রাজধানীর বিমানবন্দর থানার মানিকদী এলাকার একটি দোকান থেকে ১৪ লাখ টাকার সিগারেট চুরির ঘটনায় একটি মামলা তদন্তে নেমে অত্যন্ত ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান বিভাগ।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল থেকে সিগারেট চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সড়ক ধরে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছেন। আর এই পুরো পথে চোরের লাগাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পথের পাশে থাকা অন্তত দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছেন। শনাক্ত করেছেন চুরির সঙ্গে জড়িত চোর চক্র ও চোরাই মামলাল ক্রেতাকে। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে মানিকদীর সিরাজ মার্কেটের হাসান স্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ সিগারেট চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। সেই সঙ্গে নিজেদের আড়াল করতে চোরেরা প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর নিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয় চোর চক্রের তিন সদস্য ও চোরাই মাল ক্রেতাকে।
গ্রেফতারকৃত চোর চক্রের সদস্যরা হলো- মো. নুর ইসলাম(৩১), রুবেল খা (২৪), মনির মিয়া(২৩) ও চোরাই সিগেটের ক্রেতা রিফাত হাসান ভূঁইয়া (২৯)। রবিবার তাদের গ্রেফতার করা হয়।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় চোরাই সিগারেট পরিবহনে ব্যবহার করা পিক আপ, ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয় ডিভিআর ও চুরি যাওয়া বেশ কিছু সিগারেট।
রবিবার ( ১৭ ডিসেম্বর ) রাতে চুরি যাওয়া মালামাল ও একেরপর এক সিসিটিভি বিশ্লেষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার(এডিসি) এস এম রেজাউল হক।
তিনি বলেন, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী এলাকার একটি দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ সিগারেট চুরির ঘটনায় ফিরোজ মিয়া(৬৫) নামের এক ব্যবসায়ী একটি মামলা করেন। এই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ৩০ কিলোমিটার সড়কের দেড়শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। এই সকল ফুটেজ ধরে শনাক্ত করা হয় তিন চোরকে, উদ্ধার করা হয় চোরাই সিগারেট।
চোর চক্রের বিষয়ে এডিসি রেজাউল হক বলেন, এই চোর চক্রের সদস্যরা পেশায় বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল পরিবহন করা। তারা এই পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চুরি করত। তারা মিনি ট্রাক দিয়ে বাসা বাড়ি ও দোকানের মালামাল পরিবহন করে। এই সকল মালামাল পরিবহনের সময় তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা রেকি করে এবং সুবিধামতন জায়গায় চুরি করে। এই চক্রটি রাজধানীসহ শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গোডাউন থেকে সয়াবিন তেল, নারিকেল তেল, সাবান, শ্যাম্পু ও দামি ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চুরি করত। এই চক্রের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
যেভাবে শনাক্ত করা হয় চোর: মামলার তদন্তে নেমে প্রথমেই ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে একটি মিনিট্রাক সনাক্ত করা হয়। রাজধানীল কালশী ফ্লাইওভার-খিলক্ষেত-কুড়িল ফ্লাইওভার, শাহজাদপুরের ক্যামব্রিয়ান কলেজ, মেরুল বাড্ডা ব্রিজ, মেরাদিয়া-ডেমরা স্টাফ কোয়াটার সারুলিয়া, কাঁচপুর ব্রিজ, মদন চৌরাস্তা, বিসিক শিল্প নগরীসহ ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ৩০ কিলোমিটার পথ সেই মিনিট্রাকটির গতি অনুসরণ করা হয়। এই পথের প্রায় দেড় শতাধিক সিসিক্যামেরা বিশ্লেষণ করা হয়। ফুটেজে দেখা যায় মিনি ট্র্যাক থেকে সিগারেট নামিয়ে রিকশায় করে পরিবহন করা হয়। পরবর্তীতে রিক্সা চালককে খুঁজে বের করা হয়। রিক্সা চালক নারায়ণগঞ্জের মুদি ব্যবসায়ী ও চোরাই সিগারেটের ক্রেতা রিফাতকে সনাক্ত করে দেয়। রিফাতের বাসায় তল্লাশী চালিয়ে বেশ কিছু সিগারেট উদ্ধার করা হয়। এরপর রিফাতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের রুপসী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নুর ইসলাম, রুবেল ও মনিরকে গ্রেফতরা করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরির কাজে ব্যবহৃত মিনিট্রাকটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার চোর চক্রের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। গ্রেফতার মনির জানায় ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ডিভিআর ভেঙে নরসিংদীর বেলাবো থানার উজিলাবো গ্রামের একটি কুয়ায় ফেলা হয়েছে। পরবর্তীতে কুয়ার ভেতর থেকে ডিভিআরের ভাঙ্গা অংশ উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ডে এনে চোরাই যাওয়া সিগারেটের অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধার করা হবে। এই ঘটনায় গ্রেফতার রুবেলের বিরুদ্ধে দুটি টি হত্যা ও একটি গণধর্ষণ মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিআই/এসকে