ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত : আটক ২
নান্দাইলে সালিশের আহবায়কের বাড়ি-ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট , থানায় অভিযোগ দায়ের
আমতলীতে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল
নান্দাইলে এস.আর.বি ইটভাটায় জিম্মি থাকা ২০ জন শ্রমিককে উদ্ধার: আটক ২
কলমাকান্দায় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামালের পিতার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
আমতলীতে শত্রুতার জেরে পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ
মোরেলগঞ্জে জামায়াত ইসলামীর আয়োজনে ঈদ পুর্নমিলনী সভা
নলতায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
মার্চে ২৯৮ ভুল তথ্য প্রচার, বাদ যাননি ড.ইউনূস-সেনাপ্রধান
সেবার আলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঈদ পুনর্মিলনী ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান
সাপাহারে ভ্রাম্যমান আদালতের ১৬ টি মামলা-জরিমানা আদায়
বোয়ালমারীতে ধর্ষণ মামলার আসামী গ্রেপ্তার
মাধবপুরে স্ত্রী হত্যার আসামি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার
বিএনপির আইন সম্পাদকের বাবার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অ্যাওয়ার্ড দিলেন গাইয়ারচর ইসলামিক ইয়ং লিডার্স প্লাটফর্ম

চরমপন্থী নেতা আতিয়ার হত্যা: উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা

নানা জল্পনা কল্পনার অবসান শেষে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ২দিন পর নিহত কুষ্টিয়ায় চরমপন্থী নেতা আতিয়ার খাঁ হত্যাকাদের ঘটনায় অবশেষে তার ছেলে মো. আছাদুজ্জামান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। উক্ত মামলায় ১৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, ১। রানা (৪০), ২। আজাদ (৪৫), ৩। আমজেদ (৪৫), সর্ব পিতাঃ মৃত আজিবর রহমান, ৪। জামির (৫৫), ৫। সাবু (৫০), উভয় পিতাঃ মৃত রব্বান মন্ডল, ৬। আব্দুল্লাহ (২০), পিতাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর মৃধা, ৭। শরিফ (৯৫), পিতাঃ আকমল, ৮। আলমগীর (৩৩), পিতাঃ শাহজাহান, ৯। কৌশিক (২৩), পিতাঃ মৃত জহির মুখ্য, ১০। জসিম (৪২), ১১। নাজমুল (৫০), উভয় পিতা: মৃত শুকুর মালিখা, ১২। মুক্তার (৫৮), ১৩। নূর হক (৫৫), উভয় পিতাঃ জানিল মন্ডল, ১৪। উজ্জল (৩২), পিতা: মোঃ আনছের মন্ডল, ১৫। রাজিব মোয়া (৪২), পিতাঃ মৃত আজিবর মোল্ল্যা, সর্বসাং-জোতপাড়া, ১৬। সাইদুল (৪৫), পিতাঃ মোঃ আকমল হোসেন, ১৭। নবিরুল (৪৫), পিতাঃ মৃত আমজাদ হোসেন, উভয় সাং-কাঞ্চনপুর, ১৮। শামীম (৪২), পিতা: মৃত রফিকুল, সাং-শৈলগাড়ী, ১৯। আইজুদ্দীন মল্লিক (৪২), পিতা-মৃত সামছুদ্দীন ওরফে সদ্দি মল্লিক, সাং-জোতপাড়া, সর্ব থানা ও জেলাঃ কুষ্টিয়া।

এদিকে আতিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার জানিয়েছিলেন, কে বা কারা কখন কিভাবে আতিয়ারকে হত্যা করেছে সে সম্পর্কে তারা কেউ অবগত নন। জমি সংক্রান্ত জেরে তাকে হত্যা করা হতে পারে। সে সময় ঘটনা সম্পর্কে না জানলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে এজাহারভুক্ত এক আসামি আছাদুজ্জামান ও তার বাবা আতিয়ারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। নিহতের পরিবারের একেক সময় একেক বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, আতিয়ার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছে। এ যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা। এর আগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল আনুমানিক ৭টার সময় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া ফসলের মাঠে রক্তাক্ত একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরবর্তীতে পুলিশকে খবর দেয় তারা। নিহত আতিয়ার ইবি থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মৃত ঝড়ু খাঁর ছেলে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলের সক্রিয় নেতা ছিলেন আতিয়ার। ৯০ দশকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে জাসদ গণবাহিনীতে নাম লেখান। সবশেষ তিনি বদর বাহিনীর সাথে যুক্ত ছিলেন। এই আতিয়ারের অত্যাচারে এলাকাবাসীরা অতিষ্ট ছিল। হত্যা, চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে যারা আত্মসমর্পণ করেছিলেন তাদের মধ্যে আতিয়ার রহমান ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর বেশ কয়েকবছর তিনি স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করার ভান ধরে থাকলেও চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সাথে তার গভীর সখ্যতা ছিল। জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হত্যাকায়ে জড়িত ছিলেন আতিয়ার। তৎকালীন সময়ে চরমপন্থী সংগঠনের হয়ে একাধিক হত্যাকাডের মিশনে অংশ নিতেন এই আতিয়ার।

