
রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড ও যাত্রী ছাউনি থেকে টার্গেটকৃত যাত্রীদের সঙ্গে বাসে উঠে সখ্যতা গড়ে তুলে একটি চক্র। এরপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে কলম উপহার দেওয়ার নামে মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ দিয়ে অচেতন করে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিলো একটি চক্র।
সম্প্রতি এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দাপ পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি বলছে,চক্রটির ফাঁদে পা দেওয়া ব্যক্তিদের জিম্মি করে পরিবারকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ফোন করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিত। এমন কি জিম্মি থাকা ব্যক্তির মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিতো।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-চক্রের মূলহোতা শফিকুল ইসলাম (৪২) ও তার সহযোগী বেলায়েত হোসেন (৫৪), নাসিম হাসান লাভলু (৪৪)।
সোমবার ( ১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবির নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন,রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে জিরাবো যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন এক নারী। একই স্থান থেকে তার সঙ্গে বাসে ওঠেন এক ব্যক্তি। পাশাপাশি সিটে বসে পরিচয় ও কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি ভুক্তভোগী নারীকে একটি কলম উপহার দেন। সেই কলম হাতে নেওয়ার পর সেই নারী চিন্তা শক্তি কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যায়। প্রতারক তার মোবাইল নিয়ে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে পল্লবী মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে নামিয়ে দেন।
কয়েক ঘন্টা পর ভুক্তভোগী নারীর চিন্তা শক্তি স্বাভাবিক হয়। এসময় নিজেকে পল্লবী এলাকায় শনাক্ত করেন এবং সাথে থাকা মোবাইল ফোনটি খুজে না পেয়ে একজন পথচারীর মাধ্যমে তার ছেলেকে মোবাইল করে তার অবস্থান জানালে তার ছেলে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়।
হারুণ আরও বলেন,ওই নারী পল্লবী থেকে উদ্ধার হওয়ার পর বাসায় গিয়ে জানতে পারেন তার অচেতন থাকা সময়ে কয়েকজন ব্যক্তি গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে আটকের তথ্য দিয়ে ছেলে কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
শফিকুলের টার্গেট নারীরা উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন,শফিকুল ইসলাম বাসে একা একা চলাচলরত নারীদের টার্গেট করে পাশের সিটে বসে কৌশলে বিভিন্ন আলাপচারিতায় সখ্যতা গড়ে তুলতেন। এসময় তিনি একটি বিশেষ কলম উপহার দেন। এটাই তার কাজ। সেই কলমে শফিকুল মূলত একটি বিশেষ চেতনানাশক দ্রব্য (মাইন্ড কন্ট্রোল ড্রাগ) মিশিয়ে রাখেন। কলমটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে এই বিশেষ নেশা দ্রব্যের প্রভাবে ভুক্তভোগীর চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে যায়। যার ফলে এই সময়ে প্রতারকদের কথা মত কাজ করতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। এই সুযোগে প্রতারক শফিকুল ইসলাম সেই ব্যক্তির কাছে থাকা মোবাইল এবং মূল্যবান সম্পদ (ঢাকা, পয়সা, গহনা) নিয়ে চম্পট দেন। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের স্বজনদের ফোন করে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে জানিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, চক্রটি টাকা পাঠানোর পর পুনঃরায় ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরীফ দানের কথা বলে আরো টাকা চাইতো চক্রটি।
এভাবেই তারা বিভিন্ন নারী ও পুরুষকে জিম্মি করে টাকা পয়সা আদায় করতো। চক্রটি বিভিন্ন থানার আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে থানায় আগত ব্যক্তিদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেও টাকা আদায় করতো। তাদের বিরুদ্ধে দেশে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা গত ৫ বছর ধরে এভাবে বিভিন্ন প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করছিল।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে ডিরিব হারুন বলেন,আপনারা কেউ বাসে কোন কিছু দিলে খাবেন না। কেউ পাশে বসে খাতির জমালেই তাকে বিশ্বাস করবেন না। এমন চক্রের হাত থেকে সাবধান থাকার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন।
ডিআই/এসকে