
সংসারে সাচ্ছন্দ্য ও ভাগ্য পরিবর্তনের আসায় দালাল মারফতে মালশিয়া পাড়ি দেয়া যুবককে জিম্মি করে মুক্তিপনের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার কারনে মানুষিক রোগী হয়ে দেশে তানোরে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন এক যুবক।
মুক্তিপন হিসেবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে মানসিক রোগী হয়ে শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে ১৭ অক্টোবর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন সবুজ আলী (২২) নামের ওই যুবক। সে রাজশাহীর তানোর উপজেলা কামারগাঁ ইউপির ছাঐড় গ্রামের ইমদাদুল হকের পুত্র।
এঘটনায় সবুজের পিতা ইমদাদুল বাদি হয়ে গত ১৮ অক্টোবর দালাল ছাঐড় গ্রামের বাবুন ও তার ছেলে আপনকে বিবাদী করে তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, দালাল বাবুনের আকর্ষনীয় প্রলোভনে চলতি বছরের ১১ জুলাই ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মালেশিয়াতে পাড়ি জমায় সবুজ। সেখানে যাওয়ার পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবারের সাথে।
প্রায় এক মাস পর মালশিয়া থেকে সবুজকে দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন বাবুনের লোকজনরা। ছেলেকে বাচাতে জায়গা জমি বিক্রি ও ঋন মহাজন করে চলতি মাসের ১০/১০/২০২৩ ইং তারিখে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠায় সবুজের পিতা ইমদাদুল হক।
মালশিয়া থেকে দেশে আসতে আরো ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা পাঠায় কোরবান নামের এক ব্যক্তির কাছে। টাকা পাওয়ার পর বিমানের টিকিট সহ যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে সবুজকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। বর্তমানে সবুজ মানষিক রোগী হয়ে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে পাগলের মত বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নির্যাতনের স্বীকার বিদেশ ফেরত সবুজের পিতা ইমদাদুল হক বলেন, আমার ছেলেকে কোনভাবেই বিদেশ পাঠাবনা। কিন্তু দালাল বাবুন আমার ছেলেকে নানা ভাবে প্রলোভন দেয়া শুরু করেন। ফলে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার ছেলে মালেশিয়াতে যায়। যাওয়ার পর থেকে ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।
তিনি বলেন, দালাল বাবুনকে একাধিকবার বলা হলে সে বলত আপনার ছেলে ভালো আছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই টাকা পাঠানো শুরু করবে। এক মাস পর আমার ছেলে কান্না করতে করতে মোবাইল করে বলে আমাকে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিয়া হয়েছে, আমাকে খেতে দেয়া হচ্ছে না, চোখ মুখ কালো কাপড়ে বেধে নির্যাতন করছে, যেভাবে হোক টাকা পাঠান না হলে আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে জীবিত দেখতে চাইলে তাদের চাহিদামত টাকা দিতেই হবে।
যুবকের পিতা আরো বলেন, এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দালাল বাবন লাপাত্তা। বাধ্য হয়ে ইসলামি ব্যাংক তানোর শাখার মারফতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা চলতি মাসের ১০ অক্টোবর ২০২০৩ ইং তারিখে পাঠিয়ে দিই। টাকা দেয়ার পর তারা আমার ছেলেকে মুক্তি দেয়।
অসহায় পিতা ইমদাদুল হক বলেন, মালশিয়া থেকে দেশে আনার জন্য বিমানের টিকিটসহ আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে আরো ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দিলে আমার ছেলে দেশে ফিরে আসে। ঢাকা থেকে ২৬ হাজার টাকায় মাইক্রো ভাড়া করে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার ছেলের পুরো শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। সঠিক ভাবে কথাবার্তা বলতে পারছেনা। দালাল বাবুনকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দালাল বাবুনের ছেলে আপনকে টাকা ফেরতের কথা বলা হলে সেও সাব বলে দিচ্ছে আমার বাবা আসলে তার সাথে কথা বলে সমাধান করেন। আমি এখন পথের ভিখারি হয়ে পড়েছি বলে কান্না কন্ঠে এসব কথা বলেন সবুজের পিতা ইমদাদুল হক।
সবুজের মা বলেন, আমার ছেলে কে এত পরিমান নির্যাতন করেছে বলাই কষ্টকর। পুরো শরীরে জখম। একেবারেই মানষিক রোগী হয়ে গেছে। কত আসা স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাঠালাম আর আমার ছেলে পাগল হয়ে আসল।
তিনি বলেন, এখন কিভাবে সংসার চালাবো কিভাবে ঋন পরিশোধ করব, নাকি ছেলের চিকিৎসা করাব। ছেলের বাবাও মনে হয় পাগল হয়ে যাবে। আমার ছেলে শুয়ে থাকা অবস্থায় ঘুমের ঘরে চিৎকার দিচ্ছে, আর বলছে আমাকে মের না খেতে দাও, নইলে মরে যাব। তিনি দালালকে ধরে এনে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দালাল বাবুন বেশকিছু ব্যক্তিকে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে মালেশিয়াতে পাঠিয়ে বিভিন্ন কায়দায় মুক্তিপন দাবি করেন বলেও অহরহ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দালালকে আইনের আওতায় এনে খোয়া যাওয়া টাকা ফেরতের দাবি তুলেছেন গ্রামবাসী। তা না হলে ছেলে ও টাকার চিন্তায় হয়তো পিতা মাতাও মানষিক রোগী হতে পারেন বলেও আশঙ্কা গ্রাম বাসীর।
তবে দালাল বাবুন এলাকায় না থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আব্দুর রহিম বলেন অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।