রাত সাড়ে ৮টার পর বইমেলায় প্রবেশ করা যাবে না
জানা গেছে, বইমেলা প্রাঙ্গণের গেট খুলবে প্রতিদিন বিকেল ৩টায়। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করা যাবে না।
এবারের বইমেলা জমিয়ে দেবে মেট্রোরেল
স্টল মালিকদের প্রত্যাশা, একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস এবার রাজধানীর বুকে পুরোদমে যাত্রা শুরু করা মেট্রোরেল বয়ে আনবে প্রচুর দর্শক। তাদের ভেতরে থাকবেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্রেতা-যারা মেলার বেচাকেনাকে সার্থক করে তুলবেন। বিগত বছরের তুলনায় এবার ভালো বিক্রির আশা। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরেও অস্থির ছিল রাজধানী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একপক্ষের অংশগ্রহণ এবং আরেক পক্ষের বর্জনের ঘটনায় শহর ছিল মিছিল, জ্বালাও-পোড়াও আর অস্থিরতার নগরী। পুস্তক প্রকাশকরাও এ সময় অনিশ্চিত ছিলেন আর সব সাধারণ মানুষের মতো। নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কি না, নির্বাচনের পর কি হবে- এসব নিয়েই আলোচনা ছিল সব মহলে। তবে ভালোয় ভালোয় ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বস্তি ফেরে নগরবাসীর জীবনে। প্রকাশকরাও বুঝতে পারেন বইমেলা হচ্ছে এবং কোন ঝামেলা ছাড়াই। এর মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোদমে যাত্রা শুরুর পর প্রতি ১০ মিনিট পর পর এই ট্রেনের শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে যাত্রী ঠাসা হয়ে চলা যাওয়া ভীষণ আশাবাদী করে তুলছে প্রকাশকদের। কারণ মেট্রোর যে টিএসসিতে স্টেশনে রয়েছে যার প্রান্তেই বইমেলার প্রবেশ পথ! তাদের প্রত্যাশা এবার অন্য যানবাহনসহ মেট্রোরেল দিয়েও মেলায় আসবেন বিপুল যাত্রী। তার ভেতরেই থাকবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতারা। অংকুর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, এবার পাঠকদের আনাগোনাও বেশি দেখা যাবে মনে করছি। মেট্রোরেল বাড়তি একটা সুবিধা দেবে।
এককভাবে আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি
এ বছর মেলার সব আয়োজন এককভাবে সম্পন্ন করছে বাংলা একাডেমি। স্টল বিন্যাস, প্রবেশপথ, খাবারের ব্যবস্থাসহ মেলা প্রাণবন্ত করতে একাডেমির পক্ষ থেকেও থাকছে নানা আয়োজন।মেট্রোরেল চালু থাকায় মেলায় পাঠকদের অংশগ্রহণ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে মেলার আয়োজক ও প্রকাশকদের মধ্যে। বিগত বছরগুলোর শঙ্কা কাটিয়ে এবারের মেলা আরো জমজমাট হবে আশা করছে বাংলা একাডেমি। করোনা মহামারিতে বিগত বছরগুলোতে বইমেলা নিয়ে নানা সংকটে পড়তে হয় আয়োজক ও প্রকাশকদের। করোনা মহামারি চলাকালে ২০২১ সালে মেলায় বই বিক্রি হয় মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার। ২০২২ সালে করোনার কারণে কিছুটা দেরিতে শুরু হয় বইমেলা। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ওই মেলায় প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। ২০২৩ সালে যথাসময়ে মেলা চললেও কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে বইয়ের চড়ামূল্য নিয়ে ছিল সমালোচনা। তারপরও বিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার বই। পাশাপাশি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে। এ বছর আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মেলার কাঠামোসহ অন্য সব কাজ সম্পন্ন হতো। বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করবে। এমনটাই জানিয়েছে বইমেলা কমিটি। মেলাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশে এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কমিটি। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কার্ড দেখাতে পারলেই মিলবে এ সুযোগ। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসতে শিক্ষকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলা একডেমি।
অধিবর্ষে এবারের বইমেলা হতে যাচ্ছে ২৯ দিনের
২০২৪ সাল অধিবর্ষ (লিপ ইয়ার) হওয়ার জন্য এবারের বইমেলা হতে যাচ্ছে ২৯ দিনের। বইপ্রেমী পাঠক, লেখক, প্রকাশক সব পক্ষের জন্যই খুশি হওয়ার মতো বিষয় এটি।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, প্যাভিলিয়ন ও স্টলের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা সারি। প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিক ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশপথ। গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে পাঁচদিন বন্ধ থাকত। এবার তা পূর্ণ সময় খোলা থাকবে। রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুচত্বর। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। মেলায় খাবারের দোকান থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে। চুলা বন্ধ রাখা সাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ
এদিকে বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করছি। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ছাড়া নিজেরাই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার মেলায় কোন বই থাকবে আর কোনগুলো থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেবে টাস্কফোর্স। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুস্তক প্রকাশক মালিক সমিতি নিয়ে গঠিত হবে। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় সুন্দর সুশৃঙ্খল মেলা উপহার দিতে পারব।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। যা আজ অমর একুশে বইমেলায় পরিণত হয়েছে।