অবশেষে বিগত কয়েকটি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা'র প্রকল্পে প্রাক্কলন এবং ব্যয় করা সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা নিয়ে নানা অভিযোগের মুখে আলোচিত নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি অনিয়মের ঘটনা তদন্তে নেমেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু কোন এক অজানা রহস্যে বরাবরের মত ঝুলে আছে তাদের কাজ। ৩১ আগস্ট তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও কোন কিছুই হয়নি। এই সংক্রান্ত একটি চিঠিও এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। চিঠি অনুসারে ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের আরএপিপি'র কয়েকটা কাজে অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং মতামত গ্রহণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল ওই তারিখে, যা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছুটা গোপনেই চলছে তদন্ত কমিটির কাজ। অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা ব্যপক প্রভাবশালী হওয়ায় এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। যদিও তাদের আশা ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি কোনরকম প্রভাবিত না হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। কিন্তু এখন অব্দি সে আশায় গুড়ে বালি।
প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এই বিষয়ে বলেছেন, ঘটনা তদন্তে কাজ চলছে। অবশ্যই অভিযোগ প্রমানিত হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত কমিটি সঠিকভাবেই কাজ করতে পারছে।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলের সঙ্গে কথা বলার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার অফিসে কয়েকবার গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সেলফোনে যোগাযোগ'র চেষ্টা করে, কয়েক দফা এসএমএস করেও তার সারা পাওয়া যায়নি।
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দু শেখর মন্ডলকে কয়েক মাস আগে বদলি করেও তা কার্যকর করতে পারেনি গণপূর্ত অধিদপ্তর। বরং এক সপ্তাহের মধ্যে বদলির আদেশ স্থগিত করাসহ উল্টো প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নথি উপস্থান করা হয়। নজিরবিহীন ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতবাক করে।
২০০৪ সালে বিএনপি সরকার আমলে সহকারি প্রকৌশলী পদে চাকুরী লাভ, অতঃপর দলীয় লবিং কাজে লাগিয়ে ভালো ভালো জায়গায় পোষ্টিং। তবে স্বর্ণেন্দু সোনার হরিণের নাগাল পান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পর। যার বদৌলতে গত ৭ বছর দু’হাতে পকেটে পুরেছেন বিপুল অবৈধ অর্থ এবং পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। তার এই হুন্ডির (পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত) সকল ব্যবস্থাপনা তিনি এবং তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ৩ জন মিলে করেছেন।
সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ পক্ষে থাকায় উপ-সহকারি প্রকৌশলী, সহকারি প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের বদলী ও পদায়নে তার প্রভাবের কথা আর বলতে। এটি পুরো গণপূর্ত অধিদপ্তরে একটি ওপেন সিক্রেট। সীমাহীন বদলী বাণিজ্য'র পাশাপাশি পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে গড়ে তোলেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্তা এবং কয়েকজন ঠিকাদার এই বিষয়গুলো খণ্ডন করে বলেন, ঢাকা জোনের সবগুলো বিভাগের মধ্যে ঢাকা নগর গণপূর্ত বিভাগ হলো সব থেকে লোভনীয় স্থান। এই পদে পদায়ণ পেতে কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতেও নির্বাহী প্রকৌশলীরা কুন্ঠাবোধ করেন না। স্বর্ণেন্দুও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং সে যোগদান করেই বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত অর্থের টেন্ডার আহবান করে সরকারি টাকা লুটপাটের আয়োজন করেন। যেমন গেল অর্থ বছরে তার ডিভিশনে বরাদ্দ আছে ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু তিনি ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নির্বাচন, কাজ বন্টন ও চুক্তিবদ্ধ করে ২০ থেকে ৩০% পর্যন্ত কমিশন গ্রহন করেছেন। এছাড়া মেরামত কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রকার কাজ না করেই কেবলমাত্র খাতা কলমে সব ঠিক রেখে ঠিকাদারদের সাথে ৫০/৫০ ভাগাভাগি চুক্তিতে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ টাকাই নিজ পকেটে পুরেছেন। এর আগের অর্থ বছরের মেরামত কাজের টেন্ডার ফাইলগুলো নীরিক্ষা করলেই এসব অপকর্মের প্রমাণ মিলবে।