এম,শাহজাহান, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ শেরপুরের নকলা উপজেলার বাড়ইকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়াকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে পা কেটে ফেলে দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিক্ষোব্ধ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। রবিবার ১১টার দিকে বাড়ইকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নকলা শহরে এসে পুরাতন সিনেমা হল চত্বরে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপি বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে আহত শাকিলের বাবা আমির হোসেন, মা ভানু বেগম, তার ফুফু ময়না বেগম, বড় বোন কোকিলা বেগমসহ শাকিলের বন্ধু-বান্ধব, তার সহপাঠি, অভিভাবক ও এলাকাবসীর পক্ষে অনেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। এবিষয়ে ১৬ জুন শাকিলের সহপাঠী হাসিবুল (১৫), হাসিবুলের ভাই মো.অন্তিম (২২), চাচা মো. ইস্রাফিল (৪৯) সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে নকলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন শাকিলের বাবা। কিন্তু অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে থানার সামনে দিয়ে যাতায়াত করার পাশাপাশি সেনা ক্যাম্প সংলগ্ন সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার নির্বিঘ্নে দলালি করে আসছে আসামিরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বুক ফুলিয়ে চলায় শাকিলের পরিবারের লোকজন ও তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী মেধাবী শাকিল মিয়ার উপর নৃশংস হামলা করে পা কেটে ফেলার অপরাধের ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন। ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে এবং থানায় মামলা করার পরেও এখনো সুষ্ঠু বিচারের কোন আলামত না পাওয়ায় চিহৃত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবিতে বাড়ইকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাবাসীর উদ্যোগে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয় বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে নবম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী শাকিল মিয়াকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর বাঁ পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়।
উল্লেখ্য, সহপাঠির সাথে কথা-কাটাকাটির জেরে গত ১৫ জুন রবিবার শাকিলের ওপর রাম দা দিয়ে হামলা চালায় হাসিবুলসহ তার সহযোগীরা। ঘটনার পরে তাকে প্রথমে নকলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আবার সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। এরপর প্রেরণ করা হয় হৃদরোগ হাসপাতালে। এভাবে সরকারি হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে শাকিলের পায়ের মাংসে পচন ধরে যায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে ঢাকার বেসরাকারি প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে তার আঘাতপ্রাপ্ত বাম পায়ে অপারেশন করে পা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে।
এরপরে, গত বুধবার ছেলের ‘কেটে ফেলা পা’ নিয়ে নকলা সেনাক্যাম্প, থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও শেরপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে বিচার দাবি করেন তার বাবা আমির হোসেন। পরে পুলিশ ‘কাটা পা নিয়ে আদালতের মাধ্যমে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।এবিষয়ে নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, ‘আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে। তবে সব আসামী পলাতক রয়েছে বলেও তিনি জানান। এদিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম হতাশাজনক বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকার অনেকে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীসহ সবাই শাকিলের ওপর ন্যাক্কার জনক হামলার ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করছেন।