপুরের শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রথম থেকে আমি এই দোকানে বসি, আড্ডা দেই এবং খাবার খাই। দোকানদার সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন। বর্তমান সময়ে কলেজ-ভার্সিটিতে যারা লেখাপড়া করে তারা অবসর সময় আড্ডা দিয়েই কাটিয়ে দেয়। কিন্তু আলভী ভাই পড়ালেখার পাশাপাশি যে নিজে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলেছে এটা সত্যিই প্রশংসানীয়। এস এম ফয়সাল নামে একজন বলেন, আমি আলভীকে অনেকদিন ধরে দেখছি। সে অনার্সের ছাত্র পাশাপাশি তার একটি চায়ের দোকান আছে। সে নিজে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা আসলে একটা ইতিবাচক দিক। আমাদের দেশের জন্য একটা বড় বিষয়। যারা লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি না পেলে নিজে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করবে তাদের জন্য আলভী একটা অনন্য উদাহরণ।
তরুণ উদ্যোক্তা সৈয়দ আলভী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে নড়াইল থেকে ঢাকা গিয়েছিলাম চায়নিজ ভাষা শিখতে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি খাবারের দোকোনে চাকরি নেই। কাজ ঠিকঠাক করলেও বেতন ঠিকমত পেতাম না। এরপর ঠিক করি নিজে উদ্যোক্তা হব। চায়ের দোকান দেব। তবে একথা বাড়িতে জানালে কেউ তা মেনে নেয়নি। পরিচিত কেউই তেমন ভালোভাবে নেয়নি। তবে কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছি। ২০২২ সালে এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে এবং শখের ল্যাপটপ বিক্রি করে দোকান শুরু করি। এরপর লোন নিয়ে বন্ধুর ধার পরিশোধ করেছি। কয়েক মাসের মধ্যে লোনটিও পরিশোধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এই দোকানের আয় দিয়ে পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত খরচ মিটিয়ে পরিবারেও টাকা দিচ্ছি।ভবিষ্যতে বড় একটি রেস্টুরেন্ট করার স্বপ্ন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেকরত্ব একটা সামাজিক ব্যাধি। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া খুবই দরকার। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট কিছু নিয়ে শুরু করলে ইনশাঅল্লাহ সামনে ভালো কিছু করা সম্ভব। চাকরির যে বাজার তা ধরতে গেলে অনেক সমস্যা। তাই আমি মনে করি যে নিজে আত্মবিশ্বাসী হয়ে, উদ্যোক্তা হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজ শুরু করলে অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু পরে সবাই সমর্থন করবে ইনশাঅল্লাহ। প্রথম পর্যায়ে কেউ কারো পাশে থাকে না। তাই বেকার যারা আছে তাদের কাজ শুরু করা উচিত বলেও মনে করেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের দায়িত্ব পালনকারী অধ্যক্ষ খান শাহাবুদ্দিন বলেন, একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি আত্বনীর্ভরশীলতার জন্য কিছু করলে সেটা অবশ্যই প্রসংশনীয়।