জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া ভিডিওতে র‍্যাবের পর্যালোচনা

19

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব -৭
(২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষনরত আরো ৪ জনকে গ্রেফতার  করে। গ্রেফতার  আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আমির আনিছুর রহমান এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ বিষয়ক এবং উগ্রবাদী বক্তব্যের একটি ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারন বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ভিডিও পর্যালোচনা করেছেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২২  জানুয়ারী এই সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে গ্রেফতার  করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের আর একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে সনাক্ত করা হয়। গতকাল উদ্ধার হওয়া ৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে সনাক্ত করা হয়।

তিন আরও বলেন, এই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি ২২ জানুয়ারী উদ্ধার হওয়া ভিডিওতেও ছিলেন। আজকের এই ভিডিওতে নতুন করে আরও ৪ জন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তারা হলেন, শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরন, ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ (ভিডিও এর তথ্য অনুযায়ী গত ৬-৬-২০২২ তারিখে মৃত)।

র‍্যাবের পর্যালোচনা বলছে, গত ২৩ জানুয়ারী প্রকাশিত ভিডিও এবং আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভিডিওতে সর্বমোট সনাক্ত জঙ্গিদের মধ্যে র‌্যাব ফোর্সেস এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ২টি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই (নারায়নগঞ্জ থেকে নিখোঁজ রিয়াসাত রায়হানের প্রাইভেট টিউটর) এবং ভিডিও এডিটিং করেছেন পাভেল।

ভিডিওটির এডিট ও ভয়েসের বিষয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ তরুণ আবু বক্করের মা আম্মিয়া বেগম ছেলের সন্ধান চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। সেই আবু বক্কর তারই শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই ভিডিওর ব্যাকরাউন্ডে আল আমিনের ভয়েস ভিডিও ব্যবহার করা হয়। ভিডিওটি এডিট করেন আরেক জঙ্গি নিখোঁজ তরুণ পাভেল। যিনি বাড়ি ছাড়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছেন। এই ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্য ছিলো আর্থ সংগ্রহ ও সদস্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ছড়ি দেওয়া।

ননমুসলিম পার্থকুমারের জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন পার্থ কুমার দাস। পরে তিনি কাকড়াইল এসে পেশাগত কাজ করছিলেন। এই সময়ে সিরাজ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই সিরাজের মাধ্যমে অনেকেই এই সংগঠনে জড়াতে উদ্ধুদ্ধ হন। সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে। সিরাজ পার্থকে বিদেশে চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখান। পরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে যান এবং ট্রেনিং গ্রহণ করেন।

জঙ্গি সংগঠনটির তৈরি করা ভিডিও কতদূর ছড়িয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা গ্রেফতার  চারজনের মোবাইল থেকে চারটি ভিডিও পেয়েছি। যা গত বছরের ২৯ নভেম্বর তাদের কাছে এসেছে। তবে ভিডিওটি তাদের নিজেদের মধ্যেই ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়নি। আমরা যতটা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি, ভিডিওটির কাজ চলমান ছিলো। নিজেদের মধ্যেই ছিলো। অভিযান শুরু হওয়া কাজ শেষ করতে পারেন নি।

এখন পর্যন্ত কি পরিমান অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযানে সংগঠনটির অর্থ শাখার উপ প্রধানসহ বেশ কয়েকজনটে গ্রেফতার করা হয়। আমরা যে তথ্য পেয়েছি এতে তাদের ডোনার শাখার একাধিক শাখা ছিলো। দেশে ও বিদেশে তাদের বেশকিছু ডোনার সদস্য রয়েছেন। মুলত সংগঠনটি সদস্যরা মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ভালো কাজে অর্থ খরচ করার নামে তারা এই অর্থ সংগ্রহ করেন। আমাদের অভিযানে অর্থ শাখার হাবিবুল্লাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের সময়ে সাত লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। যেটাকা তারা কুকিচং থেকে পেয়েছিলো অস্ত্র কেনার জন্য। তারা এই অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বজনদের কাছ থেকে মানবিক কাজের জন্য সংগ্রহ করেছিল। পরে যা অস্ত্র কেনাসহ নিজেদের বিভিন্ন প্রস্তুতির জন্য খরচ করছিলেন।

ড. আহমেদ নিহতের বিষয়টি তারা নিজেদের ভিডিওতে রেখেছে। তিনি ২০২২ সালের ৬ জুন নিহত হন। তারা ভিডিওতে দেখিয়েছেন, অন্য একটি পাহাড়ি সংগঠনের সঙ্গে স্বসস্ত্র লড়াইয়ের সময়ে তিনি নিহত হন। তার নামে একটি ক্যাম্পের নাম করণ করা হয়।

কুকি চিং ন্যাশনাল নিজেদের স্বার্থের জন্যই এই সংগঠনটিকে তারা আশ্রয় ও রশদ দিয়েছে। কেএনফের স্বসস্ত্র সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০। সেখানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা অবস্থান করেছে। এতে তাদের সাংগঠনিক স্বক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এরবাইরে কোনো স্বার্থ রয়েছে কি না সেটি তদন্ত করতে হবে।

ডিআই/এসকে