
ডেস্ক রিপোর্ট: অবৈধভাবে ইনভেস্টমেন্ট ওয়েবসাইট পরিচালনা ও প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা cry-ptobdf.cc নামে একটি ওয়েবসাইটে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়ের ফাঁদে ফেলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে
গত বৃহস্পতিবার প্রতারণাকারী চক্রের তিন সদস্যকে পঞ্চগড় সদর এবং তার পার্শ্ববর্তী থানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোসাদ্দেকুর রহমান ওরফে নীড় (৩০), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৮) এবং শাহিন ইসলাম (৩১)। শনিবার বিকেলে সিআইডির মুখপাত্র পুলিশ সুপার আজাদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে একটি অভিযোগ আসে, একটি প্রতারকচক্র ভিকটিমের নম্বরে অপরিচিত মোবাইল থেকে কল দিয়ে অনলাইনে কাজের অফার দেয়। যখন ভিকটিম রাজি হয় তখন তার সাথে প্রতারকচক্র হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। ভিকটিমকে প্রাথমিক টাস্ক দেয়, তাকে ইউটিউবে সাবসক্রিপশন করতে হবে। প্রতি ইউটিউবে সাবসক্রিপশনের জন্য ১০০ টাকা করে ভিকটিমকে অফার দেওয়া হয়।
এভাবে ভিকটিমকে প্রথম দুই দিন ৩০০-৫০০ টাকা দিয়ে তাকে কাজে উৎসাহী করে তোলে প্রতারকচক্র।
সিআইডি আরো জানায়, ‘এর মাঝে তারা ভিকটিমকে তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয়, যেখানে আগে থেকেই আরো ভিকটিম যুক্ত ছিল। সেই সাথে তাদের তৈরীকৃত ও নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইট cry-ptobdf.cc-তে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়। প্রতারকচক্রের কাছে বিকাশ ও ব্যাংকে টাকা জমা দিলে, তারা সেই টাকা ভিকটিমের রেজিস্ট্রেশনকৃত ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্টে জমা দেখানো হতো।
এভাবে ইউটিউবে সাবসক্রিপশনের মাঝে, প্রতারকচক্র ইনভেস্টমেন্টের কথা ভিকটিমের সাথে শেয়ার করে। যেখানে তাদের বিভিন্ন প্ল্যানের বর্ণনা দেওয়া হয়, যেমন পাঁচ হাজার টাকা ইনভেস্ট করলে সাত হাজার টাকা, ১০ হাজার দিলে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে তাদের বড় বড় ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান-১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদি থাকে। ভিকটিম যখন তাদের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দিয়ে বড় বড় অ্যামাউন্টের টাকা ইনভেস্ট করে, তখনই প্রতারকচক্র টাকা আটকে দেয়। তখন তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে, যেমন আপনি ভুল অ্যামাউন্ট ইনভেস্ট করেছেন, পুনরায় ইনভেস্ট করেন, আপনার টাকা ফ্রিজ হয়ে গেছে, আপনার পূর্বের টাকা বের করতে হলে, পুনরায় ডিপোজিট করুন এসব।
সিআইডি আরো জানায়, এই প্রক্রিয়ায় বর্ণিত ভিকটিমের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪২ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারকচক্র। ভিকটিমকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে এ ঘটনার নেপথ্যের অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যায় সাইবার মনিটরিং টিম।
প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ইন্টেলিজেন্স আন্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট শাখা এসংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায় এবং পরে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার কে কীভাবে কাজ করে
গ্রেপ্তার মোসাদ্দেকুর রহমান হোনীড় কৌশলে বিকাশ এজেন্ট সিম নিজের কাছে রেখে চক্রের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী প্রতারণার টাকা লেনদেন করে। মো. আনোয়ার হোসেন (৩৮) বিকাশের ডিএসও এবং এজেন্ট দোকানদারদের কাছ থেকে সিম সংগ্রহ করে মোসাদ্দেকুর রহমানকে দেয়। অপর আসামি শাহিন ইসলাম (৩১) একজন বিকাশের ডিএসও। সে অন্যান্য ডিএসওদের কাছ থেকে এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে মোসাদ্দেকুরকে দেয় এবং মোসাদ্দেকুর প্রতারণার টাকা লেনদেনে সহায়তা করে। ভিকটিম ছাড়াও দেশেল বিভিন্ন অঞ্চলের প্রচুর মানুষ এদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম জব্দ জব্দ করা হয়। এর মধ্যে চারটি বিকাশ এজেন্ট সিম রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিদের দক্ষিণখান (ডিএমপি) থানায় দায়ের করা ৪ ফেব্রুয়ারির মামলায় (নং-১১) আদালতে পাঠানো হয়েছে।