
জামালপুরে জানাজা নাম থেকে ধর্ম মন্ত্রী মো. ফরিদুল হকের চুরি যাওয়া আইফোন মালয়েশিয়া থেকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতার করা হয় চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা মো.জাকির হোসেন (৪০),মাসুদ শরীফ (৪১),মো.জিয়াউল মোল্লা জিয়া (৪৮),রাজিব খান মুন্না (২২),মো.আল আমিন মিয়া (২০),মো.আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহেল (২৭),মো. রাসেল (৩৮),মো.খোকন আলী (৩৬) ও মো. বিল্লাল হোসেন (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এরআগে গত ৩০ এপ্রিল সকালে জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভাধীন মোশাররফগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর জানাজা পড়তে যান ধর্ম মন্ত্রী মো.ফরিদুল হক। জানাজা পড়ার সময়ে পকেট থেকে তার মোবাইল ফোনটি চুরি যায়। এই ঘটনায় মন্ত্রীর সহকারী একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।
মন্ত্রীর মোবাইল ফোন উদ্ধারে কাজ শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম এন্ড ইনভেস্টিগেশন (উত্তর)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আইফোন উদ্ধার করা হয়।
বুধবার ( ০৫ জুন ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগনর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন,এই ঘটনাটি ডিএমপির উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম এন্ড ইনভেস্টিগেশন (উত্তর) তদন্তে নামে। সবাই মিলে কাজ করে তারা মোবাইল টি মালয়েশিয়া থেকে উদ্ধার করেছে।
হারুন আরও বলেন,এই চোর চক্রটি ৮০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। ঢাকায় কাজ করা চক্রটি পকেটমারে ও ছোঁ মারে। আর ঢাকা বাহিরে চক্রের সদস্যরা বড় কোনো সমাবেশ,জানাজা বা জনসমাবেশকে টার্গেট করে। আর চুরি করতে গিয়ে যদি কেউ ধরা পড়ে যায় তখন ভুক্তভোগীকে ঘিরে রেখে তাদের সদস্যদের পালাতে সাহার্য করে। ঢাকাসহ সারাদেশে এই চেক্রর ৮০টি গ্রুপ কাজ করে। ৮০টি গ্রুপের নেতৃত্বদেয় জাকির।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি বা ছিনতাইয় করে আনা ফোনগুলো জাকিরের কাছে জমা হয়। জাকির দামি মোবাইলগুলো এই চক্রের বিদেশে থাকা চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, ভারত, দুবাইতে পাঠিয়ে দেয়। জাকিরের কাছে আসা মোবাইলগুলো
কুরিয়ারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন মার্কেটে থাকা চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারাই দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার করে দেয়।
হারুন আরও বলেন,তাদের কাছে যাওয়া ফোনগুলোর প্রথমে‘লক’খোলার চেষ্টা করে। কয়েকবার চেষ্টার পরে যদি সফল হয় তাহলে সেই ফোনটি তারা বেশি দামে বিক্রি করে। আর লক খুলতে না পারলে সেগুলো কম দামে বিক্রি করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ডিবির ওয়েবড বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এমন শতাধিক চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। চোর চক্রের মূলহোতাসহ ৯জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
যেভাবে চুরি হয় ধম মন্ত্রীর আইফোন: জামালপুরের জানাজা নামাজে যাওয়ার পরে তার পকেট থেকে মুন্না মোবাইলটি চুরি করে। এরপর সেটি আসে রাসেলের কাছে। রাসেল ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বোরহানের কাছে। এরপর সেই মোবাইল কামরুজ্জামান হিরু নামরে একজনের কাছে দেয় বোরহান। হিরু মোবাইলটি মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। তাদের গ্রেফতারের পর চক্রের সদস্যরা মালয়েশিয়া থেকে মোবাইলটি পাঠানো হয়। এমন করে চক্রের সদস্যরা আমলা বা বড় সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবীদদেরর টার্গেট করে। তারা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বা রাজনৈতিক সভা সমাবেশে গেলে তারা কৌশলে চুরি করে নিয়ে যায়। একজন মানুষের মোবাইলে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। ছবিসহ নানা জিনিস থাকে। যখন কেউ ফোন হারায় তখন অত্যন্ত অসহায় হয়ে যায়।
এই চক্রটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে,তারা অন্তত ১০ হাজার মোবাইল ফোন চুরি করেছে। বেশির ভাগ সময়ে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন মার্কেটে পাঠায়। সেখান থেকে এগুলো বিদেশে পাচার হয়। আমরা ঢাকায় ও বেশ কিছু মার্কেটের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।
পুলিশের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ আসছিলো ঢাকাসহ এর আশেপাশের এলাকায় আইফোনসহ দামি মোবাইল ফোন ছোঁ মেরে কা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনরের কাছেও অনেকে অভিযোগ দিয়ে থাকেন। অনেকেই থানায় জিডি করে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়ে থাকেন।
ডিআই/এসকে