ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
ঈদ যাত্রা: জাল টাকা শনাক্ত ও রোবাস্ট পেট্রোলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নজরদারীতে র‌্যাব
রেলে ঈদযাত্রা:৩১৪ আসনের ৮২ টিকেটসহ গ্রেফতার ৬ কালোবাজারি
এক খেয়া পারাপারে মাসে অতিরিক্ত হাতিয়ে নেয় ৭৫ হাজার টাকা: আ’লীগের সিস্টেমই সচল
ভূরুঙ্গামারীতে ভুট্টা‌ ক্ষে‌তে ৮ বছ‌রের শিশু‌কে ধর্ষণ চেষ্টা, অভিযুক্ত আটক
ফরিদপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দুঃস্থ পরিবারের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে মহাসড়কে র‍্যাব-১১এর বিশেষ টহল
গৃহবধূ লামিয়া হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন
সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন
নোয়াখালীতে ইদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে র‌্যাবের তল্লাশি
৩৭ লক্ষাধিক টাকার রড বোঝাই লরি ছিনতাই, গ্রেফতার দুই
মোহাম্মদপুরে সাড়াশি অভিযান:দিনব্যাপী বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ৯
লক্ষ্মীপুরে ধর্ষণের শিকার কিশোরী বিচার না পেয়ে ধর্ষিতার আত্মহত্যা
৮ কেজি গাঁজাসহ লক্ষ্মীপুরে নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক
পুরস্কার ও অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ পাচ্ছেন ডাকাত ধরা ৫ শ্রমিক
ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা আদালতের

কালীগঞ্জে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে’ উরুন-গাইন’

গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামবাংলার প্রতিটি পরিবারের মা ও বোনদের উড়ুন আর গাইন দ্বারা ধানে পাড় দিয়ে ধান ভানতো।কিন্তু সেই ধান ভানার প্রচলন আর নেই বললেই চলে।

দিন দিন সেই প্রচলন উঠে যাচ্ছে গ্রামবাংলা থেকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মা ও বোনদের সেই ধান ভানার মনোরম দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর বর্তমানে যান্ত্রিকতার যুগে সেই চিরচেনা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রায় হারিয়ে গেছে।

কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে এই শিল্পটি। এক সময় প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে ছিল উড়ুন আর গাইন কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ন্যায় কালীগঞ্জেও গৃহ বধূঁর এক সময়ের ধান থেকে চাল তৈরীতে একমাত্র মাধ্যম ছিলো উরুন গাইন। বদলে গেছে দিন আর পাল্টে গেছে সময়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বিশুদ্ধ চাল তৈরীর সেই উরুন গাইন।

বড় বট গাছের গুল আর শাল গাছের ডাল দিয়ে তৈরী হতো উরুন গাইন। এখন আর সেই বট গাছও নেই আর নেই শাল গাছের সেই শক্তিশালী ডাল। তা ছাড়া কালের বিবর্তনে উরুন গাইন এর স্থান দখল করে নেয় ঢেঁকি। সেই ঢেঁকিও তার অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেক আগে। সময়ের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের বদৌলতে এসেছে চাল তৈরীর চাল কল।

আবহমান গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো উড়ুন ও গাইন।

একটা সময় ছিল যখন গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে প্রতিনিয়ত এটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যেত। প্রত্যেহ ভোরে এটির ধুপ ধাপ শব্দ চারদিকেই শোনা যেত । ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত গ্রামীন নারীরা অনেক পরিশ্রম করে তাদের স্বামী সন্তান সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য ধান থেকে চাল তৈরী করত এই উড়ুন-গাইনের মাধ্যমে। এছাড়াও চিড়া, হলুদ, মরিচ, মসলা, ভূট্টা ও পিঠার চাল গুড়ো করার জন্য এটির ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়।

গ্রামীণ নারীরা কেউবা উড়ুনে দিতেন পার, কেউবা কুলা দিয়ে চাল থেকে খুদ বের করতেন। কেউবা উড়ুনের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করতেন।

অনেক নারীরা আবার অন্যের বাড়ীতে গিয়ে ধান থেকে চাল তৈরীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আবার কেউ এগুলো তৈরী করে হাটে বিক্রি করে চালাতেন সংসার।

কিন্তু বর্তমানে আধুনিক জীবন যাত্রার বিকাশে রাইস মিল, অটো রাইস মিল ও বিভিন্ন মেশিনের আবিষ্কারের ফলে আর দেখা যায় না বহুল ব্যবহৃত এই উড়ুন-গাইনের ব্যবহার।

উড়ুন তৈরীতে ব্যবহৃত হতো গাছের বড় বা মাঝারী ধরনের গুড়ি এবং গাইন তৈরীতে লাগত মোটা গাছের সরু ডাল ও লোহার বড় একটি গোল চাকতী যা ধান থেকে খোসা ছাড়িয়ে চাল বের করত। এ দুটির দাম ছিল আকারে ও প্রকারে প্রায় ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত ।

কালভৈরব এলাকার আব্দুল হাকিম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, আগের দিনে আমরা উড়ুন গাইন দিয়ে তৈরীকৃত চালের ভাত খেতাম। অনেক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ ও স্বাদযুক্ত ছিল সেই ভাত । কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন মিলের তৈরীকৃত চালে সেই পুষ্টিগুণ ও স্বাদ নাই। আগের সেই উড়ুন-গাইনের কথা আমার আজও মনে পড়ে। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এটির কথা নাও বলতে পারে।

শেয়ার করুনঃ