
সুন্দরবনের গহীন দুবলার চরে আধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব।
র্যাব বলছে, দুবলার চরে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে দুবলার চরের মৎস্যজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, প্রতিবছর রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটক ও সাধারণ মানুষজনের বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সংকট দূর হবে। ফলে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
রবিবার এই প্লান্টের উদ্ভোধনী ফলক উম্মোচন করেন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে র্যাবই সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। এবার সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এবার দুবলার চরবাসীদের জন্য বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করল র্যাব।’’ স্থাপিত এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর মাধ্যমে এখন থেকে পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ লাখ লাখ মৎস পেশাজীবীরা বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করবেন।
দুবলার চরে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় র্যাবের তত্তাবধানে সুন্দরবনের দুবলার চরে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। দুবলার চর এলাকার পানিতে অতিমাত্রার লবণাক্ততার কারণে পানির লেয়ার অনেক নীচু হওয়ায় দক্ষ প্রকৌশলীদের সহায়তা ও কয়েক বারের প্রচেষ্টায় এই পানি পরিশোধনাগার স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। উন্নত মানের এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে চব্বিশ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করা যাবে যা ১৫টি ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
র্যাবের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে দস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন। ফলে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় চুরি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ অনেকাংশে কমে যায়। ফলশ্রুতিতে, সেখানে মাওয়ালি, বাওয়ালি, বনজীবী, মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নির্ভয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। এছাড়াও সুন্দরবনের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পূর্বের তুলনায় দেশী-বিদেশী পর্যটকের সংখ্যাও বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনের দুবলার চর মৎস্য আহরণের কেন্দ্রবিন্দু, হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাস উৎসব এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত হওয়ায় সেখানে প্রতি বছর কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। দুবলার চরে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় মাওয়ালি, বাওয়ালি, বনজীবী, মৎসজীবীসহ দুবলার চরে আগত পর্যটকরা প্রায়ঃশই চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে থাকেন। জনবিচ্ছিন্ন বালুময় এ চরে ছোট ছোট কুপ খনন করে সেখান থেকে পানি তুলে স্থানীয়দের ব্যবহার করতে হয় যা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। দুবলার চর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতা থাকায় র্যাব উদ্যোগী হয়ে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে।
উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স), পরিচালক লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং, পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ উইং এবং র্যাব-৬ এর অধিনায়কসহ র্যাবের অন্যান্য কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকতা, জনপ্রতিনিধি, রাস মেলার পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ দুবলারচরের বিভন্ন পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে, প্লান্ট উদ্ভোধন শেষে র্যাব মহাপরিচালক মহতী এই কার্যক্রমের সফলতা কামনায় মোনাজাত করেন এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংলগ্ন স্থানে বৃক্ষরোপন করেন।
এ দিকে দুবলার চরে রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও স্থানীয়রা বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হতো। এ প্রেক্ষিতে রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী, পর্যটকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও স্থানীয়দের চিকিৎসা সহায়তা করদে র্যাবের পক্ষ থেকে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মেডিকেল ক্যাম্পে পুণ্যার্থী, পর্যটক, বিভিন্ন পেশাজীবিসহ দুবলার চরের স্থানীয়দেরকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা, ঔষধ সরবরাহ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন র্যাব মহাপরিচালক। পরবর্তীতে র্যাব মহাপরিচালক দুবলার চরে নির্মণাধীন র্যাব ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
ডিআই/এসকে