
দেওয়ানবাগ শরীফের ছেলেদের বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল করে উটের খামার করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তাদের অপকর্মের বিষয়ে সব কিছু জেনে যাওয়া ও তাদের কাছে পাওনা অর্থ দাবি করায় দেওয়ানবাগ শরীফের মুরিদ সন্তান শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব’কে প্রান নাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে দেওয়ানবাগ শরীফের ছেলেদের বিরুদ্ধে।
শরিয়তুল্লাহ বিপ্লবের অভিযোগ,দেওয়ানবাগ শরীফের সন্তানদের বিভিন্ন অপকর্ম,জমি দখল সম্পর্কে জানতে পারা ও পাওনা টাকা দাবি করার কারনে বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় তার উপরে। এছাড়াও হত্যার হুমকিসহ মোর্শেদ দেওয়ানবাগর স্ত্রীর মাজার জিয়ারতেও বাঁধার মুখে পড়তে হয় তাকে। ফলে মতিঝিল থানার সহযোগিতায় মাঝার জিয়ারত করেন তিনি। একই সঙ্গে নিজের জীবনের নিশ্চয়তা চেয়ে থানায় একটি লিখিত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
তবে এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছে দেওয়ানবাগ শরীফের ছেলে ছোট ছেলে এ,এফ,এম মঞ্জুরে-খোদা ওরফে ছোট হুজুর (পরশ)।
অভিযোগ জানিয়ে দেওয়ানবাগ শরীফের মুরিদ সন্তান শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব বলেন,২০১৪ সাল থেকে অনেক দেওয়ানবাগ শরীফের ছেলেদের দ্বারা অনেক অত্যাচারিত হয়ে আসছি। আমি এই দরবার শরীফের যখন বিশ্বাস করি তখনতো তারা আমাকে যা বলে আমি তাই বিশ্বাস করেছি। তারা যা বলেছে আমি তাই করেছি। এদের কারনে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমি কেনো এসব ভন্ডদের (দেওয়ানবাগ শরীফ হুজুরের ছেলেদের) কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেওয়ানবাগ শরিফ হুজুর ভন্ড না।
তাকে ভন্ড বানিয়ে দিয়েছে তারই ছেলে মেয়েরা। আমি তাদের অনেক কিছু জানি। যেহেতু আমি ১৯৯২ সাল থেকে তাদের সাথে দরবার শরীফে জড়িত। আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করেছি। একজন চাকর হিসেবে। সেই সুবাদে আমি যাকে বাবাজান এবং দয়াল মা জান বলে ডাকি,তিনি আমাকে বিয়েও দিয়েছেন।
জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি আল্টিমেট মে মাসের ৮ তারিখে জানতে পারি এই জমির মালিক আমাদের বাবা জান (দেওয়ানবাগ শরীফ হুজুর) না। এই জায়গার মালিক মৃত গফুর সাহেব। গফুর সাহেব ২০১৬ সালে মারা গিয়েছেন। তিনি আমাকে ছেলে হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে আমি জানতাম না। কারন দেওয়ানবাগ শরীফ হুজুরের ছেলেদের অত্যাচারে তখন আমি নিজের জীবনকে রক্ষা করার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আসলে এদের এতো অত্যাচার যেটা আমি আপনাদের বলে শেষ করতে পারবো না।
দেওয়ানবাগ শরিফ হুজুর ভন্ড ছিলনা,কিন্তু তার ছেলেরা যে এখন বাটপারি শুরু করেছে এটা আমার হৃদয়ে আঘাত করেছে। যে আমি যদি সত্যিকারের আল্লাওয়ালা হয়ে থাকি তাহলে আমি অন্যদের জায়গা দখল করবো কেনো? এই জন্য আমি নিজে থেকে একটু খোঁজ খবর নিলাম যে এই জমির মালিক কি আসলে দেওয়ানবাগ নাকি অন্য কেউ? পরে দেখি এই জমির মালিক গফুর সাহেব। শরীয়তুল্লাহ বিপ্লব বলেন,পীরের আস্তানা দেওয়ানবাগ শরীফের পাশেই উটের খামার করা হয়,যার মালিক মো.আব্দুর গফুর, দাগ নং ৮৪১,৮৪৩ খতিয়ান নং ৬৪। ৭৯৬ দাগের জায়গা হচ্ছে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের।
আব্দুল গফুরের দেওয়া পাওয়ার মূলে এই জায়গার দাবীদার এখন আমি শরীয়তুল্লাহ বিপ্লব কিন্তু ওই জায়গা নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়ে আমার মোর্শেদ দেওয়ানবাগীকে পরামর্শ দিলে,তিনি তার ছেলে মেয়েদের জানায়। তার পর থেকে ওনার ছেলেরা আমার প্রতি ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়।
