
সোহেল সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা :
শুরু হয়েছে ট্রেনে ভ্রমণে টিকিট কাটার নতুন নিয়ম। বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) ও জন্ম নিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট কাটা শুরু হয়েছে। বিদেশিদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধন করে টিকিট কাটতে হবে।
টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণে জরিমানা করা এবং ভাড়া আদায় সহজ করার লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি অবগত না থাকায় স্টেশনে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাটতে গিয়ে সমস্যায় পড়া যাত্রীদের বুধবার দিনব্যাপী ফ্রিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে নিবন্ধন করে দিয়েছেন দুই কলেজছাত্র।
শহরের কাজীপাড়ার আতিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। তার সঙ্গে থাকা নিলয় ভূঁইয়া বিজয়নগরের শফিকুল ইসলাম কলেজে অনার্সে পড়াশোনা করেন। বুধবার সারাদিনই দুজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটতে আসা যাত্রীদের যাদের নিবন্ধন নেই, তাদের নিবন্ধন করে দিয়েছেন। এই দুই কলেজছাত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রেনের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা
বুধবার টিকিট কাটতে আসা মাকসুদুর রহমান নামে এক যুবক বলেন, আমাকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় যেতে হবে। তাই টিকিট কাটতে এসেছিলাম। আসার পর আমার জানা ছিল না ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে টিকিট কাটতে হয়। কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবো তাও বুঝতেছিলাম না। দুজন যুবক আমাকে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছেন। পরে টিকিট কাটলাম। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আলাউদ্দিন নামে আরেক এক ট্রেনযাত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন প্রায় কালোবাজারিদের দখলে। তিন/চারদিন আগেও কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যেত না। কিন্তু আজকে এসে দীর্ঘদিন পর কাউন্টারে টিকিট পেলাম। নতুন পদ্ধতি হওয়ায় এর প্রক্রিয়া অনেকে জানেন না। দুই তরুণকে দেখলাম রেজিস্ট্রেশন করতে সহায়তা করছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে স্টেশনে রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করার জন্য কাওকে রাখলে সুবিধা হতো।
মোবারক হোসেন নামে এক যুবক বলেন, স্টেশনের কাউন্টারে গেলে জানায় রেজিস্ট্রেশনের পর টিকিট দেবে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করবো বুঝতেছিলাম না। একটু দাঁড়াতেই দেখলাম দুই তরুণকে অনেক মানুষ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি তারা যাত্রীদের মোবাইলে রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছেন। পরে আমিও তাদের সহায়তায় রেজিস্ট্রেশনের পর টিকিট কাটলাম। নিঃস্বার্থভাবে তাদের এ কাজ অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।
আতিকুর রহমান বলেন, স্টেশন এলাকায় আমরা অবসর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ও সাধারণ মানুষ মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালাতে জানেন না। তাছাড়া কিছু মানুষ অ্যানড্রয়েড মোবাইলই ব্যবহার করেন না। আগে থেকেই আমরা ধারণা করতে পেরেছিলাম, নতুন পদ্ধতিতে যাত্রীদের টিকিট কাটতে প্রথমদিকে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তাই দুজন এসব যাত্রীদের সহায়তা করতে চেষ্টা করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন পদ্ধতি প্রশংসা কুড়িয়েছে। বুধবার পাঁচদিনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়। সকাল থেকে যারা রেজিস্ট্রেশন করে এসেছেন, তাদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। আর যাদের সমস্যা হচ্ছে, তাদের দেখলাম আতিক ও নিলয় নামে দুই তরুণ সহায়তা করেছেন। পাশাপাশি আমরাও তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য ৯৩৯টি আসন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। প্রতিমাসে কোটি টাকার বেশি সরকার এই স্টেশন থেকে আয় করছে।