
মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না (বেতাগী বরগুনা) :
কালের আবর্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাঙালির এককালের বিনোদনের প্রধান অনুষঙ্গ যাত্রাপালা। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাম যাত্রা পালা কির্ত্তন।
আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, হাতের মুঠোয় বিনোদনের সহজলভ্যতা আবর্তে পড়ে বাঙালির লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য এই যাত্রা পালা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।যাত্রাপালা দেখার জন্য দর্শকরা রাতভর বিনিদ্র থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আর অপেক্ষায় প্রহর গোণেন না।
শীতে মেলা বসবে, যাত্রাপালা আসবে-সেই প্রতীক্ষায় থাকে না আর গ্রামের মানুষ।যাত্রার এই করুণ দশার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের মানুষগুলো।
বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তাদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকার যাত্রা শিল্পের জন্য নীতিমালা ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা করলেও এই শিল্পের সংকট কাটছে না। মোকামিয়া গ্রামের রামযাত্রা পালা কির্ত্তনের শিল্পী পঙ্কোজ হাওলাদার বলেন, রামযাত্রা পালায় এখন উপার্জন কম। একারনে বাধ্য হয়ে যাত্রাশিল্পের পেশা পরিবর্তন করে অন্য মুদিমনোহরী ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে।জানা গেছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রামায়ণ গ্রন্থের আলোকে রামযাত্রা পালা কির্ত্তন অনুষ্ঠিত হতো।
বিশেষ করে কারো বাবা মা মারা গেলে তাদের আত্মার মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্য শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে রামায়ণের আলোকে লক্ষ্মন শক্তিসেল, রাবনবদ, মেঘনাথ বদ, অশ্বমেধযজ্ঞ প্রভৃতি যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হতো। এসব পালা কির্ত্তন দেখার জন্য গ্রামের মানুষের মধ্যে প্রবল আর্কষণ ছিলো। সূর্যবংশের রাজা দশরথ, প্রভূ রাম, লক্ষ্মন, ভরত, সীতা , বিভীষণ, রাবন, হনুমান, লব,কুশ এসব চরিত্রের অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। মনোমুগ্ধকর পোশাকে সজ্জিত হয়ে রামযাত্রা পালার চরিত্রগুলো অভিনয় দেখা যেতো।
বর্তমানে আগের মত এসব যাত্রাপালা দেখা যাচ্ছে না।উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের রামযাত্রা পালা কির্ত্তনের পরিচালক সুধীর রঞ্জন মন্ডল বলেন,’ শিল্পীদের বেতন, পোশাক ও শিল্পীদের সাজসজ্জা খরচ মিটিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সমস্যা হচ্ছে।বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন,’ আগে গ্রাম বাংলার রামযাত্রা পালা দেখার জন্য মানুষের মধ্যে আর্কষণ ছিল। এখন শিল্পীও নেই, আর রামযাত্রা পালা কির্ত্তন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তবে এসব শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসতে হবে।মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না বেতাগী বরগুনা ০১৭১৬৯৯০৮৫৩