
থানার ওসির অতি উৎসাহি মনোভাবের কারনে একটি রাজনৈতিক মামলায় এজাহার নামীয় আসামি না হয়েও গ্রেফতারের পর বেলজিয়াম প্রবাসী সুনামগঞ্জের বয়োবৃদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ অবস্থায় কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন।
নিহতের নাম রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রাইজুল (৭৪)। তিনি জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পুর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে অসুস্থ্য অবস্থায় কারান্তরীন থাকার পর বুধবার রাতে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রিয়াজুল ইসলামের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাতিজা আবু বক্কর। তিনি জানান,বুধবার রাত ১০টা ২০ মিনিটের সময় চাচা রিয়াজুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশী হেফাজতে রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা জঠিল রোগে ভুগছিলেন।
বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের তত্ত্ববধায়ক মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, কারাধ্যক্ষ আবু সালাম তালুকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, রিয়াজুল কারাগারে ছিলেন, অসুস্থ্য হলে তাকে সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিক্রাল কলেজ হাসপাতালেঅ প্রেরেণ করা হয়, শুনেছি তিনি মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম আলী জানান, থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রিয়াজুল ইসলামকে গত ৩০ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ, তবে তিনি এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন না, মামলার তদন্তকারি অফিসার তদন্তে ওই মামলায় তার সম্পুক্ততা পেয়ে গ্রেফতার করে। পরে আদালতে হাজির করলে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রিয়াজুলের মৃত্যুর কোনো খবর জানেন না বলেন জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত রিয়াজুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রিয়াজুল ইসলাম জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। দীর্ঘদিন বেলজিয়ামে ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নিহতের ভাতিজা আবু বক্কর বলেন, আমার বয়োবৃদ্ধ চাচার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। কারও সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি বাড়িতেই থাকতেন। ঈদের আগের দিন ইফতারের মিনিট দশেক আগে তাঁকে বাড়ি থেকে মোটা অংকের দাবিকৃত ঘুস না দেয়ার কারনে থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
আবু বক্কর বলেন, গ্রেফতারকালীন সময়ে তিনি (রিয়াজুল) অসুস্থ ছিলেন। তিনি প্রতিদিবারাত্রী ২২টি ওষুধ সেবন করেন। পুলিশকে সব দেখানোর পর তারা টলেনি।
আবু বক্কর জানান, ৪ এপ্রিল তাঁরা জানতে পারেন, কারাগারে তিনি গুরুতর অসুস্থ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ঈদের পরদিন ঘটনা হলেও কারাগার থেকে জানানো হয়েছে রক্তক্ষরণের তিন দিন পর। এরপর অবস্থার অবনতি হলে কারাগার থেকে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। মঙ্গলবার তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এরপর বুধবার রাতে তিনি মারা গেলেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আবু বক্কর গণমাধ্যমকে বলেন, থানার ওসির নির্দেশে ‘পুলিশ নিরপরাধ, অসুস্থ মানুষটাকে কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করেছে। এরপর হাসপাতালে আমরা বারবার বলেছি, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য, আমাদের সব সামর্থ্য আছে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেনি।’
,সুনামগঞ্জ-১০-০৪-২৫