
বান্ধবীর ডাকে সাড়া দিয়ে খুন হয় হাজারীবাগ এলাকায় বসবাসরত একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী সামিয়া আক্তার স্নেহা। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৩ সালের ৫ জুন। এ ঘটনায় হত্যাকারী রায়হান গ্রেফতার হলেও এখন পর্যন্ত মূল পরিকল্পনাকারী রয়ে গেছে ধরাছোয়ার বাইরে।
এঘটনায় জড়িত স্নেহার বান্ধবী মূল পরিকল্পনাকারী শায়লা আক্তার ও তার মা কবিতাসহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত কলেজ ছাত্রীর পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে স্নেহার মা নাজনীন নাহার লাবনী বলেন,স্নেহার বান্ধবী শায়লা সিকদার স্নেহাকে শায়লার আরেক বন্ধু তাহসিনদের বাসার ছাদে নিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত শায়লার বন্ধু রায়হানের কাছে স্নেহাকে রেখে শায়লা, তাহসিন, জাবেদ সেখান থেকে চলে যায়। পরে স্নেহার আইসিটি বই নিয়ে তারা সেখান থেকে ফিরে আসে। এসব তথ্য পাওয়া যায় তাদের মোবাইল এবং ম্যাসেঞ্জারে। প্রতিদিন বিকেলে কোচিং-এ যেতো এবং কোচিং শেষে বাসায় ফিরে আসতো স্নেহা। আর প্রতিদিনের মতো গত ২০২৩ সালের ৫ই জুন বিকেলে কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় স্নেহা। কোচিং শেষে রাত ৮টার পরে বাসায় ফিরে না আসায় আমার মা শাহিনুর আমার মেয়েকে মোবাইলে একাধিকবার কল করে। কিন্তু তার মোবাইলে রিং হলেও তা রিসিভ না করে বার বার কেটে দেওয়া হয়। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে আমার মোবাইলে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে কল করে জানানো হয় “আপনার মেয়ের নাম কি স্নেহা? তখন আমি বলি, হ্যাঁ। তখন ঐ ব্যক্তি বলে যে, আপনার মেয়ে অটোরিক্সা থেকে পরে ব্যথা পেয়েছে। আপনি একা সিকদার মেডিকেলে আসেন। তখন আমি ঐ ব্যক্তিকে বললাম, আমি একা আসবো কেন? ওর বাবা আছে, মামা-মামী আছে, নানা-নানী আছে। আমি সবাইকে নিয়ে আসবো। আমি উক্ত খবর পাওয়ার পর আমার মা শাহিনুরকে দ্রুত খবরটি জানাই এবং জলদি সিকদার মেডিকেলে যেতে বলি। তখন আমার মা আমার মেয়ের ফোনে কল করলে অজ্ঞাতনামা ঐ ব্যক্তি ফোন ধরে বলে যে, আমরা একটি এ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে আছি। আমার মা সিকদার মেডিকেলের যে রাস্তাটি আছে সেখানে এ্যাম্বুলেন্স দেখে দাঁড়াতে বলে। থামানোর পর স্নেহাকে মুমুর্ষ অবস্থায় দেখে কান্নাকাটি করতে গেলে আমার মাকে ঐ এ্যাম্বুলেন্স তুলে শ্যামলী নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আমার মাকে কল করি এবং আমার মা আমাকে ঐ হাসপাতালে যেতে বলে। এ সময় আমার ছোট ভাই, ছোট ভাইয়ের বউ ও আমার বাবা ও স্বামীসহ আমরা সবাই শ্যামলী নিউরোসাইন্স হাসপাতালে যাই।
হাসপাতালে জরুরী বিভাগে গিয়ে আমার মেয়েকে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। এ সময় সেখানকার জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আমাদের জানায় যে, আমার মেয়ে হাসপাতালে আনার অনেক আগেই মারা গেছে। পরে আমার মেয়েকে দেখি কপালের ডান পাশে আঘাতের ফুলে ওঠার চিহ্ন, নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার এবং মুখ থেকে লালা বের হচ্ছিল এবং ডান কাঁধ অনেক ফুলা ছিল।
এ বিষয়ে সকল তথ্য প্রমান দিলেও মামলা তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসছে না। এখন আমার একমাত্র মেয়ে স্নেহার হত্যাকান্ডটির তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। তাই আমি মামলাটির সুষ্টু ও সঠিক তদন্ত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কী দোষ ছিল আমার মেয়ের? কেন হত্যা করা হলো? বর্তমানে মামলাটির তদন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)-তে তদন্তাধীন। এমতাবস্থায়, মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতার করে মামলার মূল রহস্য উৎঘাটন করে ন্যায় বিচারের দাবী করছি।
উল্লেখ্য, মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডি.এম.পি কমিশনারের দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সামিয়া আক্তার স্নেহা খুনের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের সবাইকে গ্রেফতারপূর্বক ন্যায় বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ দাবী করেন স্হোর মা নাজনীন নাহার লাবনী।
ডিআই/এসকে