
মাদক ও কিশোর গ্যাং গ্রুপের বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে যেতে চাই বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় শহীদ মিনারে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মতবিনিময় শেষে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
মেড়ক উন্মোচচিত বই দুটি হলো,বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের লেখা ‘মাদকের সাতসতেরো:বাংলাদেশের বাস্তবতা ও সমাধানসূত্র’ এবং ‘কিশোর গ্যাং: কীভাবে এলো, কীভাবে রুখব।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন,র্যাব ফোর্সেস মাদক ও কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে যেতে চাই উল্লেখ করে র্যাব ডিজি অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ হচ্ছে মাদকের একটি ট্রানজিট রোড। এর থেকে যদি বাঁচতে হয়, তবে আমাদের সম্মিলিতভাবে মাদকের বিরুদ্ধে আইনীয় সামাজিক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দেশ আমাদের, দেশের মানুষ আমাদের,বাংলাদেশ আমাদের অহংকার।
তিনি বলেন,আমরা বাংলাদেশে বসবাস করবো, এদেশের শান্তি ও সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থার জন্য মাদক ও কিশোর গ্যাং সহ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে নির্মূল করতে হবে। নির্মল আমি ওই অর্থে বলবো না, কারণ বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যারা মাদককে নির্মূল করতে পেরেছে। আমি মনে করি, যারা অনেক বড় কথা বলে সেই সমস্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো।
তিনি বলেন,আমাদের মুল কাজ হচ্ছে জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, এলাকায় বসবাস করতে পারে, পাশাপাশি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা যাতে সুন্দর ভাবে পরিচালনা হতে পারে, সমাজের মানুষ যাতে কোনো প্রকার হুমকির মধ্যে না থাকে সেটি নিশ্চিত করা। মাদক ও কিশোর গ্যাং নির্মূলের বিষয়ে দুটি বই লিখেছে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে র্যাব ডিজি বলেন, আপনারা জানেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে এই কিশোর গ্যাং এর বিস্তার খুব বেড়ে গিয়েছিল, এতে র্যাব অভিযান পরিচালনা করে বেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সব কিশোর গ্যাং এর কেউ না কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা আছে। এরা সব সময় থাকে, অতীতেও ছিল এখনও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা চেষ্টা করছি কিশোর গ্যাং সমুলে কিভাবে বিনাশ করা হয়, পাশাপাশি যারা এদের পরিচালনা করছে আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনবো। আমরা চাই সমাজের মানুষ যাতে কিশোর গ্যাং এর হাত থেতে রেহাই পায়।
মাদকের বিষয়ে র্যাব ডিজি বলেন, মাদকের বিষয়ে কিছু দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সকল বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন, মাদকের বিষয়টি এমন হয়েছে যে শুধু পুলিশ-র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দিয়ে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের অন্যান দেশগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণে অনেক বেআইনি পদক্ষেপ ও নিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই পথে যাচ্ছি না, আইনের মধ্যে থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
তিনি বলেন, দেশে যে জঙ্গি উথ্যান হয়েছিল, যখন আমরা দল মত নির্বিশেষে সামাজিকভাবে এর মোকাবিলা করলাম তখন কিন্তু জঙ্গি নির্মুল করা সম্ভব হয়েছে।
র্যাব ডিজি বলেন, আমার ৩৪ বছর চাকরির অভিজ্ঞতায় এক সময় বাংলাদেশে মাদক আসতো স্থল পথে। তখন বেশি প্রচলন ছিলো ফেনসিডিল ও হেরোইনের। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে যখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীপাকিক বৈঠক হলো তারপরে কিন্তু বাংলাদেশে ফেনসিডিল আসা বন্ধ হয়েছে। কারণ তখন ভারতের বর্ডার এলাকাগুলোতে পেন্সিলের কারখানা ছিল। এরপরেই বাংলাদেশ ফেনসিডিলের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। পিস্তল পথে রাজশাহীর চাটগা বাগমারা এলাকা দিয়ে গোটা গাড়ি ওদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিনাজপুর কুমিল্লা বিভিন্ন জায়গা দিয়ে মাদকগুলো আসত। এখন শুধুমাত্র ফেনসিডিল নয় কত ধরনের বিপদজনক মাদক যে বাংলাদেশে আসছে বিভিন্ন স্থল পথ বর্ডার এলাকা দিয়ে জলপথে আকাশপথে ও আসছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন তার অভিজ্ঞতার আলোকে কিশোর গ্যাং ও মাদকের বিষয়ে দুটি বই লিখেছেন। এই দুটি বই সমাজের কিশোরদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনারা (র্যাব) কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিবেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের বই কিশোরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে পাঠ্য বইয়ে মাদকের কুফল কিশোর জ্ঞান এর কুফল এর বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে আগে থেকেই তুলে ধরা হলে সমাজে কিশোর জ্ঞান ও মাদকাসক্তের সংখ্যা অনেক আংশে কমে যাবে।
যেমন উন্নত দেশ জাপানের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আমরা জানাপানের দিকে দেখি, সেখানে শিশুদের প্রথম দুই বছর কোন পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা পড়ানো হয় না। তাদেরকে সেখানে শিখানো হয় ম্যানার (আচার-আচরণ)। দুই বছর পর তাদের পাঠ্য বইয়ে পড়াগুলোকে শেখানো হয়। যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে মাদকের কুফল কিশোর গ্যাং এর কুফল নিয়ে আলোচনা করা হয়, বা ক্লাস নেওয়া হয়, তাহলে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাবে। অতীতেও আমি এ বিষয়গুলো দেখেছি। তাই সর্বোপরি সবাই সব জায়গা থেকে মাদক এবং কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
ডিআই/এসকে