
জামায়াতে ইসলামীও আজ রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সরকারের মন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে জামায়াত আশ্বস্ত করেছে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশও জামায়াতকে মহাসমাবেশ করার মৌখিক অনুমতি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ তিন দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকেছে জামায়াত। দলটির একজন নেতা জানিয়েছেন, সেখানে নয় নটর ডেম কলেজের আশপাশে সমাবেত হবে জামায়াত। সেখানে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ হবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বদল না এলে দুপুর দুইটার দিকে সমাবেশ শুরু হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের রাত থেকে নয়াপল্টনে অবস্থান নিলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরদের শনিবার দুপুরে মতিঝিল এলাকায় জমায়েত হতে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মতিঝিলে মহাসমাবেশ করতে চেয়ে গত ২৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠি দেয় জামায়াত। ডিএমপি কর্মকর্তারা তখন জানান, নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে শুক্রবার ২০ শর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ডিএমপি। এরপর জামায়াত নেতারা ফের সরকার ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও এর আগেই দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বিবৃতি বলেন, শনিবার মহাসমাবেশ হবে। জামায়াতের তরফে সাংবাদিকদের কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।
সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৬টি দল আজ রাজধানীতে সমাবেশ করবে। সবাই অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ ছয়টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সমাবেশ করতে, প্রশাসনের কাছে এই যুক্তিতেই প্রশ্ন রাখা হয় যে- অন্য অনিবন্ধিত দল যদি সমাবেশ করতে পারে, তাহলে জামায়াত কেনো পারবে না?
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের এক কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। দলটির সূত্রের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাবও সভা সমাবেশের বিষয়ে সহায়ক হিসেব কাজ করছে।
ফলো করুন-
ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন সমকাল ইউটিউব
শুক্রবার মধ্যরাতে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য ছিল। পরে র্যাব চলে যায়। শনিবার সকালেও পুলিশ দেখা গেছে।
গত বছর ডিসেম্বরে সমঝোতার মাধ্যমে ২৩ বছরের জোট ভেঙে ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি ও জামায়াত। এর তিন দিন পর গ্রেপ্তার হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বিএনপি প্রতিবাদ না করায় দূরত্ব শুরু হয়। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী আহত ও অর্ধশত গ্রেপ্তার হন। বিএনপি ওই ঘটনারও নিন্দা না করায় জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায়।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে এক যুগ কোণঠাসা জামায়াত গত ১০ জুন প্রায় এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছিল ঢাকায়। এরপর সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার গুঞ্জন তৈরি হয়। তবে পরের মাসগুলোতে বারবার আবেদন করেও কর্মসূচির অনুমতি পায়নি দলটি। জামায়াতের নেতাকর্মীদেরও আগের মতো ধরপাকড় শুরু হয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনে পল্টনে জামায়াত-শিবিরের আট নেতাকর্মী নিহত হন। ওই ঘটনার স্মরণে জামায়াত প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর দোয়া-আলোচনা সভার মতো কর্মসূচি দিয়ে থাকে। তবে আগামী নির্বাচনের তপশিলের সপ্তাহ তিনেক আগে এবার ডেকেছে মহাসমাবেশ। বিএনপির সুরে এক দফার আন্দোলনের কথা বলছে। জামায়াত সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জোট বা যুগপৎ আন্দোলন শুরু না হলেও আলোচনার মাধ্যমে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে।