নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চার্জশিট নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন কর্মকর্তা ঢাকায় সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন কর্মকর্তা কর্মরত ও একজন এলপিআরে থাকা কর্মকর্তা।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের মেস-এ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান।
মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান বলেন, গত ৮ অক্টোবর আইসিটিত প্রথম দুইটা চার্জশিট জমা পরে। এরপর তৃতীয় আরেকটা চার্জশিট জমা পরে। এই সংবাদটি আসা শুরু করেছে বেলা ১১ টা থেকে ১ টার মধ্যে। আমারা টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চার্জশিট জমা পরেছে এবং ট্রাইব্যুনাল এক্সেপটেড হয়েছে। চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটা ছিলো গুম সংক্রান্ত যারা তখন ডিজিএফআই এ কর্মরত ছিলো তাদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আরেকটা ছিলো র্যাবের টিএফআই নিয়ে আর আরেকটা ছিলো ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনা নিয়ে। এরপর সাথে সাথে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেলো। গ্রেফতারি পরোয়ানার পর আইজিপির কাছে চলে যায় নিয়ম অনুযায়ী এবং ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা আমরা পায়নি। চার্জশিটে প্রায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। এর মধ্যে অবসরে আছে ৯ জন কর্মকর্তা, এলপিআরে আছে ১ জন কর্মকর্তা ও কর্মরত আছেন ১৫ জন। যারা অবসরে চলে গেছেন তাদের প্রতি আমাদের সেনা আইন ঐভাবে খাটে না।
তিনি বলেন, তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংবিধান স্বীকৃতি বাংলাদেশের সকল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ তারিখে কর্মরত ১৫ ও এলপিআরে থাকা ১ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য একটা আদেশ সংযুক্তি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদেশে তাদের বলা হয়েছে ৯ তারিখে তারা যেন ঢাকা সেনানিবাসে সেনা হেফাজতে চলে আসে। আমরা কিন্তু এখনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পায়নি বা পুলিশও আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তারপরও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে স্বপ্ননোদিত হয়ে এসব কর্মকর্তাদের হেফাজতে আসার জন্য আদেশ দিয়ে দেয়।
মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এরকম প্র্যাকটিস করে। এটার মতো না হলেও এরকম কিংবা অনেক সেনসিটিভ কেসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫৪ বছর পার করে এসেছে। যাদের নামে অভিযোগ উঠে প্রথমে তাদেরকে আমরা হেফাজতে নিয়ে নেই। তখন বিভিন্ন কোর্ট মার্শাল হয় কোর্ট মার্শালের রায় অনুযায়ী তখন বিচারের রায় অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা যাদেরকে হেফাজতে আসতে বলেছি তাদের মধ্যে সবাই রেসপন্স করেছে কিন্তু এর মধ্যে শুধু একজন রেসপন্স করেননি। ওই একজন কর্মকর্তা ৯ তারিখ পর্যন্ত কোনো রেসপন্স করেননি। পরে ১০ তারিখে আমরা তার সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করি এবং তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। আমরা জানতে পারি উনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন একজন আইনজীবী সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আর বাসায় ফেরত আসেননি। তারপর তার সঙ্গে তার পরিবারেরও মোবাইল ফোনও কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি। তিনি হলেন মেজর জেনারেল কবির।
তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাকে ইলিগ্যাল এবসেন্ট হিসেবে ঘোষনা করি। এরপর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আমরা আরো কিছু অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করি গত ১০ অক্টোবর। এ বিষয়ে আমরা আরো কিছু কাজ করেছি। সাথে সাথে আমরা ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে আমরা বলেছি তোমরা যে যেখানে আছো স্থল বন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে যেন উনি অবৈধভাবে দেশের বাইরে না যেত পারে। উনার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনাতেও আমরা লোক পাঠিয়েছি। উনি দেশের বাইরে চলে যেতে পারে এ বিষয় মাথায় রেখেও আমরা খোঁজ নিয়েছি। উনি যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারে সেজন্য আমি নিজে ডিজি ডিজিএফআই, ডিজি এনএসআই ও ডিজি বিজিবির সঙ্গে কথা বলেছি।