
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সাউথ গারো হিলের তুরা জেলার ডালু সীমান্তের কাস্টমস অফিসে ব্যাগ তল্লাসীর নামে বাংলাদেশী পর্যটকদের হয়রানি করার অভিযোগ ওঠেছে। তবে ঘুষ দিলেই মিলে সমাধান। বর্তমানে কর্মরত ডালু কাস্টমস কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেনের বিরুদ্ধে এমন হয়রানির অভিযোগ।
সূত্রমতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি ও ব্যবসা পরিচালনাসহ যাত্রী যাতায়াতের সুবিধার্থে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তে ২০১৫ সালে স্থাপিত হয় নাকুগাঁও-ডালু ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বর্তমানে এ চেকপোস্ট দিয়ে ২ দেশের আমদানী-রফতানী ছাড়াও ব্যাপক সংখ্যক যাত্রী ও পর্যটক পারাপার হয়। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশি পর্যটকরা নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আসার সময় ভারতের সাউথ গারো হিলের ডালু কাস্টমস অফিসে যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাসীর নামে হয়রানি করা হয়। ভারতে ডালু কাস্টমস অফিসে ব্যাগেজ রুল মেনে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে আনলেও তা আনতে দেয়া হয় না। এসময় সেখানে থাকা ইন্দ্রজিত নামেরসহ ক’জন ব্যক্তি বাংলাদেশী যাত্রীদের ওই কাস্টমসের কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেনের সাথে কথা বলে মিটমাট করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ মতে, ফিরুজ হোসেনের সাথে অবৈধ আর্থিক লেনদেন (ঘুষ) করে পণ্য সামগ্রী দেশে আনতে হয়। ঘুষ না দিলে বৈধ পণ্য সামগ্রী আটকে দেওয়াসহ অশোভন আচরণ করেন বলেও অভিযোগ যাত্রীদের। ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করে জানান, ভারতে থাকা স্বজনেরা ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে দেন। ওসব উপহার ব্যাগেজ রুল মেনে আনা সত্বেও নানা অজুহাতে আটকে দেয়া হয় ডালু কাস্টমস অফিসে।
তথ্যমতে, একজন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে ভ্রমণ করতে গেলে ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী নিজের পরিবারের জন্য ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ৪০০শ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈধপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বা অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে কোন প্রকার শুল্ক পরিশোধ করা ছাড়াই নিজ দেশে আনতে পারবেন।
বাংলাদেশি পর্যটক আমিরুল ইসলাম, সুরুজ্জামান, মিজানুর রহমান ও আল-আমীনসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি নাকুগাঁও-ডালু ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তারা ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেন। ফেরার সময় ভারতে থাকা আত্মীয়-স্বজনের দেওয়া উপহার সামগ্রী তাদের সঙ্গে ছিল। এসময় ভারতের সাউথ গারো হিলের ডালু ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে ডালু কাস্টমস অফিসে এলে তাদের ব্যাগ তল্লাশী করেন ইন্দ্রজিত নামের ১ ব্যক্তি এবং ওই কাস্টমস কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেন। তল্লাসীকালে ফিরুজ হোসেন ১ কেজির বেশি পণ্য বাংলাদেশে আনতে মানা করে তা আটকে দেয়। অনুরোধের একপর্যায়ে কাস্টম কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেন সরাসরি ৫০০ রুপি ঘুষ দাবী করেন। দাবী অনুযায়ী ৫শ রুপি সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা বাংলাদেশি ৫শ টাকা ঘুষ দিয়ে পণ্য আনেন।
জানা গেছে, অধিকাংশ যাত্রী বা পর্যটক ব্যাগেজ রুল সম্পর্কে জানেনা। আর এ সুযোগে যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেন অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করেন তার অফিস পিয়ন ইন্দ্রজিত নামের এক ব্যক্তি। বাংলাদেশের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের অতিরিক্ত পরিচালক (এডি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি পর্যটকরা ব্যাগেজ রুল মেনে ৪০০ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈধপণ্য ক্রয়ের রশিদ দেখিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবেন।
অভিযুক্ত ভারতের ডালু কাস্টমস কর্মকর্তা ফিরুজ হোসেনের বক্তব্য জানতে চেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও হোয়াটস আ্যাপে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এবিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে ভারতীয় ডালু কাস্টমস সুপার এস. শর্মার মুঠোফোনে (০০৯১ ৯২৩৩১৯১৫১৮) কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে সে কল কেটে দেন। যাত্রী হয়রানি ও ঘুষ বন্ধের জন্য সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ দাবি করেছেন।