বেতাগীতে বিলুপ্তির ছয় মাসেও হয়নি কমিটি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পুড়ছে ছাত্রলীগ

25

মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না (বেতাগী বরগুনা):

বরগুনার বেতাগীতে প্রায় ছয় মাস ধরে নেই ছাত্রলীগের কমিটি। এ কারণে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে দেশের ঐতিহ্যের পতাকাবাহী এ ছাত্র সংগঠনটির কার্যক্রম। আর এ সুযোগে অন্য ছাত্র সংগঠন তাদের সাংগঠনিক তৎপরতায় এগিয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘ ছয় মাস উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটিবিহীন চলায় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভেতর পদ নিয়ে চলছে উত্তেজনা-সংঘাত। কে কার লোক এমনই গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পুড়ছে নেতারা। এতে আহতও হয়েছেন অনেকে। শুধূ ছাত্রলীগই নয়, এর প্রভাব পড়ছে দলের সর্বত্র। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা এ নিয়ে মুখ না খুললেও সব নেতারাই এখন ভ’গছে এই সমস্যায়।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এখানকার দলীয় একাধিক নেতাকর্মিদের কাছে ছাত্রলীগের কী অবস্থা জানতে চাইলে তাদের চোখেমুখে বিরক্তিরভাব ফুটে ওঠে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন সমূহের নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন,‘এখানে তো কর্মির চেয়ে নেতা বেশি। ভালোমন্দ ও যোগ্য-অযোগ্য সবাইতো পদ চায়।’

জানা গেছে, বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেই কমিটির সভাপতি বিএম আদনান খালিদ মিথুনের ইয়াবা সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এর দুই দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কারণ দেখিয়ে বেতাগী উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ।

এর একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করতে ২৭ অক্টোবর বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মী সভা করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ। কর্মী সভায় নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। উপজেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত সে সময় জমা দিলেও দীর্ঘ ছয় মাসেও হয়নি কমিটি। ফলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগসহ তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগের পরিচয়ে অংশগ্রহণ করে থাকেন। কমিটি না থাকায় হতাশায় ভুগছেন নেতা-কর্মীরা।

বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সিফাত শিকদার বলেন, ‘পদপ্রত্যাশী হিসেবে আমিসহ অনেকে জেলা ছাত্রলীগের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগের নেতারা এখানে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হবার কারণসহ বেশকিছু কারণে এখনও নতুন কমিটি দেওয়া হয়নি। আমার প্রত্যাশা অভিলম্বে এখানে একটি বিতর্কমুক্ত কমিটি উপহার দেওয়া হোক’

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন,এখানে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ছাত্রলীগের কর্মী সভার পরে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তাš Íনেওয়ার পরও দীর্ঘ দিনেও কি কারণে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেয়া হচ্ছেনা তা বুঝতে পারছি না। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আমার দাবি তারা যেন বিবাহিত, অছাত্র,মাদকাসক্ত, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত এমন লোকজন ব্যতিরেকে এখানে একটা দ্রুত পরিচ্ছন্ন কমিটি গঠন করেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আমিন হাওলাদার বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে আমরা নেতৃত্বহীন অবস্থায় আছি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই দ্রুত কমিটি না দেওয়া হলে অন্য ছাত্র সংগঠন সুযোগে নেবে। আমরা চাই পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত যাচাই বাছাই করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে শীঘ্র ছাত্রলীগের একটি নতুন কমিটি ঘোষনা করা হোক।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান বলেন, বেতাগী উপজেলায় কর্মী সভা করে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা নিয়েছি। কিছু ক্রুটি বিচ্যুতির কারণে নতুন কমিটি দিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা নিয়ে আমরা খুব শীঘ্রই এখানে একটি নতুন কমিটি ঘোষণা দিব।

উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় অজয়। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, কমিটি না থাকায় কার্যক্রম থমকে গেছে এমনটা নয়। ঝিমিয়ে পড়া ও সংকট তৈরি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে জেলা ছাত্রলীগ সহযোগিতা চাইলে সাবেক নেতা হিসাবে সব সময় প্রিয় সংগঠনের পাশে রয়েছি। আগামীতেও থাকবো।