এরপরে ২০০৯ সালে পীরের স্ত্রী মারা যান। উনি আমাকে সন্তানের মত অধিক স্নেহ করতেন এবং বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা দিতেন। আমি আমার সাধ্যমত তার সন্তানদের জন্য লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে খরচ করতাম। এখন পর্যন্ত তাদের পেছনে খরচ করার তিন কোটি টাকার অধিক পাওনা রয়েছে আমার। যদিও আমি ওই পরিবারের সন্তান ও তাদের জন্যে বিভিন্নভাবে টাকা খরচ করেছি। এসব খরচের বিভিন্ন ভাউচার,নথি এবং তথ্য আমার কাছে রয়েছে। এসব পাওনা টাকাগুলো না দিতে, দরবারের নজরানার চাঁদা এবং মাজারে পাশে দখল করা আব্দুল গফুরের জমিতে উটের খামার নিয়ে কথা বলার কারনে আমাকে সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। একপর্যায়ে আমি গেলে আমাকে মারধর করেছে,সেখান থেকে প্রাণে বেঁচে আসলেও তারপর থেকে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তখন দরবারে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রীকেও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে আমাকে মাজারে ঢুকতে দেয়া হয় না জানিয়ে তিনি বলেন,এরপরও আমি মাঝেমধ্যে লুকিয়ে দরবারে গিয়ে মাজার জিয়ারত করেছি। এরমধ্যে ২০২৩ সালের শেষের দিকে আদালতের ধারাস্ত হই। এরপর আদালতে নির্দেশনায় ২০২৪ সালের সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি কয়েকবার। কিন্তু তারপরেও আমার স্ত্রী ও আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে আমি ভয়ে পালিয়ে এবং লুকিয়ে লুকিয়ে থাকি। এর মধ্যে বিষয়টি লিখিতভাবে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি),ডিএমপি কমিশনারকে অবগত করেছি।
আমাকে হুমকি ধমকি মারধর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনাসহ মাজারে ঢুকতে না দেওয়ার কারণে এর আগে মামলা দায়ের করেছিলাম। তাদের মধ্যে বড় পীর দেওয়ানবাগ পীরের ছোট ছেলে মঞ্জুরে খোদার পালিত সন্ত্রাসী এ আর এস আরিফুর রহমান ও নিয়াজ মনসুর শাওন ছাড়াও আরো নাম না জানা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা আমার ওপরে হামলা চালায়।
তিনি আরও বলেন,চলতি বছরের ৮মে মোর্শেদ দেওয়ানবাগর স্ত্রীর ৬৭তম জন্মদিনে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের বাঁধার মুখোমুখি হই। পরে মতিঝিল থানা পুলিশের সহায়তার মাজার জিয়ারত করি।
জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিক মৃত গফুরের ছেলে মাইদুল ইসলাম মিন্টু বলেন,আমার বাবার জমি দেওয়ানবাগ শরীফের ছেলেরা দখল করে রেখেছে। এটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। আমরা আমাদের সকল ডকুমেন্টস (দলিল-পত্র) কোর্টে পেশ করেছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ানবাগ শরীফের ছোট ছেলে এ,এফ,এম মঞ্জুরে-খোদা ওরফে ছোট হুজুর (পরশ) বলেন,দরবারে আশার জন্য শরিয়তুল্লাহ বিপ্লব কোর্টে একটা লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কোর্টের থেকে একটা রায়ও নিয়েছিলেন। কিন্তু উনি আসলে আমার বাবা বেঁচে থাকতেই টাকা পয়সা রিলেটেড কিছু ঝামেলা করার কারনে বাবা তাকে দরবার থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। বাবা বলেছিলেন সে যেনো আর না আসতে পারে। এই জন্য তাকে আমরা এখনে আসতে বাঁধা দিতাম। কিন্তু সে কোর্টের অর্ডার নিয়ে এখনও মাঝে মধ্যে আসে।
জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন,দখলের বিষয়টা তেমন কিছু না। এটা নিয়ে কোর্টে একটা কেস চলছে। রায় হলে যাদের পক্ষে রায় যাবে তারাই জমি পাবে।
ডিআই/এসকে