
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র- ২ শাহজালাল বাদলের প্রথম স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম নিঝু (৩০) অবশেষে আত্মহত্যা করেছেন।
ভরণ-পোষন ও কোন খোঁজ খবর না নেওয়া স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার দাবিতে গত বছরের আট ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলন করেও ব্যর্থ হয়ে দশ বছর অপেক্ষার পর দাম্পত্য বিরোধের সুরাহা করলেন জীবন দিয়ে। গতকাল রবিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে চাষাঢ়া এলাকার ২০৮/৫ নম্বর মেলা ফুড নামক সাততলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন তিনি। পরে গুরুতর আবস্থায়
তাকে শহরের ভিক্টোরিয়া (জেনারেল) হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সিদ্ধিরগঞ্জের নায়াআটি মুক্তিনগর এলাকার নূর সালামের ছেলে। তিনি বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসাসি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ভাতিজা। চতুর্থ স্ত্রী চাঁদনী আক্তার
জ্যেতিকে নিয়ে তিনি তার নির্বাচিত এলাকার নয়াআটি মুক্তিনগরে নিজ বাড়ীতে থাকেন।
নিহত সাদিয়া ইসলাম নিঝু চাষাঢ়া এলাকার আলি হায়দার শামীমের মেয়ে। তিনি নিঝু বিউটি পার্লালের মালিক ছিলেন। নিঝুর মা ঝর্না হায়দার জানান, দুপুরের দিকে সে ছাদে যায়। হঠাৎ ছাদ থেকে পরে গেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নুরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারন নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি।মারদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হবে।কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে আমার কোন দ্বন্ধ নেই। ছেলে শহরের একটি স্কুলে পড়ে। আমি সবসময় তার খোঁজখবর রেখে আসছি।
জানা গেছে, বাদলের সঙ্গে নিঝুর বিয়ে হয় ২০০৭ সালে। বাদল সন্তান জন্ম দানে অক্ষম হওয়ায় নিঝু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে এক ছেলে সন্তানের মা হয়। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। ২০১১ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পর বাদল বিয়ের নেশায় পরে। একে একে আরো চারটি বিয়ে করেন। প্রতিবাদ করায় বাদল নিঝুকে মারধর করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়। এর পর থেকেই শহরের চাষাঢ়ায় সন্তানকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন নিঝুম। একই ভবনের তিন তলায় নিঝু বিউটি পার্লার চালাতেন। ভরণ-পোষন ও কোন খোঁজ খবর নিতনা স্বামী বাদল। সন্তানকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্বামীর বাড়ী গেলেও স্ত্রীর অধিকার পেতনা। স্বামী বাদলের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেও মিল না.হওয়ায় গত বছরের আট ফেব্রুয়ারির নিজ বাড়ীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন সাদিয়া নিঝু। সেদিন স্বামী বাদলের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া একাধিক বিয়ে, বরণ পোষণ না দেওয়াসহ নানান অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। এছাড়াও কোন স্ত্রী তার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাকে পাগল ও নেশাগ্রস্থ
বলে অপবাদ দেন। স্ত্রীর এসব অভিযোগের বিষয়ে তখন কাউন্সিলর বাদল বলেছিলেন, নিঝু নেশাগ্রস্থ। তার সুস্থতার জন্য রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হবে।