তারা আরো জানান, ক্রসফায়ারে একের পর এক সন্ত্রাসী মারা পরতে শুরু করলে গাঁ ঢাকা দেন আতিয়ার। ঢাকায় গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন তিনি। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ ঢাকায় থাকেন তিনি। মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে ঘুরে ফিরে চলে যেতেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় ফিরে আসেন তিনি। এলাকায় এসে বদর বাহিনীর সাথে আবারো জড়িয়ে পরেন আতিয়ার। বাহিনীর অবস্থান শক্ত করতে পুরাদমে দৌড় ঝাপ শুরু করেন। এর আগে গত ইউপি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে দেখা যায় তাকে। ইতিপূর্বে এই বদর বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের দলীয় ৩ জনকে হত্যা করেছে। ঐ হত্যাকান্ডেও আতিয়ারও জড়িত ছিলেন।

এলাকাবাসীরা বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে আতিয়ারের পরিবারের দ্বন্দ্ব ছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার মতো তেমন বিষয় ছিলোনা। একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আতিয়ারকে হত্যা করতে পারে। যেহেতু হত্যাকান্ডের কোন প্রত্যক্ষদর্শী নেই সেহেতু উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কারের নাম বলার সুযোগ নেই। তবে গত কিছুদিন ধরে আতিয়ারের সাথে বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠভাবে চলাচল করতো। তাদেরকে সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না। হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোন প্রত্যক্ষদর্শী না থাকার পরও একাধিক মানুষের নামোল্লেখ করে নিহতের পরিবারের মামলা করা সন্দেহজনক ব্যাপার। সেজন্য মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার জন্য প্রয়োজন। যাতে করে কোন নিরাপরাব ব্যক্তি না ফেঁসে যায়। এছাড়া সম্প্রতি এলাকায় ফিওে আসার পর আতিয়ারের সাথে আনারুল, মনির, মুসা, লতিফ, দুলাল, মিজানুরের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। খেতে, ঘুমাতে, উঠতে, বসতে, চলতে আতিয়ারকে তাদের দেখা যেত।

এজাহারের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারী আতিয়ার হত্যা মামলার বাদী আছাদুজ্জামান কুষ্টিয়া মডেল থানায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি দায়ের করার পর উপরে উল্লেখিত এজাহারভুক্ত আসামীগন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে মামলা উত্তোলনের জন্য তাকে ও তার পিতাকে হত্যা সহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদান করে আসছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের দিন রাত আনুমানিক ৭.৪৫ মিনিটের সময় আসামীগন দেশীয় তৈরী বিভিন্ন অস্ত্র হাসুয়া, রামদা, চাইনিজ কুড়াল নিয়ে গঞ্জের মোড়ে অবস্থানকালে আছাদুজ্জামান গেলে ১ নং আসামী রানা বলেন, তোকে ও তোর পিতাকে মামলা করার সাধ মিটাইয়া দেব। তখন বাদী কোন কথা না বলে চুল থাকেন। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ৯টার সময় সাক্ষী ১। মোঃ আনারুল মোল্লা (৪৫), পিতাঃ মৃত ওয়াদুদ মোল্লা, ২। মনির মোল্লা, পিতাঃ মৃত আবুল মোয়া, ৩। মোঃ দুলাল হোসেন, পিত। মৃত মহন শেখ, ৪। মিজানুর মৃধা, পিতাঃ মৃত সামছদ্দিন মৃধা, সর্ব সা: জোতপাড়া, থানা+জেলাঃ কুষ্টিয়া সাক্ষীগনের মুখে আমি শুনতে পারেন, উপরোক্ত আসামীগন তার পিতাকে ধরে নিয়ে জোতপাড়া গঞ্জের মোড়ের পূর্ব দিকে গেছে। এই সংবাদ পাওয়ার পর সাক্ষীদের নিয়ে বাদী তার পিতার খোজ করতে থাকে। সারা রাত খোজাখুজি করে তার পিতার কোন সন্ধান পাননি। এরপর পরদিন সকাল সাড়ে সাতটার সময় লোক মুখে জানতে পারেন, কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন জোতপাড়া গ্রামস্থ টুটুলের মালিকানাধীন জমিতে একটি লাশ পাওয়া গেছে। তখন তারা গিয়ে সনাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হত্যার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ।

শেয়ার করুনঃ