ঢাকা, বুধবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
পল্লবীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার সাংবাদিক
ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার দুই ছিনতাইকারী
ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলেন এসি সোয়েব
ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলেন এডিসি মো.সোনাহর আলী
ফেব্রুয়ারি-২০২৫:ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ হলেন যারা
কালিগঞ্জের পল্লীতে বৃদ্ধা খোদেজা খাতুন নিখোঁজ
মোহাম্মদপুরে রোজাদারদের মাঝে ছাত্রদলের ইফতার বিতরণে
বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম
গাইবান্ধায় অজ্ঞাত যুবকের মুখবাধা মরদেহ উদ্ধার
আত্রাইয়ে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিলো প্রশাসন
আত্রাইয়ে যুবকদের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল
দিনাজপুর যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক ফরিজার রহমান তপুর উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
বাগমারায় শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার ও দোয়া মাহফিল
মিরসরাইয়ে কাভার্ড ভ্যান চাপায় স্কুল শিক্ষিকা নিহত
পাঁচবিবিতে আটাপুর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার ও মাহফিল

সুন্দরবনের নদী থেকে বালু উত্তোলন :বেড়িবাঁধ ভাঙার আশঙ্কা

পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদী থেকে কয়েকটি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এভাবে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। অথচ সরকারি বাঁধ নির্মাণের কাজেই এই বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই বালু তোলা হচ্ছে সুন্দরবনের নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে। এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় ওই এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ।
এলাকাবাসী।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসিকুর রহমান বলেন, ভাঙনের পাশ থেকে বালু তুললে তা এখনই বন্ধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। একই সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও কৈফিয়ত তলব করা হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, খুলনার কয়রা উপজেলায় পাউবোর ১৪/১ পোল্ডারের হরিহরপুর এলাকায় এম এম বিল্ডার্স, আমীর ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের নদীর তীর রক্ষা কাজ করছে। এ কাজের জন্য প্রায় এক শ কোটি টাকা চুক্তি মূল্যে ধরা হয়েছে।

প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের নদীর ভাঙন কবলিত স্থান থেকে কয়েক হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর বেড়িবাঁধের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় ড্রেজার মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে এভাবে এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করছেন। অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর পূর্ব পাশে সুন্দরবন এবং পশ্চিম পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভাঙন কবলিত বাঁধ। উপজেলার হরিহরপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে জোড়শিং এলাকার সুন্দরবনের বজবজা বন টহল ফাঁড়ির মধ্যবর্তী শাকবাড়িয়া নদীর চার কিলোমিটার এলাকার মধ্য থেকে প্রতিদিন ১৫–২০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনেরা বলেন, বাঁধ মেরামতের জন্য ভাঙন প্রবণ এলাকা থেকে বালু উত্তোলন ওই এলাকা নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলে,ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই সময় একটি ড্রেজারের মালিককে জরিমানা করে। এর দুই দিন পরেই আবার বালু তোলা শুরু করেন তারা। দিনের চেয়ে রাতের বেলা বেশি বালু উত্তোলন করা হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হরষিত মন্ডল বলেন, সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া নদীর যেখানে ভাঙনের তীব্রতা বেশি, সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদার। এখানে একাধিকবার ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে।
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত মো. হারুনর রশীদ বলেন, এখানে বালু সরবরাহের জন্য মোট সাতটি ড্রেজার রয়েছে। এর মধ্যে আমার চারটি ছাড়াও পাইকগাছার আপিল, কয়রার সৌরভ ও গণেশ চন্দ্র মন্ডলের একটি করে ড্রেজার রয়েছে। তবে অন্যরা সুন্দরবন ও বাঁধের মধ্যবর্তী নদী থেকে বালু উত্তোলন করলেও তিনি দূর থেকে বালু আনছেন।
অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম বিল্ডার্সের পক্ষে আব্দুল আজিজ বলেন,আমরা ভাঙন কবলিত জায়গা বালু তোলার জন্য কাউকে বলিনি। অনেকেই কাজের সাইটে বালু দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছেন। তারা কোথা থেকে বালু উত্তোলন করছেন,তা আমাদের জানার কথা নয়।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র জানান, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যে কোনো এলাকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে। এমনিতেই সুন্দরবনের আয়তন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার ওপর সুন্দরবনের আশ -পাশ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি রীতিমতো আত্মঘাতী হওয়ার মতো ঘটনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন,‘সুন্দরবন সংলগ্ন নদী থেকে বালু উত্তোলন বনের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ওই এলাকা থেকে বালু তোলা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফিন বলেন, কয়রা উপজেলার কোনো নদী থেকে বালু তোলার অনুমতি নেই। কারণ, উপকূলীয় ওই এলাকাটি নদী ভাঙন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এর আগেও ওই এলাকায় বালু দস্যুদের জরিমানা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

শেয়ার করুনঃ