
খুলনার কয়রায় সাংবাদিক সিরাজুদ্দৌলা লিংকনের স্ত্রী-সন্তানকে মারধর ও বাড়ি লুটপাটের ঘটনার নামে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কয়রার ছাত্রপ্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন রাতুলের নামে অপবাদ দেয়া হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্যেশ্য প্রণোদিত প্রতিবেদন করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কয়রা উপজেলার ছাত্রপ্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন রাতুল।
এদিকে, ২৩ অক্টোবরের ঘটনার বিষয়ে কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিক লিংকনের বাড়িতে হামলা করে স্ত্রী-সন্তানকে মারধরের পাশাপাশি আসবাবপত্র ভাংচুর ও স্বর্ণালংকারসহ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কয়রা নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিমাংশা করা হয়।
কয়রা নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কার্যালয়ের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোঃ ইয়াকুব বলেন, ঘটনার কিছুটা সত্য আর কিছুটা সাজানো। উভয়পক্ষকে ডেকে মিমাংশা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু পেয়েছি, পূর্বের কিছু কর্মকান্ডের কারণে ওই সাংবাদিকের উপর ছাত্র-জনতার ক্ষোভ ছিল। ঘটনার দিন মিটিং শেষে কয়েকজন লিংকনের বাড়িতে যেয়ে তাকে খুঁজেছেন। তাকে না পেয়ে একপর্যায়ে ঘরের বাইরে থাকা একটি চেয়ারে লাথি দিয়ে ফেলে দেয় এবং চলে আসে। ওই সময় ঘরের ভিতরে যারা ছিলেন তারা ব্যাপক ভয় পায়। তবে ঘরের ভিতরের ভাংচুর, লুটপাট ও স্ত্রী-সন্তানকে মারধর রিয়েল না। এছাড়া রাতুল ঘটনাস্থলে ছিল না। তবে তাদের ব্যানারের কিছু লোকজন সাথে ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাতুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ সাজিয়ে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ২৩ অষ্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ এবং রাষ্ট্রপ্রতি চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে সমাবেশে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমি বক্তব্য রাখি। সেখানে কয়রা থানার কয়েকজন অপ-সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। যারা গত ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী দোসরদের সাথে মিলে জনগনকে হয়রানি করেছে। তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, অন্যায়ভাবে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ওই সময় সাংবাদিক সিরাজুদ্দৌলা লিংকনের কিছু অপকর্ম তুলে ধরে বক্তব্য রাখি। সন্ধ্যার পূর্বে আমরা সকলে বাড়ি চলে আসি। কিন্তু সিরাজুদ্দৌলা লিংকন দাবি করে আমার নেতৃত্বে তার বাড়ি সন্ধ্যায় হামলা ও লুটপাট হয় এবং তার স্ত্রী-সন্তানকে মারধর করা হয়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও উদ্যেশ্যপ্রণোদিত ঘটনা। মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে বিতর্কিত করতে ও তাদের পূর্বের অপকর্ম ঢাকতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের চেষ্টায় লিপ্ত হয়। এছাড়া তার সহকর্মীদের দিয়ে (কয়েকটি পত্রিকার কয়রা প্রতিনিধি) আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা দিয়ে প্রতিবেদন করায়। কোন সত্যতা যাচাই না করে তারাও (কয়েকটি পত্রিকার প্রতিনিধি) আমার বিরুদ্ধে নিউজ করায় আমার মানহানি করেছে। তার তীব্র নিন্দা জানাই।
ছাত্র প্রতিনিধি রাতুল আরও বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। কিন্তু তারা যখন নীতিনৈতিকতার জায়গা থেকে সরে চাটুকারিতা, দলীয় লেজুড়বৃত্তি শুরু করে সংবাদ তৈরি করে তখন সেটা সাংবাদিকতার নামে অপ-সাংবাদিকতা ছাড়া কিছু নয়। তিনি সংবাদ কর্মীদের লেখনির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য তুলে আনার আহবান জানান। এছাড়া তার নামে অপবাদ ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে সাংবাদিক সিরাজুদ্দৌলা লিংকন জানান, কোস্টগার্ডের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মিমাংশা হয়ে গেছে। ঘটনার দিন বিকেলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে রাতুল আমার নামে অপবাদ দেয়। সন্ধ্যার পরে ৮-১০টি মটরসাইকেলে কয়েকজন লোক আমার বাড়ির সামনে যেয়ে হুমকি-ধামকি দেয়। তারা আসার আগে আমি পালিয়ে যাই। পরে বাড়ির গ্রীলে ধাক্কাধাক্কি করে, গ্রীল খুলতে দেরি হওয়ায় আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর গায়ে আঘাত করে। আমার স্ত্রী-সন্তান ব্যাপক ভয় পায়। আতংকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমার ভাগ্নে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তারা আমাদের ঘরে লুটপাট করে।