ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
ঘুরতে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, গ্রেফতার ৩
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স:)এর জীবনী
ভারতে পাচারের শিকার ৬ বাংলাদেশি নারীকে ৫ বছর পর দেশে ফেরত
বাগমারা ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে পণ্য বর্জনের আহ্বান
নড়াইলের হাসিম মোল্যা হত্যা মামলার ৮ আসামি গ্রেফতার
রূপগঞ্জে পূর্বাচল টিভির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
আত্রাইয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
২৩ বছর পর পবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ‘মুক্তমঞ্চ’ “সংস্কৃতি চর্চায় খুলছে নতুন দিগন্ত”
বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক গলাকাটা কাউসার গ্রেফতার
ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা,কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও রেশন পরিবহন ব্যবস্থার প্রবর্তন করলো আনসার
বসুন্ধরায় নারীর মরদেহ উদ্ধারে গিয়ে দুই মণ গাঁজা পেল পুলিশ
এবার মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার প্রতারক সিকদার লিটন
পহেলা বৈশাখের পরে মিরপুরে ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করতে অভিযান করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক
সৌদি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি নেওয়ার আহ্বান
ডালিয়ার ১৪ বিয়ে: প্রতারণা চলমান

বংশাল থানার মামলায় কারাগারে আসামির মৃত্যু,যা বলছে ডিএমপি

রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল থানার কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়িতে মাদক বহমের অভিযোগে আটক ও ফাঁড়িতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মাদকসহ আটকের পর মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো আসামি ফারুক হোসেন মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের স্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)।

সোমবার ( ৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি লিখিত একটি প্রতিবাদ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। তবে মিডিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিলো না।

গণমাধ্যমে আসামি মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপির বলেন,”কায়েৎটুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হকসহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য মিলে তার স্বামী ফারুক হোসেনকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে ছেড়ে দেয়ার জন্য তার নিকট টাকা দাবি করে। ফারুক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখে। ইমা আক্তার হ্যাপি তার স্বামীর আটকের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ফাঁড়িতে গেলে ফাঁড়ির পুলিশ প্রথমে তার কাছে এক লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু ইমা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসআই ইমদাদসহ পুলিশের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে না পারায় তার বিনিময়ে এসআই ইমদাদুলসহ ফাঁড়ির পুলিশরা তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি হলে ফারুককে তারা ছেড়ে দিবে বলে জানায়”।

গণমাধ্যমে নিহতের স্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডিএমপি বলছে, ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে গত জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ বংশাল থানার নাজিমউদ্দিন রোডে নিয়মিত চেকপোষ্টে তল্লাশির সময় ফারুক হোসেনকে ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে কায়েৎটুলি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আসামিকে নিরাপদে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি আসতে দেড়ি হওয়ায় কায়েৎটুলি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফাঁড়ির সামনের আগামাছি লেনের ৫০/১ বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, জানুয়ারির ১২ তারিখ রাত ৯টা ২২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এসআই ইমদাদুল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বের হন। অপরদিকে আসামীর স্ত্রী ইমা আক্তার ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে ৪০ সেকেন্ডের সময়। আসামীর স্ত্রী ইমা আক্তার ফাঁড়ি থেকে বের হন রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে ১০ সেকেন্ডের সময়। পুনঃরায় এসআই ইমদাদুল হক ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত্র ১০ টা ২৮ মিনিটের সময়। সুতারং এসআই ইমদাদুল হকের সঙ্গে আসামীর স্ত্রীর কোন প্রকার দেখা হয় নি। এছাড়া ইমা আক্তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসআই ইমদাদুল হকের সঙ্গে ইমার ফোনেও কোন ধরনের যোগাযোগ হয় নি। সুতারং কোন পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে আসামীকে শারীরিক নির্যাতন কিংবা তার কাছ থেকে টাকা দাবি করা এবং কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে নি।

গণমাধ্যম ইমার বক্তব্যে দাবি করেছেন, তার স্বামী ফারুক হোসেনকে বংশাল থানা হাজতে নেওয়ার পরেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১২ জানুয়ারি কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে ফারুককে সুস্থ্য শরীরে বংশাল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়। থানা হাজতে প্রবেশ ও পরের দিন আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া পর্যন্ত সময়ের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামীর সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্যের নির্যাতনের চিত্র পাওয়া যায়নি। আসামীকে হাজতখানার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আচরন করতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে ১৩ জানুয়ারি আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের হাজতখানায় পাঠানো করা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত আসামীর জামিন না মঞ্জুর করে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানেও আসামি ফারুকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে কোন প্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় নি। আঘাতের চিহ্ন থাকলে যথাযথ কারণ ছাড়া ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কারাগার কখনও আসামী গ্রহণ করে না। ফলে এই থেকে প্রমানিত হয় যে, আসামী ফারুককে কায়েৎটুলি ফাঁড়ি থেকে বংশাল থানায় এবং বংশাল থানা থেকে আদালতে সম্পূর্ন সুস্থ্য অবস্থায় পাঠানো হয়।

গণমাধ্যমে ইমা আক্তার আরও দাবি করেন ফাঁড়ি থেকে ঘটনার দিন রাতে বংশাল থানায় তিনি তার দুই বছরের শিশু সন্তানসহ গিয়ে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিস) মো. মইনুল ইসলামের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। অথচ বংশাল থানার অফিসার ওসি মইনুল ১২ তারিখ বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা নগর থানার কাফরুল এলাকায় অবস্থান করছিলেন।

ডিএমপি আরও জানিয়েছে, ১৩ তারিখ কারাগারে পাঠানো পর ১৪ জানুয়ারি ফারুক কারাগারে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এই ঘটনায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহকারী সার্জন ডাক্তার তানভির স্বাক্ষরিত এক প্রেসক্রিপসনে অসামীর অসুস্থতার কারন সম্পর্কে মাদকাসক্তি ও ব্লাড প্রেসার লো (৮০/৫০) থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পায়রা চৌধুরী মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং তাতে মৃতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার ফাহমিদা নার্গিস ময়না তদন্ত সম্পূর্ন করেন এবং মৃত দেহের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ফাহামিদা নার্গিস স্বাক্ষরিত প্রাথমিক ময়না তদন্ত রিপোর্টে মৃত দেহের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও রোগ অথবা যখমের বিস্তারিত বিবরণ কলামে উল্লেখ করেন “ফাইব্রোটিক পরিবর্তনের উপস্থিতি সহ হার্ট বড় পাওয়া গেছে” পূর্নাঙ্গ ময়না তদন্ত রিপোর্ট ভিসেরা পরীক্ষা শেষে প্রদান করা হবে।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