
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলাতে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি জেলে রয়েছে। তার মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩৯ হাজারের বেশি। রায়পুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায় রায়পুর উপজেলায় তালিকাভুক্ত জেলে রয়েছে ৬ হাজার ৪ শত। তাদের মধ্যে চলতি ২২ দিনের এই মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে সরকারি সহায়তার চাল পেয়েছেন ৫ হাজার ৮ শত জন।
জেলার রায়পুর উপজেলার ২নং উত্তর চরবংশি ইউনিয়নের নাইয়া বাড়ির জেলে শাজাহান বলেন, ” আমরা এবছর যে পরিমাণ ইলিশের আশা করছিলাম সে তুলনায় ইলিশ অনেক কম পড়েছে। এ বছর সাগরে ইলিশ কম পড়ায় আমাদের ভাগ্যে দুঃখের ভাঁজ পড়েছে। আমরা ভাগীদাররা অনেক টাকা দাদন নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। ইলিশ কম পড়ায় আমরা দাদন এবং এনজিও থেকে নেওয়া লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। এখন আমরা অনেক ঋণী। আমি মহাজন থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সামুদ্রে ইলিশ ধরতে যাই। ইলিশ কম পড়ায় এখন অনেক টাকা ঋণী আছি। এখন অভিযানে বেকার জীবন কাটাচ্ছি। বর্তমান এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে তিন বেলা ভাত খেয়ে থাকাটাই কষ্টকর হচ্ছে। কী করে জীবন সংসার পরিচালনা করব তা ভেবে পাচ্ছি না। আমার মতো অনেক জেলেই মহাজন থেকে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা দাদন নিয়েছে কেউ কেউ আবার বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিল। মাছ কম পড়ায় তারা সবাই এখন ঋণের বেড়াজালে বন্দী।
এছারও নাসির বেপারী, নুরনবী হাওলাদার সহ কয়েকজন জেলে বলেন, আমাদের মতো ছোট খাটো জেলেরাও ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বা তার থেকেও বেশি দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। ইলিশ কম পড়ায় আমরা জেলেরা হতাশ। আমরা কেহ-ই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। এখন ঋণের বেড়াজালে বন্দী হয়ে অভিযান সময়টাতে বেকার জীবন কাটাচ্ছি। পরিবার পরিজন, বাচ্চাদের নিয়ে জীবন সংসার পরিচালনা করা নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু দামের বাজারে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা। সরকার আমাদের জন্য যে সহায়তা দিচ্ছে তা অতি নগন্য। এদিয়ে একটা সংসারে বর্তমান বাজারে কিছুই হয়না। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তিনি যে আমাদের মতো অসহায় জেলেদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, তিনি যেন আমাদের মতো অসহায় জেলেদের জন্য অলাদা একটি ব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে সুদ বিহীন লোনের ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে আমাদেরকে আর রক্তচোষা মহাজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুদের শর্তে দাদন নিতে হবেনা।
এ বিষয়ে প্রান্তিক জেলে প্রতিনিধি মোস্তফা বেপারী বলেন, এ বছর সাগরে ইলিশ কম পড়ায় আমাদের জেলেরা ঋণের বেড়াজালে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ১৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি দাদন বা এনজিও থেকে লোন নিয়ে সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিল জেলেরা। ইলিশ কম পড়ায় এখন তারা হতাশ। তাদের সকল স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রক্তচোষা মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে অনেক জেলেই এখন দেউলিয়ার পথে। প্রভাবশালী মহাজনরা জেলেদের কে দাদন দিয়ে বিনিময়ে জেলেরা যে ইলিশ পায় তার ন্যায্য মূল্য দেয়না। একশত টাকার ইলিশ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় দাদন দেওয়া মহাজনদের কাছে বিক্রি করতে হয়। ফলে জেলেরা সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হয়।জেলেদের এ মহাজনদের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই মাত্র উপায় আছে তা হলো, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি জেলেদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা ব্যাংক স্থাপন করে সেই ব্যাংক থেকে জেলেদের জন্য সম্পূর্ণ সুদ বিহীন লোনের ব্যবস্থা করেন। তাহলে জেলেরা সঠিক দামে ইলিশ বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারবে।
এবিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ” জেলেদের প্রস্তাবটি খুব ভালো। বিষয়টি নিয়ে আমি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। যদি তাদের অনুমতি পাওয়া যায় তাহলে এটা করা সম্ভব হবে।