সাইদ সাজু, তানোর থেকেঃ রাজশাহীর তানোর পৌরসভা টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (টিবিএম) কলেজের (তৎকালীন) সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো একক ক্ষমতা বলে নীতিমালা এবং জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অসিম কুমার সরকারকে পদোন্নতি দিয়ে(ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরবর্তীতে অসিম অধ্যক্ষ হয়েছেন। সম্প্রতি নাশকতার একটি মামলায় অধ্যক্ষ অসিমকে আসামি করা হয়েছে। এবিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দাবি করেছেন অভিভাবক মহল।
স্থানীয়রা জানান, রাজশাহী কলেজ থেকে বাংলায় প্রিভিয়াস করা আছে অসিম সরকারের। কিন্ত্ত অধ্যক্ষ হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করার বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি সহকারি অধ্যক্ষের ৩ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ হবার কোনো সুযোগ নাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, স্থানীয় সাংসদের মতামত ব্যতিত গোপণে অসিমকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) করা হয়েছে।
বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিকতর তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যর সৃস্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবরের সাধারণ সভার উপস্থিতি স্বাক্ষর দেখিয়ে একই বছরের ১১ অক্টোবর অসিম কুমার সরকারকে অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত)দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে এই অনিয়মের প্রতিবাদে পরিচালনা কমিটির তিন সদস্য সভা বয়কট করেছিলেন। একইদিন বছরের ১১ অক্টোবর শনিবার তানোর পৌরসভা কারিগরি কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে। সুত্র জানায়, কলেজের সিনিয়র প্রভাষক মরিয়ম বেগম, কামরুজ্জামান ও জুনিয়র প্রভাষক অসিম কুমার সরকারকে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষের জন্য আবেদন করেছিল।
কিন্তু ইউএনও সাহেব নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে একক ক্ষমতা বলে অসিমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। এবিষয়ে কলেজের জৈষ্ঠ শিক্ষকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছন। অন্যদিকে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার ধকল সামলে উঠতে না পেরে হতাশা ও দুঃখে হার্টএ্যাটাক করে সিনিয়র শিক্ষক কামরুজ্জামান মারা যায় বলে শোনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয়ে পরিচালনা কমিটির সভা আহবান করা হয়। এদিকে কমিটির সদস্য এবং এমপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একক ক্ষমতা বলে জৈষ্ঠতা ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রভাষক অসিম কুমার হালদারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অর্পন করেন।
কিন্ত্ত সভা আহবান করেও কমিটির সদস্যদের মতামত ব্যতিত সভাপতি একক ক্ষমতা বলে অসিমের নাম ঘোষণা করলে এর বিরোধীতা করে কমিটির বিদ্যুৎশাহী সদস্য ও পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো, শিক্ষা অনুরাগী ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াজির হাসান প্রতাপ সরকার এবং এমপির প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি সোনিয়া সরদার সভা বয়কট করেন। কিন্ত্ত তার পরেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একক ক্ষমতা বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অসিমকেই দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক বলেন, কমিটির সদস্য ও এমপির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যদি সভাপতি একক ক্ষমতা বলে সবকিছু করেন তাহলে কমিটির সদস্য ও এমপির প্রতিনিধি রাখার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, এমপির প্রতিনিধিকে অবজ্ঞা করা মানে এমপিকে অবজ্ঞা আর এমপিকে অবজ্ঞা মানে তানোর-গোদাগাড়ীর সকল মানুষকে অবজ্ঞা করা।
সাবেক অধ্যক্ষ ইলিয়াস আলী মৃধা বলেন, এভাবে প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা অনৈতিক, তবে সভাপতি তার ক্ষমতা বলে যদি করেন তাহলে বলার কিছু থাকে না। এবিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও পৌর যবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো জানান, আমরা তিনজন ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর কমিটির সভায় পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম নিয়ম অনুযায়ী যিনি দায়িত্ব পাবেন তাকেই দেয়া হোক।
কিন্তু ইউএনও সাহেব কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অসিম কুমার হালদারকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত অটুট থাকেন। সে জন্য আমরা ওই সভাও বয়কট করেছিলাম এবং ১১ অক্টোবর শনিবারের সভাও বয়কট করেছি। তিনি আরো জানান ইউএনও সাহেব এখানে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন। একজন আইনের কর্মকর্তা হয়েও তিনি আইন মানেন নি এবং আমাদের কোন কথাই তিনি গ্রহণ করেননি।
এবিষয়ে এমপির প্রতিনিধি ও উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার বলেন, আমাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ইউএনও সাহেব একক ক্ষমতা বলে সবকিছু করেছে। এনিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসিম কুমার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অধ্যক্ষের বেতন নিচ্ছেন।
এবিষয়ে ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কলেজ সভাপতি সুশান্ত কুমার মাহাতোর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হয় জুনিয়রকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়ার কারনে তিন সদস্য সব কিছু বয়কট করেছেন, তিনি জানান রেজুলেশনে তাদের স্বাক্ষর আছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজিব সরকার হিরো বলেন, ৭ অক্টোবর সাধারণ সভায় উপস্থিতি স্বাক্ষর করা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয়ে কোন স্বাক্ষর করা হয়নি। তিনি বলেন, গত ১১ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয়ে সভা হয় ওই সভায় তারা কোনো স্বাক্ষর না করে বয়কট করেন।