
ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের প্রায় ৫শ বছরের ঐতিহ্য এখনও টিকে আছে নড়াইলে। নদীতে আগের মত মাছ না পাওয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে। যারা এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে তারাও ভালো নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। এদিকে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগের কথা বললেও ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের প্রাচীন পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে তেমন কোন কার্যক্রম নেই মৎস্য বিভাগের। সরজমিন গিয়ে জানা যায়, শত শত বছর আগে থেকে ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের প্রচলন আছে নড়াইল সদর উপজেলার গোয়াইলবাড়ি, পংকবিলা ও রতডাঙ্গা গ্রামে। এক সময় এসব এলাকায় বিপুল সংখ্যক জেলেরা এ পদ্ধিতে মাছ শিকারের সাথে জড়িত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা কমে গেছে। মূলত নদীতে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়া ও ভোঁদড় লালন-পালনে অনেক খরচের কারণে প্রাচীন এই পদ্ধতি থেকে সরে আসছে জেলেরা। বর্তমানে শুধু গোয়াইলবাড়ির ২০টি পরিবারার এই পেশায় জড়িত রয়েছে। তাদের অধীনে ৫টি নৌকায় মাত্র ১৬টি ভোঁদড় আছে। প্রাণীটির প্রধান খাবার মাছ। তবে ব্যাঙ ও ছোট আকৃতির জলজ পোকাও খায়। এদের জীবনকাল ৮-১০বছর। গোয়াইলবাড়ি গ্রামের জেলে ভবেন বিশ্বাস বলেন, তার বাপ-ঠাকুরদা ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করতেন। এখন তিনি এ পদ্ধতিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এখন নদীতে যে মাছ পাওয়া যায় তাতে কোনোমতে সংসার চলে। গোপীনাথ বিশ্বাস বলেন, আগে তারা সুন্দরবনে যেতেন মাছ ধরতে। প্রচুর পরিমাণ মাছ পেতেন। এখন সুন্দরবনে যাওয়ার অনুমতি দেয় না। এখানে অল্প কয়ডা মাছ হয়। হৃদয় বিশ্বাস বলেন, পাটা জাল ও চায়না জাল দিয়ে মাছ মারাসহ বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ কমে গেছে। ভোঁদড় দিয়ে বর্তমানে যে মাছ পাওয়া যায় তা বিক্রি করে সংসার চলে না। আয় কম হওয়ায় ভোঁদড়কে পর্যাপ্ত খাওয়াতেও পারেন না। দিন খুব কষ্টে যায়। ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের পাশে থাকার কথা জানিয়ে নড়াইল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: এনামুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছেন তারা।
মাছ ধরার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কার্ডধারী জেলেদের দুইটি করে ছাগল ও তাদের জন্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে উর্ধ্বোতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ .এম. বদরুজ্জামান বলেন, ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকারের পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে আলাদা তেমন কোন কার্যক্রম নেই। বাস্তবতা হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে মাছের পরিমাণ কমে গেছে। যার কারণে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তারা।