
ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:ভালোবাসা অনেকভাবে প্রকাশিত হয়—কখনো শব্দে, কখনো চোখের জল আর হাসিতে। কিন্তু কিছু সম্পর্ক আছে, যা নিঃশব্দ ভালোবাসার এক বিশাল আবেগ। বাবা এমনই একজন, যিনি হয়তো “ভালোবাসি” বলেন না, কিন্তু তার প্রতিটি কাজেই সন্তানের প্রতি ভালোবাসার স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে। নিঃস্বার্থ পরিশ্রম, নিরব ত্যাগ আর ছায়ার মতো উপস্থিতি—এসবেই তিনি হয়ে ওঠেন সন্তানের জীবনের মূল শক্তি।
বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বাবাকে ঘিরে তাদের অনুভূতি ও স্মৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
“বাবা আমার জীবনের প্রথম হিরো”
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তামান্না মুন্নি বলেন “বাবা আমার জীবনের প্রথম হিরো। আমি যখন হাঁটতেও শিখিনি, তখনই তিনি আমার পথ দেখিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে তার ছায়া পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও কোনো সমস্যায় পড়লে প্রথম যে মানুষটার কথা মনে হয়, তিনি আমার বাবা। বাবার নিঃস্বার্থ ত্যাগ, পরিশ্রম আর ভালোবাসাই আমাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। তিনি মুখে কিছু না বললেও তার প্রতিটি পদক্ষেপে যে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে, তা আমার জীবনের চালিকা শক্তি।”
“বাবা আমার ছায়ার মতো সঙ্গী”
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মাহফুজারা রহমান বলেন “আমার বাবা আবেগপ্রবণ নন। তিনি আমাদের সামনে কখনো নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন না। কিন্তু যখন দরকার হয়, তিনি ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন ছায়ার মতো। তার উপস্থিতি, তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, আমাদের জন্য যেন এক নীরব আশ্রয়। বাবারা হয়তো ‘ভালোবাসি’ বলেন না, তারা কার্ড বা ফুলেও ভালোবাসা দেখাতে পারেন না, কিন্তু তাদের কাজের মাধ্যমেই সন্তানের জীবনে ভালোবাসা সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে প্রকাশিত হয়। তার নীরব উপস্থিতিই আমার আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস।”
“বাবা আমার আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাকিবুল বাপ্পি বলেন
বাবা হচ্ছেন আমার আত্মবিশ্বাসের উৎস। যেকোনো ব্যর্থতায় আমি যখন ভেঙে পড়ি, তিনি খুব অল্প কথায় আমাকে আবার নতুন করে দাঁড়াতে শেখান। জীবনে বহুবার হেরেছি, কিন্তু বাবার মুখটা মনে করে আবার উঠে দাঁড়িয়েছি।তিনি যেন বলেন, ‘তুই পারবি’। বাবার এই নির্ভরতা আমাকে সাহস জুগিয়েছে প্রতিটি চ্যালেঞ্জে।”
“বাবা আমার প্রথম শিক্ষক”
বুয়েট শিক্ষার্থী মো. ইথারুল ইসলাম বলেন,“বাবা শুধু আমার অভিভাবক নন, তিনি আমার জীবনের প্রথম শিক্ষকও। তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে সম্মান করতে হয়, দায়িত্ব নিতে হয়, মানুষ হতে হয়। ছোটবেলায় তার শাসন হয়তো বুঝিনি, কষ্ট লাগত। কিন্তু এখন বুঝি, সেই শাসনের ভেতরেই ছিল অগাধ ভালোবাসা। বাবা আমাকে জীবনের প্রকৃত মূল্যবোধ শিখিয়েছেন। আজ বাবা দিবসে তাকে বলতে চাই, আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় নায়ক। আপনার অবদান কোনো একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়, তা প্রতিদিনই আমার জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।”
বিশ্ব বাবা দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি সেই প্রতিদিনের ভালোবাসার প্রতীক, যা হয়তো মুখে প্রকাশ হয় না, কিন্তু হৃদয়ে গভীরভাবে অনুভূত হয়। শিক্ষার্থীদের এমন কথার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, বাবা নামটি কেবল একটি সম্পর্ক নয়—এটি সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, সাহস, দিকনির্দেশনা এবং নিরব ভালোবাসার আশ্রয়স্থল।
বাবারা হয়তো নিঃশব্দে ভালোবাসেন, কিন্তু সেই ভালোবাসা প্রতিটি সন্তানের জীবনের বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাবা দিবসে তাই সন্তানদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এই প্রকাশ শুধুই আনুষ্ঠানিক নয়—এটি প্রতিদিনের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।