
বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের ডাকে দেশজুরে শুরু হয়েছে টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। তবে এই কর্মসূচিকে তোয়াক্কা না করে রাজধানীতে কর্মব্যস্ত দিনের মতই চলাচল করছে গণপরিবহন। নেই কোন যানজটের চিত্রও। তবে সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে আশা করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শ্যমলী বাসপয়েন্ট, কল্যানপুর ও গাবতলী ঘুরে যান চলাচলের এমন চিত্র দেখা গেছে।
গাবতলী ও কল্যানপুরসহ বাসপয়েন্ট ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মব্যাস্ত দিনের মতই চলাচল করছে রাজধানীর ভেতরে চলাচলকারী গণপরিবহন। সকালের শুরুতে যাত্রী চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়তেই বেড়েছে যাত্রীর সংখ্যাও। তবে প্রতিদিনের মতন যানজটের কোন চিত্র চোখে পরেনি।
এদিকে শ্যামলী, কল্যানপুর, মাজার রোড, গাবতলীসহ বিভিন্ন বাসপয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে নজরদারি করতেও দেখা গেছে।
এদিকে সড়কে যানজট না থাকার কারন হিসেবে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বের না হওয়াই কারন দিসেবে দেখছেন গণপরিবহন শ্রমিকেরা। সেই সঙ্গে যানজটহীন সড়কে স্বাচ্ছন্দে চলাচলে কিছুটা স্বশ্তিও প্রকাশ করছেন গন্তব্যমূখী যাত্রীরা।
ট্রান্স সিলভা গাড়ির চালকের সহকারি আমির হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম আজ গাড়ি চালাতে হয়তো ঝামেলা হবে। কিন্তু সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা দেখছি তাতে কোথাও কোন ঝামেলা নেই। রাস্তায় বিভিন্ন যায়গা পুলিশ র্যাব পাহারা দিচ্ছে। কম বেশি যাত্রীও আছে। প্রতিদিনের মতনই গাড়ি চলাচল করছে। এখনও কোথাও জ্যামেও পরিনি।
যাত্রীর উপস্থিতি কেমন এবং যানজট না থাকার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম। তবে বেলা বাড়লে যাত্রীও বাড়বে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোন স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের চোখে পরেনি। হয়তো স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারনে যানজট নেই।
গাবতলী লিঙ্ক (৮ নম্বর)পরিবহনে চালকের সহকারী বলেন, এখন আর আগের মতন কোন হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি নেই। কেউ এখন এগুলো মানেও না। সকাল থেকেই গাড়ি চালাচ্ছি। কোন জায়গা কোন ঝামেলা হয়নি।
তিনি বলেন, তবে প্রতিদিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ কিছুটা কম আছে। হয়তো ঝামেলা হতে পারে এই ভেবে সবাই রাস্তাই বের হয়নি। তবে আস্তে আস্তে সবাই বের হবে। বেলা বাড়লে যাত্রীও বাড়বে।
যানজট না থাকার কারন হিসেবে তিনি বলেন, বিএনপি- জামাত গাড়িতে আগুন দিতে পারে এই ভেবে হয়তো সবাই রাস্তাই গাড়ি বের করেনি এই কারনেই যানবাহনের চাপ কম। তবে সবাই যখন জানতে পারবে রাস্তাই ক্নে সমস্যা নেই তখন আবার সব গাড়ি রাস্তাই নামবে।
বেসরকারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মেহেদী হাসান। প্রতিদিনের মতই বের হয়েছেন অফিসের উদ্যেশে। উঠেছেন গুলিস্থানগামী গাবতলী লিঙ্কে। মেহেদী হাসান বলেন, অবরোধ কর্মসূচি হলেও আমাদের অফিস খোলা আছে। চাকরি বাচাতে হলে দেশের যে পরিস্থিতিই হোক অফিস খোলা থাকলে যেতেই হবে। আজও অফিস খোলা। ভেবেছিলাম হয়তো গাড়ি পাবো না । কিন্তু রাস্তাই বের হয়ে দেখছি সব স্বাভাবিক আছে। গাড়িও আছে আসনও ফাঁকা। আবার এখন পর্যন্ত কোন যানজটেও পরতে হয়নি। ভেবেছিলাম কিভাবে অফিসে যেতে হবে তারতো কোন ঠিক নেই তাই একটু আগে আগেই বের হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তার যে পরিস্থিতি তাতে সময়ের অনেক আগেই পৌঁছে যাবোমনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের পতনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয়। একইসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলও সমাবেশ করে। অন্যদিকে একই সময়ে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশাল এই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
এই মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ও সমর্থন করেছে।
ডিআই/এসকে