
ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি:
জাতীয় সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে শিশু অধিকার লঙ্ঘন করে বাল্য বিয়ের হার বেড়ে যায়।
এর পেছনে মূল কারণগুলোর অন্যতম পথেঘাটে মেয়েদের উত্যক্তকরণ, এলাকাভিত্তিক নবসৃষ্ট কিশোর গ্যাং কালচার এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবং সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ করে শিশু-কিশোর-কিশোরীদে;র জন্য যে আইন ও নীতিমালা আছে তার বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট সন্তান শেখ রাসেল চিহ্নিত গোষ্ঠীর বুলেটের আঘাতে মৃত্যুবরণ করার পর তার বড় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল শিশুর মাঝেই শেখ রাসেলকে খুঁজে পান। আর এই জন্যই অতীতের চেয়েও ভালো ভালো সব উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের কাঙ্খিত সুরক্ষা ও বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। যে সমস্যাগুলো শিশু-কিশোর-কিশোরীরা চিহ্নিত করেছে সেগুলো নিয়ে কিন্তু সরকার কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজেরও অন্যতম প্রধান লক্ষ্য মাদক নির্মূল ও কিশোর গ্যাং কালচারটা যেন বিস্তার না করে। এবং এটি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভোরের আলো এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শিশুর সুরক্ষা ও তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে আমাদের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম- ১০ আসনের এই সংসদ সদস্য।
ভোরের আলো’র পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক রোটারিয়ান ডা. শাহানা বেগমের সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দীন আহমদ সাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জনি রোজারিও এবং ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা মো. শফিকুল ইসলাম খান।
সংলাপে ৩০ জন শিশু-কিশোর-কিশোরী তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বেশ কিছু বিষয়ে অতিথিদের সামনে তুলে ধরে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ পরিচালিত কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত অগ্নিবীনা শিশু দল, বাকলিয়া শিশু ফোরাম, চান্দগাঁও শিশু ফোরামের ১৫ জন কিশোর-েকিশোরী ও চাইল্ড এম্বাসেডর, ভোরের আলো কিশোরী দল, শিশু দলের ১৫ জন শিশু-কিশোর-কিশোরী বেশকিছু প্রশ্ন অতিথিদের করেন। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া, কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের উৎপাতে কিশোরীদের বাধ্য হয়ে শিক্ষা থেকে ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়ার হার বেড়ে যাওয়া, কাজীদের অর্থলোভী চেতনার কারণে যাচাই-বাছাই ছাড়া ও উপযুক্ত ডকুমেন্টস ছাড়াই বিয়ে পড়ার হার বেড়ে যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সময় মতো বেতন দিতে না পারলে পরীক্ষা দিতে না দেয়ার প্রবণতা, সরকারি হাসপাতালগুলোতে টাকা ছাড়া সেবা না পাওয়া বা টাকা নাে দিলে দুর্ভোগ পোহানো, চট্টগ্রাম নগরে শিশুদের বিনোদন এবং খেলাধুলার স্থানগুলো বেদখল ও না থাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, সরকারি সেবা সংস্থাগুলোতে শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া, শিশুশ্রম নিরসনে আইন থাকলেও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ার কারণ, শিশুদের নির্যাতন পরবর্তী সুরক্ষার বিষয়টি মনিটরিং না করা, থানাগুলোতে বাল্য বিয়ে বা শিশু নির্যাতন প্রতিরোধমূলক কোনো কাজে গেলে সহযোগিতা বা পাত্তা না দেয়ার প্রবণতা, জন্মনিবন্ধন পেতে হয়রানি ও ঘুষ বা টাকা দিলে দ্রুত সেবা পাওয়া, বেকারদের জন্য সরকারি প্রশিক্ষণগুলোতে রেফারেন্স গুরুত্ব দেয়া বা যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের সুযোগ না দেয়া, পথ শিশুদের মাদকাসক্ত জীবন থেকে রক্ষার কোনো সুযোগ না থাকা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যকরণ, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় না থাকা, মাসিক চলাকালীন ব্যবহারের জন্য স্যানিটারি প্যাডের উচ্চ মূল্য এবং প্রভাবশালীদের কারণে ইভটিজারদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অভিযোগ করে শিশু-কিশোর-কিশোরীরা।
তাদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান অতিথি মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপি, বিশেষ অতিথি যথাক্রমে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দীন, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আহবায়ক সৈয়দ সরোয়ার মোর্শেদ কচি, শিক্ষাবিদ নুসরাত ইয়াসমীন প্রমুখ। তাঁরা শিশুদের করা প্রশ্নগুলোর সমাধান এবং করণীয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার ঘোষণা দেন। বিশেষ করে সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু উঠে আসা সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধানে তাঁর ভূমিকা নিশ্চিত করবেন বলে শিশুদের আশ্বস্ত করেন।
সংলাপে আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক বলেন, সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব কাজ করতে পারবে না। কিছু কাজ পরিবার, আইনগত অভিভাবক এবং স্ব স্ব সমাজকে করতে হবে। এলাকায় যেন কিশোর গ্যাং গড়ে উঠতে না পারে সে জন্য নিজেদের সন্তানদের পরিবারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কোনো মেয়ে যেন আসা-যাওয়ার পথে ইভটিজিং এর শিকার না হয়, হলেও সে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে সে বিষয়ে সচেতন করাটা পরিবারের কাজ। আর সরকার কিন্তু বেশ ভালো ভালো উদ্যোগ নিয়েছে এসব নিয়ন্ত্রণে। ৯৯৯ নাম্বার দিয়ে যেমন অপরাধ ঘটার আগেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে, তেমনি বাল্য বিয়ে, শিশুদের অপরাধে জরানোর হোতা কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনছে। বাল্য বিয়ে বন্ধে সেবা নম্বর ১০৯ চালু আছে। এই নম্বরে ফোন করে বাল্য বিয়ে ঠেকানো যায়। অথবা থানার কর্মকর্তারা কিন্তু খবর পেলেই বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন। এজন্য কিন্তু আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর ঘুষ-দুর্নীতি সরকারের অর্জনকে ম্লান করছে। এ বিষয়গুলোতে সরকারের আরো বেশি নজর দেয়া উচিৎ।
সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মো. নুরুদ্দিন খান সাগর, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রামের অফিসার মি. উইলিয়াম গোমেজ, উন্নয়ন সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক জিন্নাত আরা আলম, ভোরের আলো’র নির্বাহী পরিচালক সায়মা আক্তার জেরিন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কর্ণফুলী এরিয়া প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন আক্তার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি মো. জমির উদ্দিন মাসুদ, চট্টগ্রাম কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন, সাগরিকা জামে মসজিদের খতিব মো. আব্দুল খালেক, ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিন তারেক প্রমুখ।