নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
সামান্য বৃষ্টিতে চারিদিকে থইথই করছে বৃষ্টির পানি। পুকুরগুলো পানিতে ভেসে একাকার। আর ধানের জমিতে বড় বড় কচুরী পানা। কাজে আসছে না সরকারি খালগুলো। হচ্ছে না পানি নিস্কাশন, আবাদ হচ্ছে না কৃষি জমি। আর এভাবেই অনাবাদে পড়ে থাকছে শতশত বিঘা দুই ফসলি আবাদী জমি। এ যেন কৃষির সর্বনাশ। সেই সাথে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজারো পরিবার। রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া-ভুলতা-গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বেড়িবাধেঁর অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১০ গ্রামে এমন চিত্রের দেখা মিলে।
* সরকারি খালে পাকা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি নির্মাণ
* আটকে যাচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা
* কৃত্রিম জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম
* মাছ চাষেও নেই সুবিধা, যখন তখন পুকুর ভেসে যায় কৃত্রিম বন্যায়
* ভারী বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তায় ৩/৪ ফুট পানি জমে, শিল্পকারখানার দুষিত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের রাস্তাঘাটে
* ভোগান্তি পোহাচ্ছে পৌরসভা ও তিন ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার
* ইরিগেশন প্রজেক্ট হওয়া স্বত্তেও অনাবাদি পড়ে থাকছে শতশত হেক্টর কৃষি জমি
* খাল উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের/স্থানীয় প্রশাসনের নেই তোরজোর উদ্যোগ
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া-ভুলতা-গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ২০ গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এসব এলাকার কোথাও ৬ মাস কোথাও আবার সারাবছরই জলাবদ্ধ থাকে। এসব জমির শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশই অনাবাদি পড়ে থাকে। হাটাব বারৈপাড় এলাকায় কানি বিলের পিঠাগুড়ি অংশে খালের উপর বাগান বাড়ি নির্মাণ করায় বাধাঁপ্রাপ্ত হচ্ছে পানির স্বাভাবিক চলাচল। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে টাটকির খাল, সুতালরির খাল, দাগিরমার খাল, কালাদী থেকে গোলাকান্দাইল পর্যন্ত ১৮০ফিট এশিয়ান হাইওয়ে সংলগ্ন সরকারি খাল দখল হয়ে আছে। অবৈধভাবে সরকারি খালের উপর গড়ে ওঠেছে একাধিক বালুর গদি, কোথাও গড়ে ওঠেছে সাবানের ফ্যাক্টরি, এনডিই রেডিমিক্সসহ অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। তাতে একদিকে পানি স্বাভাবিক চলাচল বাধাঁগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বালুর গদির শতশত টন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাশয় ও জলাবদ্ধতা। ওই সমস্ত এলাকায় ইরিগেশন প্রজেক্ট বা বেড়ি বাধেঁর ভেতরে এমন জলাবন্ধতায় শুধু কৃষি আবাদই ব্যহত হচ্ছে না মানুষের জীবন জীবিকাও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এছাড়াও কারখানার দুষিত বর্জ্য খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়ায় পানিবাহিত রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে এলাকার মানুষের মধ্যে।
টেকপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকার ৪/৫ টি খাল বেইনিভাবে দখল করে খালের উপরে অর্ধশত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিপুর্বে গ্রামবাসীর পক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের লিখিত দরখাস্ত দিয়েও কোন সুফল পাইনি। যারা খাল দখল করছে তারাই আবার জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে।
বেলতলা এলাকাল শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকারি খাল ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে এনডিই রেডিমিক্স, মেট্রো ওয়ার্কশপ, ইনডেক্স পাওয়ারপ্ল্যান্ট ও এটলাস টয়লেট্রিস নামক প্রতিষ্ঠান। খালের পানি চলাচল বন্ধ করে দেদারচে ব্যবসায় করছে কতিপয় মহল। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী বলেন, কৃষি প্রধান দেশে এখন চলছে হাউজিং ব্যবসা। প্রশাসনের লোকজন কিছুই বলে না, জোড়পুর্বক জমি দখল করে। কিছু বললেই বাড়িঘরে হামলা দেয়। আ.লীগ থাকতেও জমি জবরদখল করতো এখনও করে।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া- ভুলতা- গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে “নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রজেক্ট”র (এনএনডি) আওতায় এনে বেড়িবাধঁ নির্মাণ করে “জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি” (জাইকা) নামক প্রতিষ্ঠান। বেড়িবাধেঁর ভেতরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে (একোয়ার) সরকারিভাবে খনন করা হয় খাল। খালের পানি নিস্কাশন ও উত্তোলনের কাজে স্থাপন করা হয় বানিয়াদী সেচ প্রকল্প। বসানো হয় ৪ টি সেচ পাম্প। তাতে বর্ষাকালে বা ভারী বর্ষনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিস্কাশন ও আবাদ মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি খাল, রাস্তা ও খাস জমি উদ্ধারে কাজ করছি। ইতিপুর্বে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি খাল ও রাস্তা উদ্ধার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমার মোবাইল কোর্ট টিম সর্বদা কাজ করছে।