ঢাকা, বুধবার, ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
পল্লবীতে জুয়ার আসর থেকে ৩ জুয়ারী গ্রেফতার
ঢাকা উ.সিটির সাবেক কাউন্সিলর মুরাদ গ্রেফতার
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
মোহাম্মদপুর সাড়াশি অভিযান,নারীসহ গ্রেফতার ১১
এসএসসির কেন্দ্রের ২০০ গজে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: ডিএমপি
মোহাম্মদপুরে রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার ২
সেনা অভিযান:হাতবোমা ও দেশিও অস্ত্রসহ কব্জি কাটা গ্রুপের ৬ সদস্য গ্রেফতার
বাসা থেকে ১২ বছরের শিশুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ,আটক ১
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ৭২
রাজধানীতে আ. লীগের তিন নেতাকর্মী গ্রেফতার
বোদায় বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস পালিত
৪৭ লক্ষাধিক টাকার বিপুল ইয়াবাসহ গ্রেফতার নারী মাদক কারবারি
১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি
বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম গ্রেফতার
পারিবারিক ঝগড়ার দু’বছর পর খুন,২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার আসামি মাসুদ

মীরপুর গার্লস আইডিয়ালের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ

ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে অনৈতিকভাবে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মীরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানার বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে।

সূত্র বলছে,বহুবিধ অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মিরপুরের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি চক্র পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে রেখেছে।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,ধর্মীয় উৎসব,ভবন সংস্কার, মাঠ সংস্কার,পুরাতন পাখা,লোহার খাঁচা,সিসিটিভি ক্যামরা স্থাপন,জানালার পর্দা,শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, ভুয়া টেন্ডারে আসবাবপত্র বিক্রিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ চক্রের হোতা মীরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ জিনাত ফারহানার এসব অপকর্মের অন্যতম সহযোগী কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আহমেদ উল্লাহ কাসেমী। এ চক্রের অর্থলিপ্সু কর্মকাণ্ডে তারা ক্ষুব্ধ।

জানা গেছে,২০১৬ সালের মার্চ মাসে আর্থিক অনিয়মের জন্য একবার চাকরি হারান জিনাত ফারহানা। এরপর অদৃশ্য খুঁটির জোরে ২০১৭ সালে চাকরি ফিরে পান। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন,প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে যেন জিনাত মধু ভরা মৌচাক পেয়ে গেছেন। বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজের নামে বছরের পর বছর স্কুলের ফাণ্ডের অর্থ নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে ভরেছেন।অবৈধ ও নিম্নমানের গ্রন্থ পাঠ্যভুক্তির বিনিময়ে প্রকাশকদের কাছে থেকে কমিশন আদায়ও ছিল তার আয়ের বড় খাত।

প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আহমদ উল্লাহ কাসেমীর নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই জেলা শিক্ষা অফিসের মিরপুর কার্যালয়ে অভিযোগসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস জমা দেন জাকির হোসেন নামে এক অভিভাবক। এসব ডকুমন্টেস রয়েছে সকালের খবর ২৪ ডটকম এর হাতে।

এর আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক কাসেমীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন স্কুলের  শিক্ষিকা। এ নিয়ে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অভিযোগের কপি ও কয়েকটি ভিডিও রয়েছে সকালের খবর ২৪ ডটকম এর প্রতিবেদকের হাতে।

স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বলেন,গত ম্যানেজিং কমিটির আমলে প্রধান শিক্ষক জিনাত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় ঢাকা মহানগর উত্তরের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহিদা তারেখ দিপ্তি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা এ প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষার টাকা যৎসামান্য শিক্ষকদের দিয়ে বাকি টাকা তিনি (জিনাত) হাতিয়ে নেন।

প্রতি মাসে কোচিং ফি বাবদ ১০-১২ লাখ টাকা আদায় হলেও শিক্ষকরা সামান্য অংশ পান। একবার স্কুলে ৮৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জিনাত ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। অথচ,৪ লাখ টাকা হলেই অনায়াসে এ কাজ করা যেত। এ ছাড়া বিনা টেন্ডারে স্কুলের শতাধিক পুরনো ফ্যান,২০১৫ সালে কয়েক লাখ টাকায় ব্যয়ে নির্মিত লোহার খাঁচা (মাঠের বাউন্ডারি) বিক্রি করা টাকা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগ আছে,২০১৯ সালে মীরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরী ইনস্টিটিউটের স্কুল ও কলেজ শাখা আলাদা হয়। ওই সময় জিনাত ফারহানা স্কুল শাখায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন।

এরপর ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে শিক্ষা বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্কুল পরিচালনা (ম্যানেজিং কমিটি) কমিটির অনুমোদন নেন। পরবর্তীতে ওই ম্যানেজিং কমিটি বিধি বহির্ভূতভাবে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়।

