
‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই বর্ষায় তারা ডিএনসিসির প্রতিটি এলাকায় গিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মানুষকে সচেতন করবে। এছাড়াও ডিএনসিসির মশক কর্মীদের নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কাজে তদারকি বাড়ানো হবে। কোন কর্মীর অবহেলা পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল ) বিকালে রাজধানীর উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ডিএনসিসির অঞ্চল-০১ এর অন্তর্গত সব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সাথে গণশুনানিতে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও বর্তমানে যেসব মশার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো কতটা কার্যকরী তা ল্যাবে আরও পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ডিএনসিসির মশক কর্মীদের কাজ যেন সঠিকভাবে তদারকি হয় সেজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার সোসাইটি গুলোকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গণশুনানিতে ১ ও ১৭ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বাজার কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও নেতৃবৃন্দ, সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, যুবক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলেই গণশুনানিতে অংশ নিবেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। আজ অঞ্চল-১ এ গণশুনানির মাধ্যমে শুরু হয়েছে, ধারাবাহিকভাবে সব অঞ্চলে হবে।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে নাগরিকরা সরাসরি ডিএনসিসি প্রশাসকের সঙ্গে তাদের অভিযোগ, পরামর্শ ও সেবা সম্পর্কিত বিষয়ে কথা বলেন এবং প্রশ্ন করেন। ডিএনসিসি প্রশাসক সকলের প্রশ্ন শুনেন ও জবাব দেন। এছাড়াও ডিএনসিসির পক্ষ থেকে উপস্থিত সবাইকে একটি ফরম দেওয়া হয়, সবাই যার যার মতামত ও অভিযোগ লিখে জমা দেন।
নগরবাসীর উদ্দেশ্যে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের পাশাপাশি প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। কর্মীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ করি সবাই। কিন্তু আমাদের কর্মীরা কিন্তু সবার বাড়ির ভিতরে গিয়ে ওষুধ দিতে পারে না এটাও সত্যি। তাদেরকে তো বাউন্ডারির বা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না৷ আপনারা সবাই একটু খেয়াল করলেই দেখবেন বেশিরভাগ বাড়ির ভিতরে ও বাউন্ডারিতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র রয়েছে, ময়লা আবর্জনা রয়েছে। অতএব দয়া করে নিজেদের ঘরবাড়ি নিজেরা পরিষ্কার করুন।’
নগরবাসীর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পাচ্ছি কয়েকটি পার্ক ও মাঠে জনসাধারণ সবসময় প্রবেশ করতে পারে না। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছি আজ থেকে ডিএনসিসির মালিকানাধীন সব পার্ক ও মাঠ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোন পার্ক ও মাঠে ডিএনসিসির অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবে না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানীয় কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে মেইনটেন্সের জন্য কমিটি করে দিবে। তারা মাঠ পার্ক দেখভাল করবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
উত্তরখানের এক বাসিন্দা রাস্তার কাজের গতি বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে ডিএনসিসি প্রশাসক জবাবে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই ঘোষণা দিয়েছি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়ন অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে উত্তরখানের প্রধান রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করে দিয়েছি। নতুন ওয়ার্ডে অন্য এলাকার তুলনায় অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে’
নতুন এলাকার এক বাসিন্দা হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জবাবে প্রশাসক বলেন, ‘যদিও দীর্ঘদিন আপনাদের আশানুরূপ সেবা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও প্রদানের ক্ষেত্রে আইন রয়েছে। সেই আইন ভঙ্গ করে কয়েক বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের এখতিয়ার আমার নেই। এটা করলে আইন ভঙ্গ করা হবে এবং এর জন্য ভবিষ্যতে আমি এবং আপনারা বিপদে পড়বো। পরবর্তীতে যিনি দায়িত্বে আসবেন তখন আবার পূর্বের সব বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করতে বাধ্য হবেন। তাই আপনারা নিয়ম অনুযায়ী সব বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স দিবেন, তবে আমার কাছে রিবেটের (কর ছাড়) সুযোগ রয়েছে। রিবেটের জন্য আবেদন করবেন আমরা এখতিয়ার অনুযায়ী সর্বোচ্চটা পাশ করে দিবে এতে গিয়ে আপনাদের হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমান অনেক কমে যাবে। এতে আইন অনুযায়ী একটি সুন্দর সমাধান হবে।’
হকাররা ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে কয়েকজন নাগরিক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় বলেন। জবাবে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘আমরা রোজার মাসে মানবিক কারনে অভিযান বন্ধ রেখেছিলাম। আগামী সপ্তাহ থেকে ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে ফুটপাত ও রাস্তায় কোন ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকের কারণে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে এবং দ্রুত এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কয়েকজন নাগরিক। জবাবে প্রশাসক বলেন, ‘প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধে ইতিমধ্যে ডিএমপি ট্র্যাপার (বিশেষ ফাদ) লাগানো শুরু করেছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সাথে ট্র্যাপার নিয়ে কাজ শুরু করেছি, আইডিয়া শেয়ার করেছি। ডিএনসিসির সব মেইন রোডে অটোরিকশা চলাচল বন্ধে দ্রুত ট্র্যাপার লাগানো হবে।’
নতুন এলাকায় খাস জমিতে মাঠ ও পার্ক নির্মাণ করা হবে বলে উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডে অপরিকল্পিত উন্নয়ন শুরু হয়েছিল। যে যার মতো করে ভবন নির্মাণ করেছে। ড্যাপে অনেক জায়গায় খালি দেখানো রয়েছে। রাজউকের সাথে সমন্বয় করে সেগুলো রক্ষা করবো। ড্যাপে নির্ধারিত মাঠ, পার্ক ও খালি জায়গায় কেউ কোন ধরনের অবকাঠামো ভবন নির্মাণ করতে পারবেনা। যেখানে খাস জমি আছে সেখানে আমরা জেলা অফিসের সাথে এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে আলাপ করে মাঠ ও পার্ক করে দিব।’
গণশুনানিতে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, মো. খয়বর রহমান, মো. ছাদেকুর রহমান, মো. জুলকার নায়ন ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ডিআই/এসকে