ছদ্মবেশে ১৮ বছর, অবশেষে র‍্যাবের হাতে ধরা হত্যা মামলার আসামি

20

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

রাজধানীর কাফরুল এলাকার চাঞ্চল্যকর ও প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে নাজমা বেগমকে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১৮ বছর পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আজাদ কাজী ওরফে সন্ত্রাসী আজাদ ওরফে কিলার আজাদ (৪৫)’কে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

রোববার (১২ মার্চ) বিকালে বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( মিডিয়া)জিয়াউর রহমান চৌধুরী।

তিনি জানান, গত শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কাফরুল এলাকার চাঞ্চল্যকর ও প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে নাজমা বেগমকে হত্যা মামলার দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী ও ভিকটিম নাজমা বেগম একই সাথে রাজধানীর কাফরুল থানার এলাকায় বসবাসসহ করতো, একই সাথে মাদক ব্যবসা করতো। মাদক ব্যবসার সুবাদে ভিকটিমের সাথে মাদক ব্যবসায়ী আজাদ কাজী ওরফে সন্ত্রাসী আজাদ, সিটু, হৃদয়, মানিক, হিরা এবং আমিরের পরিচয় হয়। ভিকটিম নাজমা বেগম উক্ত বিবাদীদের সাথে র্দীঘদিন ধরে অবৈধ মাদক ব্যবসা করে আসছিল।

মাদক ব্যবসার একপর্যায়ে মাদক ব্যবসার টাকা নিয়ে ভিকটিম নাজমা বেগম এর সাথে মাদক ব্যবসায়ী মানিক এবং কাজী আজাদ ওরফে সন্ত্রাসী আজাদ এর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে গত ইং ০৮/০৭/২০০৫ তারিখ সকাল অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার সময় হৃদয়, মানিক, হিরা, আজাদ এবং আমির ভিকটিম নাজমা বেগমের বসত ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ভিকটিম নাজমা বেগমকে ঘরের বাহিরে বের করে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়।

ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মানিক, হিরা, আজাদ কাজী ওফে সন্ত্রাসী আজাদ, সিটু, হৃদয় এবং আমির সহ অজ্ঞাতনামা আরো ০২/০৩ জনকে আসামী করে গত ইং ১০/০৭/২০০৫ তারিখ ডিএমপির কাফরুল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-১৪(০৭)০৫ তারিখ-১০/০৭/২০০৫ ইং, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলা হওয়ার পর আসামী হৃদয় ব্যতিত মানিক, হিরা, আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ, সিটু এবং আমির গণদেরকে কাফরুল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামী হৃদয় আত্মগোপনে চলে যায়।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত সকল আসামীরা ১৫ মাস কারাবাস থেকে জামিনে মুক্তি পায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় আসামী মানিক, হিরা, আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ, সিটু, হৃদয় এবং আমির গণদেরকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে চার্জশীটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ভিকটিম নাজমা বেগম হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে ঢাকা জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ’কে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। পলাতক আসামী আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ’কে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম থেকেই গত ১৮ বছর পলাতক ছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ ও আরো যাচাই বাচাই শেষে জানা যায় যে, উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলা, ০৮ টি মাদক মামলাসহ মোট ১৮টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়।

আসামীর জীবন বৃত্তান্তঃ আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী ১৯৭৮ সালে পাবনা জেলার বেড়া(বর্তমান আমিনপুর) থানাধীন রতনগঞ্জ এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। সে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেননি। ব্যক্তিগত জীবনে আসামী বিবাহিত এবং বর্তমানে তার পরিবারের স্ত্রীসহ চার সন্তান রয়েছে।

আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় আসামীর জীবনযাপনঃ আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় এবং ঐ মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য উক্ত হত্যা মামলার কারাবাস শেষে আসামী আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ ডিএমপির কাফরুল এলাকা থেকে পালিয়ে গাজীপুর জেলায় চলে গিয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। গত ১৮ বছর ধরে আসামি আজাদ কাজীওরফে সন্ত্রাসী আজাদ’ নাম পরিবর্তন করে মো. আসিফ নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং ২০১৩ সালের শুরুর দিকে নিজ জেলা পাবনার বেড়া থানা এলাকা গিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে পরিবারসহ বসবাস করে।

উক্ত হত্যার বিষয়ে আসামীর নিজ এলাকায় জানাজানি হলে উক্ত আসামী নিজ এলাকা থেকে যশোরে পালিয়ে যায় এবং সেখানে ভেকুর হেলপার হিসাবে কাজ করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে শুরুর দিকে যশোর থেকে মানিকগঞ্জ জেলার খাশির চর এলাকায় জনৈক রুহুল আমিন এর বাড়ীতে অবস্থান করে কেয়ার টেকার হিসাবে মো. আসিফ নামে আত্মগোপনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

ডিআই/এসকে