
প্রথমে চুরি, পরে চুরিকরা ফোনগুলো লোকেশন ট্রাকিং এড়াতে ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি। ক্রেতা না পেলে সেগুলোকে ভেঙে আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রি করা চক্রের সাত সদস্যকে ৭ সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটককালে তাদের কাছ থেকে চুরি করা ৪৬ টি আইফোন, একটি ল্যাপটপ, ২১টি আইফোন ঘড়ি এবং ৯৭টি ল্যাপটপের মাদার বোর্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. মনির হোসেন (২৯), মো. রাসেল (৩৮), মো. তানভির আহম্মেদ (২৬), মো. সুরুজ হোসেন (২১), জহির হোসেন (৩২), রকি (৩০) এবং রাজন আহমেদ (২১)।
মঙ্গলবার ( ১২ ডিসেম্বর ) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্য়ালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিবি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা ৭জন মোবাইল চোর চক্রের সদস্যকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া ৪৬ টি আইফোন, একটি ল্যাপটপ, ২১টি আইফোন ঘড়ি এবং ৯৭টি ল্যাপটপের মাদার বোর্ড উদ্ধার করেছি। একটি চক্র দামি মোবাইল চুরি করবে চুরাই মোবাইলটা বিক্রির জন্য তাদের সর্দার আছে। তাদের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে।
তিনি বলেন, এই চোর চক্র সারা দিনে তারা চেষ্টা করে আইফোন চুরি করার। ভিড়ের মধ্যে থেকে তারা আইফোন চুরি করে তাদের সর্দারের কাছে তারা আবার এগুলো বিক্রি করে। সর্দার এই মোবাইলগুলো কিনে মোবাইল ব্যবসায়িদের কাছে এগুলো আবার বিক্রি করে। এই মোবাইলগুলো চুরি হওয়ার সাথে সাথে তারা ফয়েল পেপার দিয়ে সেগুলো মুড়িয়ে ফেলে। কারন আইফোন যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানকার লোকেশনটা বোঝা যায়। যাতে লোকেশনটা বোঝা না যায় সে কারনে তারা ফয়েল পেপার দিয়ে এগুলো মুড়িয়ে ফেলে। এরপর তাদের সর্দার সেই ফোনগুলো নিয়ে যদি সাথে সাথে কোন ক্রেতা পায় তাহলে সেগুলো বিক্রি করে দেয়। আর যদি ক্রেতা না পাই তাহলে তারা সাথে সাথে এগুলো ভেঙ্গে বিভিন্ন মালামাল আলাদা করে ফেলে। এভাবে তারা এগুলো বিক্রি করে। অথবা আরেকটা চক্র আছে তারা যদি ভালো দামি কোন আইফোন পাই তাহলে সেগুলো বাইরের দেশে পাচার করে দেয়।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৮ নভেম্বর বিকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শেরেবাংলা নগর থানার স্কয়ার হাসপাতালের রিসিপশন থেকে ফয়জুন নাহার ফাতেমার আইফোন, এনআইডি কার্ড, ব্যাংকের ৩টি কার্ড চুরি হয়ে যায়। ফয়জুন নাহার ফাতেমা বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে রাজধানীর পরিবাগ ও হাতিরপুল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফয়জুন নাহার ফাতেমার আইফোনটিসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার ও চোরাই আইফোন ক্রয়-বিক্রয় চক্রের ৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
চুরির করা ফোন বিক্রির প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম ধাপে বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চোরেরা আইফোনগুলো চুরি করে। দ্বিতীয় ধাপে চোরেরা আইফোনগুলো বিভিন্ন চোরাই আইফোন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে। তৃতীয় ধাপে চোরাই আইফোন ক্রেতারা আবার বড় পার্টির কছে বিক্রি করে। সবশেষ অর্থাৎ চতুর্থ ধাপে তারা আইফোনগুলো সিলভার কালারের ফয়েল পেপারে মোড়ায় ও ল্যাপটপে ফ্লাশ মেরে সকল ডাটা মুছে ফেলে। এরপর, তারা মার্কেটে বিভিন্ন পার্টির কাছে বিক্রি করে। আইএমইআই পরিবর্তন করতে না পারায় ও আইফোনের খুচরা পার্টসের ডিমান্ড অনেক বেশি হওয়ায় তারা মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিভিন্ন দোকানে মোবাইলের যন্ত্রাংশ যেমন, মাদারবোর্ড, ক্যামেরা, স্পিকার, চার্জার লজিক, ডিসপ্লে ও অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি করে।
ডিআই/এসকে