কলেজ শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল  নাসরিন নাহার সকালের খবর ২৪ ডটক কে বলেন,আমি কলেজে থাকার সময় জিনাত ফারহানা স্কুল শাখার দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর ৬ লাখ ২২ হাজার ৪৭৮ টাকার একটি চেক এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য দেওয়া হলে তিনি সেটি উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন। ২০২০ সালে অডিট করার সময় বিষয়টি জানাজানি হয়। কিন্তু সেই অর্থ জিনাত ফেরত দেননি। আমি এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ,শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। যিনি অর্থের লোভ সামলাতে পারেন না,তার কাছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আরও জানা গেছে,জিনাত বরখাস্ত থাকা অবস্থায় মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে স্কুল ফান্ড থেকে নিজ সইয়ের মাধ্যমে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৬৬২ টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া স্কুলের অডিটোরিয়াম থেকে একটি এসি খুলে অ্যানেক্স ভবনে স্থানান্তরের জন্য ১ লাখ টাকা,ভুয়া টেন্ডারে মাঠ উন্নয়নের নামে মাটি ভরাট বাবদ ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা,টাইলস লাগানো ও ভবন সংস্কারের নামে ২০ লাখ টাকা,১০টি জানালার পর্দা কেনার নামে ৯০ হাজার টাকা,গোপনে ২০টি বড় গাছ বিক্রি,পুরনো ফ্যান ও লোহার খাঁচা বিক্রি করেন। ২০২৩ সালে‘পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন স্কিমের’ আওতায় স্কুলের জন্য বরাদ্দ ৫ লাখ টাকার অনুদান তছরুপের অভিযোগও রয়েছে জিনাতের বিরুদ্ধে।

অভিযোগনামায় উল্লেখ রয়েছে,অসৎ পথে স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করে জিনাত ফারহানা মিরপুর ১১ নম্বর অ্যাভিনিউ ফাইভের ১৫/১ নম্বর লাইনে একটি সাততলা বাড়ির অংশীদার হয়েছেন। ওই ভবনের নাম আইডিয়াল প্যালেস।

স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ২০১৮ সালে ১৫ জন সহকারী শিক্ষক অ্যাডহকভিত্তিতে নিয়োগ পান। এ জন্য তারা ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ দেন। পরবর্তীতে তাদের নিয়োগ পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কোনো কাগজপত্র হাতে পাননি। তারা নিয়োগ পত্র চাইলে প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা তাদের শো-কজ,বেতন বন্ধ ও বরখাস্তের মতো কথা বলে দমিয়ে রাখেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুজন আয়া নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন,গত জুন মাসে একটি নিয়োগে স্কুলের ৬ আয়া-পিয়নের (৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী) চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে জন প্রতি ৬০ হাজার টাকা ঘুষ চান জিনাত। দুয়েকজন ৩০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে রাজিও হন। বাকিরা এত টাকা দিতে না পেরে জিনাতের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করলেও লাভ হয়নি। ঘটনাটি স্কুলে ওপেন সিক্রেট। অবশ্য পরবর্তীতে ওই নিয়োগে ৬ জনের কারও চাকরি আর স্থায়ী হয়নি। এই ঘটনার একটি ভিডিও বাংলানিউজের কাছে রয়েছে।

কয়েকটি ভাউচার যাচাই করে দেখা গেছে,স্কুলের জন্য চায়না মডেলের যে ৮৭টি সিসিটিভি ক্যামরা কেনা হয়েছে তা বাজার দরের চেয়ে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা বেশি না। আবার ১৯ লাখ টাকায় মাটি ভরাটের জন্য যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে; সরেজমিন ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের (মেসার্স স্বপন ট্রেডিং) কোনো অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির মোবাইলে ফোন দিলে এক ব্যক্তি জানান,তাদের কোনো নিজস্ব অফিস নেই। তারা ভাসমান। এ ছাড়া বিনা টেন্ডারে পুরনো পাখা,লোহার খাঁচা ও গাছ বিক্রির প্রমাণ মিলেছে।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা জিনাত ফারহানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন,এই সব উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একটি চক্র আমার পেছনে লেগেছে।

২০১৬ সালে চাকরি থেকে বরখাস্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। ৬ লাখ ২২ হাজার ৪৭৮ টাকার একটি চেক আত্মসাৎ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ওই টাকা আমি নিইনি।

জিনাতের বিরুদ্ধে আগের কমিটির দুর্নীতির তথ্য সাংবাদিকদের কাছে না দিতে প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য।

ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মিরপুর) মো.আব্দুল মজিদ বলেন,তাদের হাতে জিনাত ফারহানাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলোর তদন্ত হবে।

ডিআই/এসকে

শেয়ার করুনঃ