
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে চা- চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে একই জমিতে চা ও মাল্টা চাষ হচ্ছে। লাভবান হওয়ায় মাল্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। বর্তমানে ওই উপজেলায় মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন মো: জাফর ইকবাল (৩৮) নামের এক চাষি। মাল্টা বিক্রি করে তিনি এখন বেশ লাভবান। তিনি উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের বাংলাবান্ধা গ্রামের তইজ উদ্দীনের ছেলে।
২০১৯ সাল থেকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের বারি মাল্টা-১ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করে। এ সময় আগ্রহী চাষিদের বিনামূল্যে মাল্টা চারাও প্রদান করা হয়। এখন উপজেলার বেশ কয়েক জায়গায় গ্রিন মাল্টার বাগান গড়ে উঠেছে। রসে ভরা এই গ্রিন মাল্টা অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। মাল্টা গাছ সারা বছর ফল দেয়। মাল্টাকে এখন আর বিদেশী ফল বলা যাবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাষ হচ্ছে।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মাল্টা। বড় আকারের হলুদ কমলা- মাল্টা চাষে কৃষি অর্থনীতির বিরাট অবদানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব ফলের বাগান দেখতে আসছেন সাধারণ মানুষ ।
মাল্টা চাষের একাধিক চাষি জানান, একবার মাল্টা গাছের চারা রোপণ করলে এই গাছ বড় হয়ে সারা বছর ফল দেয়। মাল্টা গাছের চারা আর রোপণ করতে হয় না। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলনও বাড়তে থাকে।
জুন ও ফেব্রুয়ারি মাসে বেশি ফল হয় গাছে। ফল গাঢ় সবুজ হয়। বড় আকারের মাল্টা হলদেভাব হলে বুঝা যায় ফলটি পরিপক্ক হয়েছে। বেশি পরিমাণে উৎপাদন পেতে হলে বাগানের চারিদিকে শক্ত ও মজবুত বেষ্টনী দিতে হবে, পরিচর্চা রাখতে হবে সার্বক্ষণিক।
উপজেলা কৃষি অফিস চাষি মো: জাফর ইকবালকে বারি মাল্টা-১ গাছের চারা দেয়। তিনি ২০২১ সালে ১ একর ৫০ শতক জমিতে চার শত চারা রোপন করেন। রোপণের ১ বছর পর মাল্টা ফল ধরতে শরু করে। ওই সময় থেকে তিনি মাল্টা বিক্রিও শুরু করেন। ২০২৪ সালে জাফর ইকবাল প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন বলে জানান। এ বছর যে পরিমাণ ফুল ও ফল এসেছে ৫ লক্ষ টাকার উদ্ধে ফল বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।
গাছ রোপণের পর থেকেই নিয়মিত উপ-সহাকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মোসাদ্দেকুর রহমান খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রথম বছর অতি খরায় গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। পরবর্তীতে বছরে সব ঠিক হয়ে যায়। তার উৎপাদিত মাল্টা শহরে ও গ্রামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
তিরনই হাট ইউনিয়নের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ২৫ শতক জমিতে চা বাগান করি। পরে চা বাগানেই মাল্টা চাষ করেছি। গাছগুলোতে ফল ধরেছে। দু’এক মাসের মধ্যে পরিপক্ব হবে। মাল্টা চাষ করে লাভবান হয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিস একই ইউনিয়নের চাষি মাহবুবুর রহমান রতনকে মাল্টা গাছের চারা প্রদান করেছে। তিনি জানান জাফর ইকবাল ভাইয়ের চা- চাষের পাশাপাশি মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হই। তিনি মাল্টা চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন। এ জন্যই আমি ও মাল্টা চাষ করেছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চা-বাগানের পাশাপাশি একই জমিতে মাল্টা চাষ করতে বাড়ছে চাষিদের। তার মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রায় ২৪ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা। আবহাওয়া মাটি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাতের কারণে এ উপজেলায় বারি-১ জাতের মাল্টার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। চা-সহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে সমন্বিত ফসল হিসেবে মাল্টার বাগান করছে চাষিরা। তেঁতুলিয়া উপজেলায় কাজীবাড়ি, বড়বিল্লাহ, তেলিপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, রওশনপুর, বাংলাবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় চা বাগানে আম ও মাল্টা আবাদ হচ্ছে। চা বাগানে প্রয়োগকৃত সার-কীটনাশকেই একাধিক আবাদ সহজ হওয়ায় সমতল ভূমির বিস্তীর্ণ চা বাগানগুলোতে মাল্টা চাষে মনোযোগ দিয়েছেন চাষিরা।
শহরের একাধিক ফল ব্যবসায়ী জানান, আমরা বাইরে থেকে এনে হলুদ রঙের মাল্টা বিক্রি করি। বিশেষ করে স্থানীয় উৎপাদিত মাল্টা বিক্রি করার চিন্তায় আছি।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের উপ- সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, প্রথমত এ অঞ্চলের মানুষ জানতো না মাল্টা চাষ করা যায় এই সমতল ভুমিতে। মাল্টা চাষ করার জন্য একটা সময় মানুষকে অনেক উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তারপরেও মানুষজন শুনতো না। এখন মাল্টা চাষ করার জন্য ব্যাপক আগ্রহ কৃষকদের । চা- বাগানের চা পাতার দাম কম থাকার পরে আমি উদ্বুদ্ধ করি মাল্টা চাষ করতে। এটা চাষ করে অনেক কৃষক সফলতা অর্জনেও সক্ষম হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, মাল্টা ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অব-উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় বেশি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকার মতো এ উপজেলায় মাল্টা চাষ হচ্ছে। সমতল ভূমিতে চায়ের পাশাপাশি মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার প্রায় ২৪ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মাল্টা। তা সিংহভাগ আবাদ হচ্ছে চা বাগানে। চায়ের পাশাপাশি মাল্টা চাষ কৃষকদের দ্বিগুণ আয়ের সুযোগ তৈরি করেছে। মাল্টা চাষে আগ্রহী চাষিদের সকল প্রকার সহায়তা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।